Advertisement
Advertisement

বলিউডে হিট বাঙালি ডাক্তারের সুর, একান্ত আড্ডায় সুরকার অর্কপ্রভ

জানালেন এমবিবিএস গোল্ড মেডালিস্ট থেকে সোজা বলিউডের পাড়ি দেওয়ার গাথা।

Arko Pravo Mukherjee tells his tale of Bollywood journey
Published by: Suparna Majumder
  • Posted:August 13, 2018 2:28 pm
  • Updated:August 13, 2018 4:14 pm

অরিজিৎ সিংয়ের পর আর এক বাঙালি ছেলে আলোড়ন তুলেছেন বলিউডে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের গোল্ড মেডালিস্ট থেকে অত্যন্ত সফল সুরকার ও গায়ক অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায়। মুম্বইয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডায় অহনা ভট্টাচার্য।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস গোল্ড মেডালিস্ট থেকে সোজা বলিউডের মিউজিক কম্পোজার। কীভাবে সম্ভব করলেন এটা?

Advertisement

আমি ২০০৭ সালে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ইন্টার্নশিপ করি, আর তার পরের বছরই মুম্বই চলে আসি। ছোটবেলা থেকেই গানের জগতে আসার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বাড়িতে সবাই পড়াশোনার দিকেই বেশি জোর দিতেন। আমার বাবা আর জি কর হাসপাতালে হেড অফ মেডিসিন। মা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে বাংলার অধ্যাপিকা ছিলেন, সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। ছোটবেলায় বাড়িতে গানবাজনা করতাম। স্কুলের ফেস্টে গাইতাম। তবে সেটা স্রেফ হবি ছিল। এটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা ছোটবেলায় ভাবতেই পারতাম না।

Advertisement

সেই ভাবনাটা কখন এল?

তখন আমি মেডিক্যাল কলেজে পড়ি, পড়াশোনার ফাঁকে সময় পেলেই গান লিখতাম, সুর দিতাম। ওই সাড়ে পাঁচ বছরে আস্তে আস্তে সাহস সঞ্চয় করি গানটাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্যে। নিজেকে বোঝাই যে, আমি ঠিক পারব। যদিও বাবা-মাকে বোঝানোটা একেবারেই সহজ ছিল না। ওঁদের দোষ দেওয়া যায় না। প্রত্যেক বাবা-মা চান যে তাঁদের সন্তানের চাকরিজীবনে একটা নিরাপত্তা থাকুক। আর ফিল্মের জগৎটা ওঁদের কাছে একেবারেই অচেনা। কিন্তু শেষমেশ আমার ওপর ওঁরা ভরসা করতে পেরেছিলেন। আর তাই আজ আমি এখানে। 

কলকাতায় কোথায় বেড়ে ওঠা আপনার?

আমাদের বাড়ি কেষ্টপুরে, ভিআইপি রোডের কাছে। সেখানেই আমি বড় হয়েছি। আমি ডন বস্কোয় পড়েছি, পাঁচ বছর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেছি আর সিএমসিতে এক বছর ইন্টার্নশিপ। তার পর সোজা মুম্বই।

ফিল্মের জগতে সাফল্য সহজে আসে না। মুম্বইয়ে গোড়ার দিকে স্ট্রাগল করতে হয়েছে?

প্রথম তিনটে বছর খুব স্ট্রাগল করেছি। কিছু ছবি শুরু হয়েও হয়নি, বলিউডে যেমন হয়। আমরা চারজন ছেলে লোখাণ্ডওয়ালায় একটা টু বিএইচকে ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকতাম। মুম্বইতে অনেক মানুষ নিজের স্বপ্নপূরণ করতে আসে। কারও অভিনেতা হওয়ার শখ, কেউ গায়ক হতে চায়, কেউ বা ডিওপি। ওই সময় আমার কিছু বন্ধুবান্ধব হয় যারা আমারই মতো স্ট্রাগল করছিল। আমি আর আমার এক বন্ধু দেব ইউনিভার্সাল-এর সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি সই করি। একটা অ্যালবামও বের করি ‘মীরা’ নামে। কিন্তু ওই সময়ে অ্যালবামের বাজার ছিল না। সবে ডিজিট্যালে মুভ করছে সিস্টেমটা। আমাদের অ্যালবামটাও চলল না।

তারপর?

তখন বুঝলাম ইন্ডিপেনডেন্ট মিউজিকের রাস্তাটা আপাতত বন্ধ। যখন কলকাতা ছেড়েছিলাম তখন বলিউডের জন্যে গান তৈরি করব, এ রকম ভাবনাচিন্তা করে আসিনি। কিন্তু এসে দেখলাম সবটাই বলিউড-কেন্দ্রিক। আজ থেকে বছর তিনেক আগে অবধিও তাই ছিল। এখন আবার ধীরে ধীরে ইন্ডি-পপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাই হোক, আমার কথায় ফিরি, তখন ইউনিভার্সাল থেকে যেটুকু টাকা পেতাম তাতে কোনও মতে বাড়িভাড়াটুকু দিতে পারতাম। মাঝে মাঝেই বাবা-মায়ের কাছে হাত পাততে হত।

আপনার প্রথম বড় ব্রেক?

২০১১ সালে ভাট সাহাবের (মহেশ ভাট) সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার প্রথম বড় ব্রেকটা ওঁর কাছ থেকেই আসে- ‘জিস্‌ম ২’। এটাই বোধহয় জীবনের মজা, তুমি যতই পরিশ্রম করো, সঠিক সময়ের আগে সাফল্য আসবে না। প্রতিভা আর কঠিন পরিশ্রমের পাশাপাশি ভাগ্যেরও একটা বড় ভূমিকা থাকে।  

কখনও মনে হয়েছে পারব না? বা বাড়ি ফিরে যাই?

অনেকবার। নিজের মনের সঙ্গে সারাক্ষণ একটা যুদ্ধ চলত। অনেকবার মনে হয়েছে তা হলে কি কলকাতাতেই ফিরে যাব? কিন্তু নিজেই নিজেকে বোঝাতাম, অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করতাম। কারণ, এটা এমন একটা পরীক্ষা যেখানে কোন ভাইভা নেই, নম্বর নেই, মার্কশিট নেই। এটা বিশৃঙ্খলা আর অনিশ্চয়তায় ভরা। কত শিল্পী তো নিজেদের জীবদ্দশায় স্বীকৃতিই পাননি, মৃত্যুর পর পেয়েছেন।

আপনি হিন্দি এবং উর্দুতে গান লেখেন। এই ভাষাগুলো কি মুম্বই এসেই শেখা

ছাত্রজীবনে ইংরেজি আর বাংলা লেখায় আমি বেশ পারদর্শী ছিলাম। ২০০৮-এ মুম্বইতে এসে গান লেখার জন্যে হিন্দি আর উর্দু নিজের চেষ্টায় শিখেছি। বলিউডে সাধারণত গীতিকার গান লেখেন আর সুরকার তাতে সুর দেন। কিন্তু আমি আমার নিজের গান নিজেই লিখতে পছন্দ করি। তা ছাড়া আমি মনে করি সস্তার লিরিসিস্ট একটা গানকে মার্ডার করে দিতে পারে। সাহির লুধিয়ানভি, আনন্দ বক্সি, গালিব, অমিতাভ ভট্টাচার্য- এঁদের লেখা পড়েই আমি হিন্দি আর উর্দু শিখেছি। 

 ব্যাকরণে সমস্যা হত না?

শুরুতে ব্যাকরণ নিয়ে একটু সমস্যা হত। বিশেষত লিঙ্গ নিয়ে। এটা এখনও একটু আধটু হয়। হিন্দিতে সব জিনিসের স্ত্রীলিঙ্গ বা পুংলিঙ্গ হয় যেটা বাংলায় হয় না। ফলে, লেখার ক্ষেত্রে একটা সমস্যা তৈরি হত। এখন সেই ভুলটা অনেক কমিয়েছি(হাসি)।  

আপনার জীবনটা একদম সিনেমার গল্পের মতো। কলকাতার এমবিবিএস গোল্ড মেডেলিস্ট থেকে সোজা বলিউড আর তার পর এ রকম সাফল্য… 

(হাসি) আসলে সবাইকেই জীবনের কোনও না কোনও ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হয়। কেউ কেরিয়ারের সঙ্গে নেয়, কেউ বাড়ির সঙ্গে, কেউ বা প্রেমিকাকে ছেড়ে আসে। ঝুঁকি না নিলে সাফল্য আসে না। 

আপনার ক্ষেত্রে এ রকম কিছু হয়েছিল? মানে কাউকে ভালবেসেছিলেন

কলকাতায় থাকতে একজনকে ভালবাসতাম। ও কিন্তু আমার গান করার ব্যাপারে খুব সাপোর্টিভ ছিল। এমনকী যখন বাবা-মা আমার পাশে ছিল না, ও আমার পাশে ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সম্পর্কটা টিকল না।

[উত্তমকুমারের খাবার যেত এই দোকান থেকে, আসতেন সুচিত্রা সেনও]

মুম্বইয়ে বলিউড তারকাদের সঙ্গে আপনার ওঠাবসা। প্রথম প্রথম কেমন লাগত?

আমার কিছুই মনে হত না। কারণ আমি কোনও দিনই স্টারস্ট্রাক ছিলাম না। তবে অক্ষয় স্যরের (অক্ষয় কুমার) সঙ্গে দেখা হলে একটু নস্ট্যালজিক লাগত। কারণ ছোটবেলা থেকে ওঁর ছবি দেখেছি। প্রথম আলাপে ওঁকে সেটা বলেও ছিলাম। শচীন তেণ্ডুলকর ছাড়া আমি আর কারও ফ্যান নই। একটা ইভেন্টে ওঁকে দেখেছিলাম কিন্তু কথা বলার সুযোগ পাইনি। সেটাই আমার ফ্যানবয় মোমেন্ট।

অক্ষয় কুমারের ছবি গোল্ড’-এ আপনি একটা গান কম্পোজ করেছেন…

হ্যাঁ, গানের নাম ‘ন্যায়নো নে বাঁধে’। গানটা বাংলায় রিলিজ করছি। জিৎদার (জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) স্ত্রী চন্দ্রাণীদি গানটা বাংলায় লিখেছেন।

 

বাংলা ছবির গান করেন না কেন?

গত চার বছর ধরে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। কিন্তু নানা কারণে হয়ে উঠছে না। আমার মা খুব চান যে আমি বাংলা ছবির গান করি। এই নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথাও হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। আশা করি, ‘ন্যায়নো নে বাঁধে’র বাংলাটা মানুষের মনে ধরবে।

আর কোন কোন ছবিতে কাজ করছেন?

অক্ষয় কুমারের ‘গোল্ড’ আর জন আব্রাহামের ‘সত্যমেব জয়তে’, যাতে আমি ‘তেরে জ্যায়সা’ গানটা করেছি। এই দুটি ছবি একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে, ১৫ই অগাস্ট। ইমরান হাশমির একটা ছবিতে কাজ করছি। রাধিকা আপ্টের একটা ছবিতে কাজ করছি। টি-সিরিজের দু’টো সিঙ্গল করছি।  

[‘আমার মতো বুড়ো নয়, রাজনীতিতে তরুণ রক্ত দরকার’]

আপনার প্রিয় গায়ক, গীতিকার, সুরকার কারা?

আমি ছোটবেলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখতাম। কিন্তু তখন সেটা বোঝার ক্ষমতা ছিল না তাই বোরিং লাগত। এর পর আস্তে আস্তে রক মিউজিকের দিকে ঝুঁকে যাই। রক ব্যান্ডে গান করা শুরু করি। এখন বড় হওয়ার পর বুঝি, আমাদের জীবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটা বড় প্রভাব। রবি ঠাকুর সবার ওপরে। বাংলায় কবীর সুমন আর অঞ্জনদার (অঞ্জন দত্ত) লেখা ভাল লাগে। অঞ্জনদার স্টাইলটা বেশ কঠিন। গায়কদের মধ্যে আমার পুরনোদের বেশি পছন্দ। যেমন মহম্মদ রফি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা শ্যামল মিত্র। নতুনদের মধ্যে অরিজিৎ আর আতিফের গলা ভাল, স্টাইল ভাল। কেকে খুব ভাল গায়, সোনুদা (সোনু নিগম) তো লেজেন্ড! নতুনরা সবাই আমার বন্ধু। সকলে আমার জন্যে গেয়েছেন। ওঁদের মধ্যে বাছাই করা কঠিন। সুরকারদের মধ্যে রহমান স্যরের আগের দিকের কাজ ভাল লাগে। প্রীতম দা আর বিশাল ভরদ্বাজের কাজ ভাল লাগে।

আপনার গানগুলোর মধ্যে যদি তিনটে প্রিয় গান বেছে নিতে বলা হয়?

এই রে! খুব মুশকিল! ‘অভি অভি’ (জিস্‌ম ২), ‘তেরে সঙ্গ ইয়ারা’ (রুস্তম) আর ‘নজম নজম’ (বরেলি কি বরফি) আমার সেরা তিন। ‘দরিয়া’ (বার বার দেখো) গানটাও খুব ভাল লাগে। তবে ওটা বেশি লোকে শোনেনি কারণ ছবিটা চলেনি।

 

তার মানে ছবি না চললে গানও মুখ থুবড়ে পড়ে?

হ্যাঁ। আমি আগে এই ভুলগুলো অনেক করেছি। এখন পাঁচ-সাতটা ছবিতে ‘না’ বলি কোনও একটায় ‘হ্যাঁ’ বলার আগে। কারণ, আমার সঙ্গে আগে এ রকম হয়েছে যে ছবিটা ভাল করে প্রোমোট করা হয়নি বলে লোকে গানটা শুনতেই পায়নি। আমি চাইলেই বছরে তিরিশটা গান করতে পারি। কিন্তু তবু আমি মাত্র পাঁচ-ছ’টা গান করি, কারণ আমি নাম্বার গেমে বিশ্বাস করি না। আমি চাই মানুষ আমার গানটা শুনুক। আমি টাকার পেছনে দৌড়াই না।  

দুর্গাপুজোয় কলকাতায় যান?

এ বছর আমার বোন আসছে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে, তাই চেষ্টা করব ছুটি নিয়ে কলকাতা যাওয়ার। সবাই মিলে একসঙ্গে হইহই করতে চাই।

[কেন বলিউডে থেকেও আলাদা কাজল? উত্তর দিলেন ঋদ্ধি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ