Advertisement
Advertisement

Breaking News

চোখের দেখাটাই সবসময় সত্য নয়, ‘দৃষ্টিকোণ’-এর ভ্রম হতেই পারে!

কেমন হল প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির এ ছবি? হলে যাওয়ার আগে জেনে রাখুন।

Drishtikone Movie review: There’s more than it looks
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:April 27, 2018 5:38 pm
  • Updated:July 13, 2018 4:32 pm

নির্মল ধর: ‘আমরা সাদা চোখে যা দেখি, সবসময় সেটা সত্যি নয়’- এই আপ্তবাক্যটি বলেছে ‘দৃষ্টিকোণ’ ছবির একটি প্রধান চরিত্র। যদিও কথাটি বহুল প্রচলিত। বিশেষ করে রহস্য আর সত্য উদঘাটনি ধারার ছবিতে। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নিজের লেখা চিত্রনাট্যে পলাশ সেন (কৌশিক সেন) নামে এক নার্সিংহোমের মালিকের গাড়ি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর আড়ালে এক রহস্য লুকিয়ে রেখে কিছুটা থ্রিলারের আদল দিতে চেয়েছেন। স্বামীর মৃত্যুকে সন্দেহ করে স্ত্রী শ্রীমতি (ঋতুপর্ণা) উপস্থিত হন অ্যাডভোকেট জিয়ন মিত্রের (প্রসেনজিৎ) কাছে। তাঁর দুই সহকারী স্ত্রী রুমকি (চূর্ণী) এবং অভীক (সোহম মজুমদার) মামলার ব্রিফ নেন। কিন্তু জিয়নকে সবটা জানানোর আগেই শ্রীমতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়ে যায়। মজার ব্যাপার, মামলা কোর্টে ওঠার আগেই শ্রীমতি ও জিয়ন হয়তো বা একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। শুধু জিয়ন নয় রুমকি ও তাদের দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে শ্রীমতির। এমনকী, অতি অল্প পরিচয়ে তারা দু-তিনদিনের জন্য পুরী বেড়াতে চলে যান। এখানেই একাকী শ্রীমতি প্রায় আত্মসমর্পণ করে বসেন জিয়নের কাছে। একান্তে হোটেলের ঘরে। জিয়ন কিন্তু অতি সংযত ও সাবধান। তাঁর প্রতি শ্রীমতির আকর্ষণের আরও একটি বড় কারণ জিয়নের নষ্ট কর্নিয়া। পলাশের দৃষ্টি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন জিয়ন। এখন সে এক চোখেই দৃষ্টিবান।

[কাস্টিং কাউচ বিতর্কে সরোজ খানকেই সমর্থন শত্রুঘ্ন সিনহার]

Advertisement

জিয়ন-শ্রীমতির ঘনিষ্ঠতা স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রী রুমকির মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস জাগাতে শুরু করে। প্রায় অসহায় হয়ে একটা সময় শ্রীমতির কাছে রুমকি অনুরোধ করেন, জীয়নের জীবন থেকে তাকে সরে যেতে। শ্রীমতি প্রমিস করে না। কেবল বলে, চেষ্টা করব। এ পর্যন্ত গল্প ও ঘটনা বেশ মসৃণ। সুন্দর গতিতেই এগিয়েছে। কিন্তু এরপর যখন অ্যাডভোকেট জিয়ন মামলার ব্রিফ তৈরি ছেড়ে পলাশের মৃত্যুর পেছনে রহস্যের তদন্তে নামেন, গল্পের গতি অন্যদিকে মোড় নেয়। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, গাড়ি দুর্ঘটনা নয় পলাশের মৃত্যুকাণ্ড ‘ঘটানো’ হয়েছে। তবে দোষী বা খুনি হিসেবে কাউকেই শনাক্ত করা হয়নি চিত্রনাট্যে। দাদা প্রীতম (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়) তো ভাইকে যথেষ্ট ভালই বাসত। তাহলে? দৃষ্টি ফাউন্ডেশনের আড়ালে অন্য কোনও অশুভ চক্রের সঙ্গে কি জড়িয়ে পড়েছিলেন মৃত পলাশ সেন? আর জিয়নের এক চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার পিছনেও কোনও ‘রহস্য’ লুকিয়ে নেই তো! না, সেজন্য দর্শককে অন্তত একবার ছবিটা দেখতেই হবে। পলাশের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের খেলাটি কিন্তু ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কটিকে অনেকটাই তরল করে দেয়। প্রীতমের সঙ্গে নার্স উমার (দোলন রায়) সম্পর্কটিও প্রক্ষিপ্ত। ত্রিকোণ প্রেম নিয়েই অন্যরকম খেলা আয়োজন করলে চরিত্র তিনটির অভিঘাতগুলো আরও স্পষ্ট হতে পারত। কৌশিক যেটা এবং যেভাবে করেছেন, সেই ঘটনা ও বিশ্লেষণের স্তরগুলো সাধারণ দর্শকের কাছে কিছুটা ধাঁধার মতো লাগতে পারে। বিশেষ করে একেবারে অন্তিম পর্বে শ্রীমতি ও জিয়নের সংলাপ বিনিময়।

Advertisement

[বিন্দাস মেজাজে ‘বীরে দি ওয়েডিং’-এ শামিল সোনম-করিনা]

ছবির সমাপ্তিতে শ্রীমতির দেওয়া সাদা শার্টটি পুড়িয়ে না দিলেও চলত। শার্টটি স্ত্রীর হাত থেকে তুলে নিয়ে জিয়নের ‘এক কাপ চা করে দাও’ বলার মধ্যেই স্বামী-স্ত্রীর রিকনসিলিয়েশনের ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়। এখানে রূপঙ্করের গাওয়া গানটি ব্যবহার না করলেও চলত। অথচ অন্য দু’টি গান – অনুপমের ‘আমার দুঃখগুলো কাছিমের মতো’ এবং পালোমা মজুমদারের গাওয়া ‘আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি’র ব্যবহার অনন্য সাধারণ। রুমকির পার্সপেক্টিভে দ্বিতীয় গানটি দর্শকের বুকে ধাক্কা দেয়। আফসোস এটাই, এমন একজন ন্যারেটিভ ও নান্দনিক ভাষা জানা কৌশিক মানুষের অঙ্গ পাচারের মতো ঘটনা চিত্রনাট্যে জুড়লেন!

চরিত্রগুলির বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তাদের মানসিকতা বিশ্লেষণে কৌশিক অবশ্য ফিল্মের ভাষাতেই বেশি যত্নবান। ফলে ‘দৃষ্টিকোণ’ দেখার জন্য দর্শকের দৃষ্টিকোণটাও যেন ক্ষণে ক্ষণে বদলাতে থাকে। জিয়নের দৃষ্টিকোণের সঙ্গে মেলেনা শ্রীমতির, বা রুমকির সঙ্গে জিয়নের। প্রীতম বা উমার দৃষ্টিকোণটা আবার অন্যরকম। আর তখনই বিশ্বাস করতে হয়, ‘সাদা চোখে দেখা জিনিস সবসময় সত্যি নয়’। এখানেও হল তাই। কারিগরি বিভাগের কাজ নিয়ে অভিযোগ কিংবা মৃদু অনুযোগেরও কোনও জায়গা নেই। রাজা নারায়ণ দেবের আবহ যদিও কখনও সখনও একটু লাউড। অনুপমের সুরে তিনটি গান ছবির নাটকীয় মুড মেনেই এসেছে। আর অভিনয়! ‘প্রাক্তন’ সাফল্যের জন্যই ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটির এ ছবিতে পুনরাবির্ভাব। তাঁরা দু’জনেই ক্যামেরার সামনে চুম্বকের মতো। ওঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন এক কথায় ফ্যাবুলাস। প্রায় আচমকাই হোটেলের ঘরে ঋতুপর্ণা চুমু খেয়ে ফেলেন প্রসেনজিৎকে। তখন প্রসেনজিতের অস্বস্তি স্পষ্ট হয় তাঁর ‘ঠান্ডা’ প্রতিক্রিয়ায়। আবার গভীর আন্তরিকতায় নিজেদের অনুভূতি প্রকাশে দু’জনেই যাকে বলে টক্করবাজ। কেউ কাউকে যেন এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েন না। চুর্ণী শান্ত, সংযত, ভদ্র, শিক্ষিত গৃহবধূ রুমকি হিসেবে তাঁর নিজস্ব স্টাইলেই উপস্থিত। প্রীতমের চরিত্রে পরিচালক-অভিনেতা তাঁর সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছেন। কৌশিক সেন বা দোলন রায় করণীয় কোনও দৃশ্যই পাননি চিত্রনাট্যে। বরং অভীকের চরিত্রে নতুন মুখ সোহম মজুমদার মন্দ নন। এই ছবি দর্শকের ‘দৃষ্টিকোণ’ থেকে জনপ্রিয়তায় ‘প্রাক্তন’কে ছাড়িয়ে যাবে, বা ছুঁয়ে থাকবে, নাকি পিছিয়ে যাবে, সেটার জন্যই এখন অপেক্ষা। প্রাসঙ্গিক না হলেও জানিয়ে রাখছি, ‘দৃষ্টিকোণ’ অর্থাৎ পার্সপেক্টিভ নিয়ে শেষ কথা তো বলেই গিয়েছেন খোদ আকিরা কুরোশাওয়া তাঁর ক্লাসিক ছবি ‘রশোমন’-এ।

[গরমে গলে পড়ছেন উত্তম-সুচিত্রা! ব্যাপারটা আসলে কী?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ