Advertisement
Advertisement

Breaking News

বাস দুর্ঘটনায় ২ পড়ুয়ার মৃত্যুতে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ঢাকা

বিক্ষোভে অচল রাজধানীর একাধিক অঞ্চল।

Clashes in Dhaka over road mishap
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:August 1, 2018 5:27 pm
  • Updated:August 1, 2018 6:21 pm

সুকুমার সরকার, ঢাকা: ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ঢাকা। রাজধানী ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে তিন বাসের রেষারেষিতে শহিদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে সন্তানের মৃত্যুর জন্য দায়ী চালকের শাস্তির পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকায় বাসচাপায় নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম, যিনি নিজেও একজন বাসচালক। ”বাবা, যে চলে গিয়েছে, তাকে তো আর পাব না। আমরা সুন্দরভাবে সরকারের কাছে একটা দাবি জানাই, একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আমাদের রাখেন”, বলেছেন তিনি। যে বাস চালিয়ে চলছে সংসার, সেই বাসের নিচে সন্তানের মৃত্যুর পর নিজে বাস চালানো ছেড়ে দিতে চাইছেন জাহাঙ্গীর।

গত রবিবার ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় শহিদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক দল শিক্ষার্থীর উপর উঠে যায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস। তার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল করিম। দীর্ঘদিন ধরে বাস চালিয়ে আসা জাহাঙ্গীর বলেন, “গাড়িটা অদক্ষ ড্রাইভার চালিয়েছে। গাড়িগুলো যখন ব্রিজ থেকে নামে তখন দুইটা গাড়ি হুড়োহুড়ি করে নামে। তারা যদি দক্ষ থাকত, তাহলে চিন্তা করত, স্কুল-কলেজের সামনে একটু আস্তে যাই।”

Advertisement

বেপরোয়া গাড়িচালনা বাংলাদেশের রাজধানীতে নিত্যকার চিত্র। কয়েক মাস আগে এক কলেজ ছাত্রের হাত হারানো ঢাকার অনিরাপদ সড়কের চিত্র তুলে ধরেছিল। গণপরিবহনে চালকের আসনে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রশিক্ষিত চালকদেরও দেখা যায় হামেশা। জাহাঙ্গীর বলেন, ”আমার বুক যেমন খালি হয়েছে, আমি চাই না আর কোনও মায়ের বুক এভাবে খালি হোক।” এই দুর্ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার গণপরিবহনে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে দুই বাসচালক ও তাদের দুই সহকারীকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মঙ্গলবার জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

এদিকে বুধবারও সকাল থেকে রাজধানীর ফার্মগেট, উত্তরা এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্বপাশেও অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে ছাত্ররা। শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেওয়ায় সারা ঢাকা শহরে বাস প্রায় উধাও। সব রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকা কার্যত অচল। ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ডিসি প্রবীর কুমার রায় জানান, শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ায় বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে।

অন্যদিকে, বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকার সড়কে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আটকা পড়লেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আর লাইসেন্স না থাকায় পুলিশের গাড়িও আটকে দিল ছাত্ররা। সড়ক আইন লঙ্ঘন করে উলটো পথে যাওয়ার সময় বুধবার দুপুরে শাহবাগের কাছে আটকে পড়েন প্রবীণ এই রাজনীতিক। অর্থ এবং ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সচিবালয় থেকে বাড়িতে ফেরার পথে পৌনে ২টোর দিকে শাহবাগ থেকে বাংলামোটরের দিকে যাচ্ছিল মন্ত্রীর গাড়ি। সঙ্গে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলে- ‘আইন সবার জন্য সমান। ঊনসত্তরের ছাত্রনেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল গাড়ি থেকে নেমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা বলার চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দোষীদের বিচার চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।

মন্ত্রীর দেহরক্ষী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বার বার অনুরোধ করতে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা ‘আইন সবার জন্য সমান’ স্লোগান দিতে দিতে গাড়ির সামনে বসে পড়ে। তখন তোফায়েল ও তার নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ গাড়ি ঘুরিয়ে শাহবাগের দিকে ফিরে যায়। গত চার দিন ধরে রাজধানীর রাজপথে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নেমেছে পুলিশের ভূমিকায়, লাইসেন্স না থাকায় তাদের হাতে পুলিশের গাড়িও আটকে গিয়েছে। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় গত রবিবার শহিদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ প্রতিদিনই বিস্তৃতি পাচ্ছে। তাদের বিক্ষোভ, মিছিল আর অবরোধের কারণে বুধবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ