সোমনাথ পাল, বনগাঁ: ধর্ম মানে না কোনও সীমান্ত, মানে না কাঁটাতারের ব্যবধান। এমনকী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ রাঙানিও আটকে রাখতে পারে না শ্রদ্ধা অবনত ভক্তদের। সে যতই হোক এপার বাংলা কিংবা ওপার বাংলার বেড়াজাল। ভক্তির কাছে কোনও বাধা নয়। ভক্তি আর বিশ্বাস যেন সব কিছুকে উপেক্ষা করে মিলিবে আর মিলাবে। আরও একবার ধর্মের টানে দুই বাংলার মেলবন্ধনের এই অপরূপ দৃশ্য দেখল বনগাঁ সীমান্ত।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এপারে পেট্রাপোল আর ওপারে বেনাপোল৷ মাঝখানে বিএসএফ আর বিজিবির কড়া চৌকিদারী, আর কাঁটাতারের শক্ত বেড়া। প্রতিদিন আর প্রতি মূহূর্তে নিয়ম আর ফরমানের যেন বন্যা বইছে দু’দেশের সীমান্তে। কিন্তু বছরের এই একটা দিন যেন সব নিয়মই ওলোট-পালট হয়ে যায়। ধর্মবিশ্বাস আর ভক্তির কাছে। কাঁটাতারের মনসা পুজোতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলা। এপার বাংলার পেট্রাপোল সীমান্তের কাঁটাতার ঘেষা মা মনসার জাগ্রত পূজা তাই অনন্য।
দুই বাংলার অসংখ্য ভক্ত শুক্রবার পূজাস্থলে মিলিত হয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছিল সৃষ্টির ইতিহাস। সালটা ছিল ১৯৮৯। গ্রীষ্মকাল, কাঠফাটা রোদ্দুর। তবুও চুপিসাড়ে বিএসএফ আর বিজিবির নজরদারি এড়িয়ে চলছে অনুপ্রবেশ। হঠাৎই দৌড়ে কয়েকজন বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীকে ধরতে ক্যাম্প থেকে জঙ্গলের দিকে ছুটলেন মেজর পাণ্ডে সাহেব। কিন্তু জঙ্গলের মাঝে থমকে দাঁড়ালেন মেজর। কথিত আছে, সেসময় তিনি দেখতে পেয়েছিলেন মা মনসার পঞ্চমুখী রুপ। গায়ে কাটা দিয়ে উঠল মেজরের। আর একটা পা এগোতে পারলেন না তিনি। সেদিনের মতো চুপ থাকলেও মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, মা মনসার মন্দির নিজে হাতে তৈরি করবেন ওই স্থানেই। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। তৈরি হল মায়ের থান। কালের স্রোতে ভক্তদের বিশ্বাস, ভক্তি আর দান-ধ্যানে মায়ের সে থান আজ রূপ নিয়েছে অপরূপ মন্দিরে।
প্রতিবছর দুই বাংলার অসংখ্য মানুষ আসেন নিয়ম করে৷ প্রায় পাঁচশো কড়াই খিচুড়ি, প্রসাদ বিতরণ, চলে সারাদিন। মন্দিরের দেখভাল করেন সৌদামিনি বারুই ওরফে পাগলি মা। তিনি বলেন “কখনও কখনও মন্দিরে এসে দেখি বিগ্রহে স্বয়ং মা জড়িয়ে থাকেন। চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা যাবে না”৷ তাই ভক্তি আর বিশ্বাসের দরজায় মাথা ঠুকে প্রতি বছর শ্রাবণ সংক্রান্তির এই দিনে মা মনসার থানে মিলে যায় দুই বাংলা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.