Advertisement
Advertisement

Breaking News

Maharashtra's Kaas Plateau

সীতার চোখের জল ফুল হয়ে ফুটে ওঠে যে প্রান্তরে

কাসের রং কখনই এক রকম থাকে না। তা বদলে বদলে যায়।

Maharashtra's Kaas Plateau is heavenly decorated with gorgeous flowers
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 31, 2016 9:31 pm
  • Updated:March 29, 2019 12:56 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বর্ষা মানে কি শুধুই মেঘের নীল আর জলের সাদার যুগলবন্দি?
মুখ্যত তাই! আকাশ যখন মেঘের ঘনঘটায় হালকা থেকে গাঢ় নীলে বদলে যায়, মেঘের বুক চিরে বিদ্যুতের ঝলক নিয়ে নেমে আসে বারিধারা, তখন সবার আগে সেটাই চোখে পড়ে। একটা স্পষ্ট ঘটনা ঘটতে দেখা যায় চোখের সামনে।

kaas1_web

Advertisement

যাত্রাপথের আনন্দগান

Advertisement

তার সঙ্গেই আরও একটা ঘটনা ঘটে চলে। জলের ছোঁওয়ায় প্রকৃতি নতুন করে সেজে ওঠে। মেঘের কাজল চোখে নিয়ে, সবুজ আর নানা রঙে সারা শরীর সাজিয়ে তোলে সে। পাতায় বাহার আসে, ফুলে রং ধরে জীবনের।
চোখে আঙুল দেওয়ার মতো করে প্রকৃতির এই বর্ষাকালীন সাজ বিশেষ ভাবে চোখে পড়ে কাস মালভূমিতে। মহারাষ্ট্রের সাতারা থেকে সড়কপথে মাত্র ৪৬ মিনিটের দূরত্বে। ১৮৫০ হেক্টর বিস্তৃত যে মালভূমিতে বাস করে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির বুনো ফুলেরা। তার মধ্যে ৩৩টি প্রজাতি আবার রীতিমতো লুপ্তপ্রায়। কয়েক বছর পরে তাদের হাসি আর দেখা না-ও যেতে পারে কাস পাথারে।

kaas8_web

হোয়াইট গ্রাউন্ড অর্কিড

কাস মালভূমির শরীর আসলে গড়ে উঠেছে লাভা পাথর আর রুক্ষ মাটির প্রলেপে। তাই সারা বছর এখানে ফুল ফোটার জো নেই! জলই যে পায় না এই মালভূমি! একমাত্র বর্ষা এসে বছরান্তে নিয়ম করে ধুইয়ে দেয় তার খর জীবন। তখনই বৃষ্টিস্নাত হয়ে কাস সেজে ওঠে ফুলের সাজে।
এই অনুর্বরতার জন্যই কাসে জন্ম নেয় বেশ কিছু মাংসাশী উদ্ভিদ। মাটির রসে পুষ্টি পায় না বলে মাটিতে ঘুরে বেড়ানো, বাতাসে উড়ে বেড়ানো কীটপতঙ্গে উদরপূর্তি হয় তাদের। তা বলে, তারা আদপেই বিকটদর্শন নয়। বাস্তব আসলে উল্টোটাই। রঙে-রূপে চোখ ঝলসে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে তারা। এও প্রকৃতির এক বিচিত্র বিস্ময়।

kaas3_web

সোনাকি, মিথিয়ার দঙ্গলে

বিস্ময়ের পালা যদিও শুরু হয়ে যায় সাতারা থেকে গাড়ি ছাড়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই। চোখে পড়ে, ঘন সবুজের বুক চিরে বয়ে চলেছে ছোট-বড় নানা জলপ্রপাত। তাদের আনন্দগান কানে নিয়ে যাত্রাপথের ইতিউতি চোখে ধরা দেয় ফুলের সমারোহ। দেখা যায় ঘন অরণ্যের চাঁদোয়া। মাথায় মসের মুকুট পরে, কুয়াশার মাঝে তারা রচনা করেছে বর্ষাকালীন অবসরের নিভৃতি।

kaas4_web

সীতার চোখের জল

এই পথ চলার মাঝে হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে রঙের প্লাবনে। শুরু হবে কাস মালভূমির সীমানা। যে রঙের বস্তুত সীমা-পরিসীমা নেই।
মজার ব্যাপার, কাসের রং কখনই এক রকম থাকে না। তা বদলে বদলে যায়। একেক পক্ষে একেক রকমের ফুল ফোটে এই প্রান্তরে। শুরুটা হয় সাদা দিয়ে। জুনের শেষ দিকে বর্ষার জল মাটি ছুঁলে সবার প্রথমে হেসে ওঠে হোয়াইট গ্রাউন্ড অর্কিড। সাদা চাদরে ঢেকে যায় কাস।

kaas2_web

রং অফুরান

তার পরে কাসের গায়ে হলুদের পালা! সোনাকি, মিথিয়া আর কোবরা লিলি হলুদ রঙে মাতিয়ে তোলে রুক্ষ মালভূমিকে। আগস্টে তেমনই সীতার চোখের জলে রঙিন হয় কাস; ঢেকে যায় ঘন বেগুনি রঙের ফুলে। তার পরেই লালের অজস্র বর্ণে লজ্জার ছোপ ধরে কাসের গালে। সেই জন্যই একবারের দেখায় কাসকে চিনে ওঠা যায় না। বার বার ঘুরে-ফিরে আসতে হয় তার কাছে।
তবে শুধুই ফুলের বাহার নয়। সাতারা থেকে কাস যাওয়ার পথে দর্শনীয় আছে আরও।

kaas7_web

সাপকাণ্ড (কোবরা লিলি)

• যুবতেশ্বর শিব মন্দির: সাতারা থেকে ৬ কিলোমিটার পথ গাড়িতে মিনিট কুড়িতে পেরিয়ে এলেই চোখে পড়বে এই শিব মন্দির। এখান থেকে যেমন পাখির চোখে দেখা যাবে পুরো সাতারাকে, তেমনই নজরে আসবে বেণা নদীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা কানহের বাঁধ।
• শিবপেটেশ্বর মন্দির: সাতারা ছাড়িয়ে ১৫ কিলোমিটার এগোলে, মোটামুটি মিনিট তিরিশের ব্যবধানে পথে পড়বে পেটরি গ্রাম। এখানে এক বিশাল গুহায় অস্থিত শিবপেটেশ্বর মন্দির। উরমোদি নদীও চোখে পড়বে গুহার সামনে থেকে। সে বড় কম পাওয়া নয়।

kaas9_web

কান্দিলপুষ্প (ল্যান্টার্ন ফ্লাওয়ার)

• ঘাটাই: সাতারা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে, মিনিট চল্লিশ পার করে পথে পড়বে ঘাটাই গ্রাম। জঙ্গল এখানে হঠাৎই ঘন হয়ে আসবে। ঘাটাইয়ে আছে এক পবিত্র উপবন। স্থানীয় মানুষ সেখানে এক মন্দিরে পুজো দিয়ে চলে আসেন। থাকেন না সেই উপবনের ধারে-কাছে, পাছে তার পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। সেই পবিত্রতা শরীরে-মনে নিয়ে অল্প এগোলেই শুরু হবে ফুলের উপত্যকা।
ফুল মাত্রই সুন্দর! তবে, কাসে গেলে ফুল নিয়ে কয়েকটা কথা মাথায় না রাখলেই নয়। অন্তত, যে ফুল কাসের প্রধান দ্রষ্টব্য, তাদের বিষয়-আশয় একটু ঝালিয়ে নিতে হবে।

kaas5_web

কাস হ্রদ

• সীতার চোখের জল (সীতেচিয়া আশাওয়ে): জনমদুখিনীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই ফুল কিন্তু আদপেই করুণার পাত্রী নয়। ঘন বেগুনি রঙা এই ফুল ডাকসাইটে সুন্দরী। এবং, স্বভাবেও বড় উগ্র। এরা ভিজে মাটিতে ঘুরে বেড়ানো কীটপতঙ্গকে কাছে টেনে আনে রঙে-রূপে মুগ্ধ করে। তার পর, তাদের গিলে খায়। সীতার চোখের জল কাস আলো করে ফুটে থাকে আগস্টে।
• কান্দিলপুষ্প (ল্যান্টার্ন ফ্লাওয়ার): এই ফুলের পাঁচটি পাপড়ি পরস্পরকে ছুঁয়ে একটা লন্ঠনের আকৃতি নেয়, তৈরি করে একটা ছোট্ট পরিসর। যখন তার খুব কাছে এসে পড়ে মাছিরা, তখন তারা দুর্ভাগাদের তার ভিতরে টেনে নেয়। এই ফুল সারা বছরই ফোটে। তবে সংখ্যায় কম। কাসের লুপ্তপ্রায়, বিপন্ন ফুলের মধ্যে অন্যতম এই কান্দিলপুষ্প।

kaas6_web

থোসেঘর জলপ্রপাত

• সাপকাণ্ড (কোবরা লিলি): হলুদরঙা এই ফুল সাপের ফণাকে যেন ব্যঙ্গ করে! তাই এহেন নাম। মজার ব্যাপার, জন্মানোর সময়ে এই ফুল লিঙ্গগত ভাবে পুরুষ থাকে। তার পর, বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গ পরিণত হয় নারীতে। জীবদ্দশায় এভাবে বার বার লিঙ্গ পরিবর্তন করে সাপকাণ্ড। জুন-জুলাই জুড়ে তার বাহার চোখে পড়ে কাসে।
আর আছে জলের ধারা। কাস হ্রদ এবং কাস থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে থোসেঘর জলপ্রপাত। তার সৌন্দর্য চোখে ভরে ঘরে ফেরার পালা।
কী ভাবে যাবেন: ট্রেন নিয়ে পৌঁছন সাতারায়। সেখান থেকে ভাড়ার গাড়িতে কাস এবং থোসেঘর।
কোথায় থাকবেন: সাতারায় থাকার জায়গার অভাব নেই। ইচ্ছে মতন বেছে নিন পকেটসই ঘর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ