Advertisement
Advertisement

Breaking News

সত্তরে সুমন: নিশানের নাম বাংলা খেয়াল

সত্তরের সুমন মঞ্চ থেকে যেন এক নিষিদ্ধ ইস্তেহার ফিরি করে গেলেন।

Kabir Suman touches the chord with ‘Khyal’ in Kolkata musical show on his 70th birthday
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 17, 2018 12:44 pm
  • Updated:July 11, 2018 2:12 pm

সরোজ দরবার: অন্য গানের ভোরে দেখা হওয়ার কথা ছিল। এক সন্ধেয় দেখা হয়ে গেল অন্য গানের সঙ্গে। খেয়াল অঙ্গে এসে মিশল, ‘কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?’ বাংলা খেয়ালের নতুন যাত্রায়, শতবর্ষে পদাতিক হলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

এ এক আশ্চর্য সমাপতনই বলতে হবে। এ কবিতার নাম ছিল ‘সকলের গান’। আর বাংলা খেয়ালকে সকলের গান করে তোলার সুমন উদ্যোগে কী অনায়াসে এসে পড়লেন সেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই। ঘটনাচক্রে ঠিক এই সময়ই ত্রিপুরায় আড়াই দশকের বাম শাসনের পতন হয়েছে। আর মহারাষ্ট্রে অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবিতে লাল নিশান হাতে পথে নেমেছেন হাজার হাজার কৃষক। বসন্তের হাওয়া যখন এরকম বিপরীত ঘূর্ণিতে বিপ্লবস্পন্দিত, তখন একজন ‘রেবল’ কী করতে পারেন? সত্তরের জন্মদিনে তিনি তাই বাঙালিকে দিয়ে গেলেন স্পর্ধা। বাংলা খেয়ালের। বাংলা ভাষাকে নিয়ে অহংকারের।

Advertisement

না, আমরা জানতাম না, আচার্য সত্যকিংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে সেই প্রণম্য বাঙালির কথা। যিনি শুধু বাংলা খেয়ালের জন্য দৌড়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। জয় ছিনিয়ে নিয়ে আকাশবাণীতে একটি অনুষ্ঠানও করেছিলেন। কিন্তু নীরদবাবুর কথাই বোধহয় সত্যি, বাঙালি আত্মঘাতী। সম্ভবত আত্মবিস্মৃত বলেই। তবু গানের মোকামেই যার যাত্রাশুরু, তিনি কী করে তাঁকে ভুলে থাকবেন! ভোলেননি সুমন। আচার্য সত্যকিংকরের রচনা করা বন্দিশেই তাই তাঁর অনুষ্ঠানের নান্দীমুখ।

Advertisement
[সত্তরে সুমন, গানওয়ালার জন্মদিনে স্মৃতিমেদুর বাঙালি]

তবে শুধু সেখানেই থেমে থাকার বান্দা তিনি তো নন। আর থেমে থাকার কথাও নয়। তাহলে রবীন্দ্রনাথ, হিমাংশু দত্ত কিংবা সলিল চৌধুরিতেই থেমে থাকত বাংলার সংগীত। একদা সেই জঙ্গমতা ভেঙেছিলেন সুমন নিজেই। বাংলা গানের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন। এই সত্তরে, আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারেন এই কিশোর, বাংলা খেয়ালের নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার। ফলত উঠে এলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তৈরি হল খেয়াল। তিনি গাইলেন এবং ভেসে গেল নজরুল মঞ্চ।

এই যে এত শ্রোতা নিবিষ্ট হলেন তাঁর খেয়ালে, ঘনিষ্ঠ হলেন নবযুগ আনার বার্তায়, এও তো সেই লাল নিশানের উড়ান। তা দেখেই হয়তো স্মিত হাসি ফুটে ওঠে তাঁর মুখে। বলেন, ‘খুব সুখে আছি জানেন।’ কীসের সুখ? খেয়াল গাওয়ার? হয়তো বা। অথবা বাংলার আগামীকে বাংলা খেয়ালের রাস্তাটা বাতলে দেওয়ার। পৃথিবীকে নবজাতকের বাসযোগ্য করে তোলার অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন কোন পথে? উৎপল দত্ত যেমন বলতেন, চাহিদা মাফিক জোগান নয়, বরং জোগান দিয়ে চাহিদা তৈরির কথা। সুমন যেন সে কাজটিই করে চলেছেন বাংলা খেয়ালে। আজ হয়তো সমালোচনার অন্ত নেই। কিন্তু কে না জানে, ফুল না ফুটলেও যিনি বসন্ত চান, তিনি আসলে পদাতিকই।

[দেখছি ছুরিবিদ্ধ তরুণের লাশ ভেসে চলেছে, খেয়াল গাইব কী করে?]

বাকিটা চেনা সুরের মন্তাজ। তার ভিতরই হুটহাট ঢুকে পড়া অজানা কত গান। কত সুর। আসলে সুমন মানেই তো অনন্ত সুরের পরিক্রমা। সুতরাং তাঁর অনুষ্ঠানে তিনি একা থাকবেন কেন? হ্যাঁ, সিন্থেসাইজারে তাঁরই আঙুল খেলা করল বটে। কিন্তু পাশে এসে ওই দাঁড়ালেন বুঝি হিমাংশু দত্ত, দিলীপকুমার রায়। শচীন দেববর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও দূরে থাকলেন না। ঝিলিক দেওয়া রোদ্দুরের মতো হেসে উঠলেন সলিল। সকলেই ভাবছে গাইছে সুমন, আসলে বেজে উঠল আবহমান বাংলা সংগীতের ইতিহাস।

সুমন প্রজন্মের মুখে ভাষা দিয়েছেন। কবিকে শব্দ দিয়েছেন। শিল্পীর তুলিতে রঙ দিয়েছেন। সুমন তাই বিগত কয়েক দশকে বাঙালির সর্বজনীন আবেগ, অ্যাটিটিউড। তবে সত্তরের সুমন মঞ্চ থেকে যেন এক নিষিদ্ধ ইস্তেহার ফিরি করে গেলেন। বাংলা ভাষা যখন কোণঠাসা, নানা কারণে বাঙালির কোমর যখন নুয়ে পড়ছে, তখন তিনি হাতে তুলে দিলেন বাঙালির ইতিহাসের অভিজ্ঞান । ঋষি বঙ্কিমের মতোই বোধহয় বললেন, ইতিহাস না আঁকড়ে ধরলে আমাদের গতি নেই। সংগীতেই অন্তর্লীন থাকল সে কথা। সুতরাং স্পর্ধা করার এই সাহসটুকুই আমাদের পাওনা। এক মঞ্চ, এক জীবনে উপ্ত হল অনন্ত সম্ভাবনা। বাতাসে তার স্পর্শটুকু জেগে থাকে। পরম আদরে তা গায়ে মাখতে মাখতে পুবের দিকে মুখ ফিরিয়ে শহর দেখে, এ কোনও সন্ধে নয়, অন্য গানের ভোরেই ফিকে হচ্ছে আত্মগ্লানির রাত।

[ভাল ক্রিকেট খেলতাম, কিন্তু বাবা একটা সাদা ফুলপ্যান্ট দিলেন না]

 

ছবি- সুব্রতকুমার মণ্ডল

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ