Advertisement
Advertisement

Breaking News

এই ছয় কালীবাড়ি পরিক্রমায় সার্থক হোক মনস্কামনা

মায়ের পায়ে জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন!

Visit These Six Kali Temples And Make Your Wish True In This Kali Puja
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 28, 2016 8:03 pm
  • Updated:June 5, 2023 7:27 pm

স্বল্প পরিচিত। কিন্তু মাহাত্ম্যে কম নয়। শহর কলকাতার তেমনই ছয় কালীবাড়ির সন্ধান দিলেন সোমনাথ লাহা।

কৃপাময়ী কালী, বরানগর:
মন্দিরটির পরিচিতি জয়রাম মিত্র কালীবাড়ি নামে৷ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দেবীস্থানটি প্রতিষ্ঠা করেন শোভাবাজারের জয়রাম মিত্র৷ তিনি ছিলেন বরানগরের সুপ্রসিদ্ধ জমিদার৷ ভাগীরথীর পূর্বকূলেই তাঁর বিশাল ঠাকুরবাড়ি৷ সেখানেই একটি অংশে নির্মিত এই সুন্দর দক্ষিণমুখী নবরত্ন মন্দির ও বারোটি শিবমন্দির, শিবমন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছে বাংলার আটচালা রীতি অনুযায়ী৷ মন্দিরগুলির পরেই রয়েছে সারি দেওয়া তুলসীমঞ্চ৷ পাথরে বাঁধানো মন্দিরগাত্রের মিনারের কাজ দর্শনার্থীর মন কাড়বেই৷ সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো গর্ভমন্দির৷ গঙ্গায় ভেসে আসা শিলাখণ্ড দিয়ে শ্বেতপাথরের বেদির উপর কাঠের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত দেবী কৃপাময়ী কালিকার আড়াই ফুট উচ্চতার বিগ্রহ৷ দেবীর মুখমণ্ডল প্রসন্ন, হাসিতে ভরা৷ আজানুলম্বিত তরঙ্গায়িত কেশদাম পিঠ ছাড়িয়ে নিচের দিকে নেমেছে৷ প্রায় ১৬০ বছর ধরে দেবীর নিত্যভোগ আরতি চলে আসছে৷ অতীতে পশুবলি দেওয়ার প্রথা থাকলেও বর্তমানে তা আর নেই৷ প্রতিদিনই মন্দিরে ভিড় করেন আর্তজন-সহ নিসর্গপ্রেমী মানুষ৷ সিঁথির মোড় থেকে অটো ধরে কুঠিঘাট পৌঁছে সেখান থেকে সামান্য গেলেই মিলবে কৃপাময়ী কালীর মন্দির৷

Advertisement

সেবাপীঠ অভয়া কালী, রবীন্দ্র সরোবর:
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটা পথেই চারু অ্যাভিনিউয়ে এই মাতৃমন্দির৷ সেবাপীঠ মাতৃমন্দিরে কালীস্বরূপা মা অভয়ার শ্রীমূর্তির সঙ্গে রয়েছেন স্বয়ং ত্রিনাথেশ্বর৷ শ্রীমূর্তিতে ‘কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী’ রূপটির পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে৷ ১৯৮০-তে বাবুজির (স্বামী বেদানন্দ) মনের ইচ্ছায় মা ভগবতী কালীর এই মন্দির কুটিরটি স্থাপিত হয়৷ প্রতিষ্ঠা হয় দেবী কালিকার শ্রীমূর্তিটি৷ নাম হয় ‘সেবাপীঠ মাতৃমন্দির’৷ আরাধ্যা দেবী এখানে পূজিতা মা অভয়া রূপে৷ এই কুটিরাশ্রমে তিনি দেবীরূপে নন, মা রূপে পূজিতা৷ অনাড়ম্বরভাবে ভক্ত সন্তানের দ্বারা মায়ের নিত্যপূজা হয়৷ মন চাইলে এখানে এসে স্বহস্তে মাতৃসেবায় নিয়োজিত হতে পারেন৷ অতি নিয়মনীতির ঘেরাটোপে এই মন্দিরে মা পূজিতা হতে আগ্রহী নন৷ সেজন্যই প্রতি বছর কালীপুজোয় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মায়ের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দেন এখানে৷ এবারও রাত আটটায় পুষ্পাঞ্জলি৷

Advertisement

অষ্টাদশভুজা কালী, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট:
মন্দিরটির অবস্থান ১৪০ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে৷ শোনা যায় প্রায় ১০৫ বছর আগে কালীসাধক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় নেপালের এক গুহার মধ্যে তন্ত্রসাধনার সময় অষ্টাদশভুজা কালীর এক প্রস্তরময় ছোট কালীমূর্তি পান৷ কলকাতায় এসে ১৪০ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের এই বাড়িতেই দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন৷ শুরু করেন নিত্যপূজা৷ পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র কালীপ্রসাদ ১৮ মণ অষ্টধাতু দিয়ে সাধকপ্রাপ্ত মূর্তির অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করেন৷ পাঁচ ফুট উঁচু দেবী কালিকা শিবের উপর পদ্মাসনে উপবিষ্টা৷ দেবীর আঠারো হাতে নানা প্রহরণ৷ রথের দিন মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে ওই দিনটি প্রতিবছর বিশেষভাবে পালিত হয়৷ মন্দিরে কোনও পশুবলি হয় না৷ এই মন্দিরে আসতে হলে নামতে হবে মহাজাতি সদন হলের স্টপেজে আর মেট্রোয় এলে মহাত্মা গান্ধী রোড স্টেশনে৷

রঘু ডাকাতের কালী, মনোহরপুকুর:
দেবী পরিচিতা রঘু ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত কালী নামেই৷ দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট অঞ্চলে ২৯ নম্বর পূর্ণদাস রোডে এই দেবীর অবস্থান৷ এই রাস্তার বিপরীত দিকের মনোহরপুকুর রোডটি নাকি মনোহর ডাকাতের স্মরণে৷ চূড়াহীন মন্দিরটি বাংলার চাঁদনি মন্দিরের মতো সমতল ছাদবিশিষ্ট৷ বিভিন্ন ধরনের গাছগাছালিতে ভরা আড়ম্বরহীন মন্দিরটির পরিবেশ খুবই মনোরম৷ এই দেবীস্থানটির বয়স ১১২ বছর৷ গর্ভমন্দিরে দেবী কালিকা প্রতিষ্ঠিত একটি পিতলের সিংহাসনে৷ প্রস্তরময়ী দেবীমূর্তিটি ছোট হলেও আকর্ষণীয়৷ মাতৃমূর্তির গলায় রক্তজবার বহু মালিকার সঙ্গে শোভা পাচ্ছে কয়েক ছড়া সোনার হার৷ দেবীর পদতলে আসীন মহাকালরূপী মহাদেব৷ কথিত আছে মন্দিরে একসময় নরবলি দেওয়া হত৷ তবে বর্তমানে কোনও জীব বলি দেওয়া হয় না৷ প্রতিদিনই বহু দর্শনার্থী-ভক্ত মায়ের কাছে আসেন প্রণাম করার পাশাপাশি নিজেদের মনস্কামনা নিয়ে৷

রাজরাজেশ্বরী কালীবাড়ি, বাঙ্গুর অ্যাভেনিউ:
বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটোয় বাঙ্গুর অ্যাভিনিউ মোড়ে দমদম পার্কে কৃষ্ণপুর উপনগরে এই কালীবাড়ি৷ এই মন্দিরটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৬১ সালে৷ মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে শ্রীশ্রী করুণাময়ী রাজরাজেশ্বরী কালীভক্ত নামক ট্রাস্ট৷ মাতৃ বিগ্রহ কষ্টিপাথরের নির্মিত হলেও শবরূপী শিব কষ্টিপাথরের নয়৷ এক ফুট উঁচু শ্বেতপাথরের বেদির উপর চার ফুট উচ্চতার চতুর্ভুজা মা খড়্গ, মুণ্ডমালা ও বরাভয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মহাদেবের বক্ষের উপর৷ বসন পরিহিত মাতৃমূর্তির গলায় রয়েছে সোনার চন্দ্রহার৷ মাথায় সোনার মুকুট৷ মাতৃমূর্তির বাঁদিকে একটি সিংহাসনে রয়েছে বাঁশী হাতে দণ্ডায়মান রাধা-কৃষ্ণের যুগলমূর্তি৷ মাকালীর মাথার উপর শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদার বিগ্রহ৷ আর রাধাকৃষ্ণের উপর রয়েছে শ্রীজগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্রহ৷

সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, টালিগঞ্জ:
টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন থেকে আদিগঙ্গা পেরিয়ে সিরিটি শ্মশানের দিকে যেতে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথে এই মন্দিরটির অবস্থান৷ বাসস্টপের নাম করুণাময়ী কালীবাড়ি৷ বাস, অটো কিংবা ট্যাক্সি থেকে নেমেই বিপরীত দিকে চোখ ফেরালেই দেখতে পাওয়া যায় মায়ের অপরূপ ছোট মন্দিরটি৷ ছোট মন্দিরের প্রবেশদ্বার৷ মন্দিরের পিছন দিয়ে বয়ে চলেছে আদিগঙ্গার ক্ষীণ ধারা৷ মন্দির অঙ্গনবেষ্টিত বটগাছের ছায়ায়৷ মন্দিরের ছোট গর্ভগৃহে গোলাপি রঙের পাথরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত দেবী দক্ষিণাকালী৷ দেবী কালিকার মূর্তিটির উচ্চতা তিন ফুট৷ মাথায় রুপোর চূড়া, পরনে বেনারসি শাড়ি৷ হাতে-গলায় রয়েছে বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার-সহ প্রহরণ৷ দেবীর বাম হস্তে খড়্গ আর মুণ্ডমালা এবং ডান হাতে অভয় ও বরাভয় মুদ্রা৷ টানা টানা দু’টি চোখ৷ নাকে সোনার বড় নথ৷ লোলজিহ্বা থাকলেও মায়ের মুখটি লালিত্যে ভরা৷ বহু রক্তজবার মালায় ঢাকা মায়ের বক্ষদেশ৷ পদতলে মহাকালরূপী শিব আর দু’পাশে ঠাকুর রামকৃষ্ণ ও মা সারদা৷ কথিত আছে আগে মা ডাকাতদের দ্বারা পূজিত হতেন৷ এমনকী ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মায়ের কাছে নরবলি দিত৷ পরবর্তী সময়ে নরবলির অভাবে ছাগবলি হত৷ এখন আর বলি দেওয়া হয় না৷ মাকে নিত্য অন্নভোগ দেওয়া হয়৷ প্রতি অমাবস্যা ও কার্তিক মাসের কালীপুজোয় মায়ের বিশেষ পুজো করা হয়৷ সঙ্গে হোমযজ্ঞও হয়৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ