Advertisement
Advertisement

Breaking News

প্রতিবাদের আগুনেও রাজপুত শৌর্যের গাথাই তুলে ধরল ‘পদ্মাবত’

কেমন হল পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির স্বপ্নের কাহিনি? জেনে নিন প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার আগে।

‘Padmaavat’ a tale of Rajput valour
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 25, 2018 10:16 am
  • Updated:July 20, 2022 6:19 pm

সুলয়া সিংহ ও সুপর্ণা মজুমদার: এক যে ছিল রাজা। এক যে ছিল রানি। আর ছিল এক দুষ্টু বাদশা। কী ছিল তাদের কাহিনি? শুকনো বালির সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা ইতিহাস? যা নিয়ে আজ নতুন করে উত্তাল গোটা দেশ। জ্বলছে প্রেক্ষাগৃহ, ভাঙছে শপিং মল, পুড়ছে কুশপুতুল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ছবির রিল চালানোর সাহস পাচ্ছেন না সিনেমা হলের মালিকরা। কিন্তু আদতে ছবির মধ্যে কী রয়েছে? রয়েছে রাজপুত রাজাদের গর্বের কাহিনি। এক নারীর প্রতিবাদের কাহিনি। এক বাদশার নাছোড় জেদের হারের কাহিনি। আর এক পরিচালকের স্বপ্নের কাহিনি।

ম্যাগনাম ওপাস। এই কথাই প্রযোজ্য পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির প্রত্যেক ছবির ক্ষেত্রে। পর্দায় ছবি আঁকতে ভালবাসেন পরিচালক। যাতে থাকে রঙের প্রলেপ। আবেগের সে রং এতটাই গাঢ় যে, চোখ মেলে দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এর জন্য সবচেয়ে বেশি তারিফ প্রাপ্য বোধহয় সিনেম্যাটোগ্রাফার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের। বাঙালির হাতে যেভাবে ‘পদ্মাবত’ সেজে উঠেছে, তা সাধারণ চোখ জোড়াতে ধাঁধা লাগিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কর্ণি সেনার তাণ্ডবে মরুশহরে বেশি শুটিং করতে পারেননি পরিচালক। কিন্তু তার কোনও আক্ষেপ নেই। চিতোর থেকে দিল্লির ‘সলতনত’ এতটাই নিখুঁতভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে তা ইতিহাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

Advertisement

[কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মুক্তি পেল ‘পদ্মাবত’, চার রাজ্যে দেখাতে নারাজ মাল্টিপ্লেক্স]

Advertisement

রানি নাগমতির আবদারে মহারাওয়াল রতন সিং গিয়েছিলেন সিংহলের (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) মোতি পেতে। কিন্তু তার বদলে রাজকুমারি পদ্মাবতীকে নিজেই মন দিয়ে বসেন। সিংহলের রাজকুমারি মেওয়ারের বধূ হয়ে আসেন। (তাহলে আদতে কি তিনি রাজপুত?) আসতে না আসতেই রাজপুরোহিতের নজর পড়ে তাঁর উপর। অপরাধের শাস্তি হিসেবে তাঁকে বিতাড়িত করেন রাজামশাই। কোনও তোতাপাখি নয় প্রতিশোধ নিতে সেই পুরোহিতই রানির সৌন্দর্যের গাথা ব্যাখ্যা করেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজিকে। কাহিনি এখন প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু যে প্রশ্ন নিয়ে আজ গোটা দেশ উত্তাল আদৌ কি রানি পদ্মাবতী ও খিলজির মধ্যে কোনও কাল্পনিক দৃশ্য রয়েছে। নাহ, তার কণা মাত্র নেই। বরং মরুশহরে যা ঘটে গিয়েছে তাতে রানি ও রাজার প্রেমের দৃশ্যও অতি সাবধানে দেখিয়েছেন পরিচালক। রাজপুত ‘আন-বান-শান’-এর পুরো খেয়াল রেখেছেন তিনি। এমনকী, পদ্মাবতীর পেট পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছেন। ছবি অন্যান্য কয়েকটি জায়গাতেও আপসের চিহ্ন স্পষ্ট। একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই তা বোঝা যাবে।

তবুও এ ছবির সময়টা বড়ই বেশি মনে হয়। কোথাও গিয়ে যেন খেই হারিয়ে যায়। কয়েকটি জায়গায় যেন জোর করে গান ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আলাউদ্দিন খিলজিকে ‘বাজিরাও’য়ের মতো নাচতে দেখাটা বড্ড বিরক্তিকর। মহারাওয়াল হয়ে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন শাহিদ কাপুর। বেশিরভাগ অভিনয়টাই নিজের চোখ দিয়ে করার চেষ্টা করেছেন তিনি। দীপিকার সৌন্দর্য তুলনাহীন। সত্যিই, রানি পদ্মাবতীর চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি ছাড়া বর্তমানে অন্য কোনও নায়িকা নেই। মাধুরী দীক্ষিত বলেছিলেন, দীপিকার মতো ঐতিহাসিক চরিত্র আর কেউ বলিউডে ফুটিয়ে তুলতে পারেন না।

[আত্মঘাতী কর্ণি সেনা, ‘পদ্মাবত’ আটকাতে নিজেদের সমর্থকদেরই গাড়িতে আগুন]

তবে ছবির এক এবং অদ্বিতীয় নায়ক আলাউদ্দিন খিলজি ওরফে রণবীর সিং। প্রত্যেকবার ক্যামেরার দিকে তাকিয়েছেন, আর হল ফেটে পড়েছে হাততালিতে। প্রত্যেকটি সংলাপের আকুতি মন ছুঁয়ে গিয়েছে মানুষের। অত্যাচারী সুলতানের একাধিক সংলাপে সিটি পড়েছে হলে। খারাপকেও ভাল লাগাতে শেখালেন নায়ক।

আরও একজনের কথা বলতেই হবে। আলাউদ্দিন খিলজির ছায়াসঙ্গী মালিক গফুর। শোনা যায়, তাঁর সঙ্গে নাকি শারীরিক সম্পর্কও ছিল আলাউদ্দিনের। ছবিতেও সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। আর স্বার্থপর প্রেমিকের চরিত্রে জিম সর্ভ অনবদ্য। তাঁর থেকে চোখ ফেরানো দায়। মেহেরুন্নিসার চরিত্রে অদিতি রাও হায়দারির বিশেষ কিছু করার ছিল না। রানি নাগমতির চরিত্রে অনুপ্রিয়া গোয়েঙ্কাও চোখে পড়ার মতো নয়। ‘জহর’-এর দৃশ্যের আবেগ সিনেমা শেষ হওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ সিটেই বসিয়ে রাখবে দর্শকদের।

মানুষের প্রত্যাশার শেষ নেই।  আর সঞ্জয়ের ছবির ক্ষেত্রে তো সে প্রত্যাশা পাহাড়ে পরিণত হয়েছিল। কর্ণি সেনার তাণ্ডব যতো বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দর্শকদের কৌতূহল। আদতে কী রয়েছে এ কাহিনিতে? প্রশ্নের উত্তর তো মিলল। কিন্তু আশ কি মিটল? নাহ, সেভাবে মিটল না। কারণ গতানুগতিকতা। যা ছেড়ে পরিচালকের এবার একটু হলেও বের হওয়া প্রয়োজন। তবে এ সিনেমা একবার হলেও প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখাই বাঞ্ছনীয়। বড় স্ক্রিনে চোখ যতটা আরাম পাবে, ছোট স্ক্রিনে সে মজা নাও পেতে পারে। সঞ্জয় লীলা বনশালির ক্যানভাস বলে কথা, লার্জার দ্যান লাইফ তো হবেই। আর সে লাইফের সাক্ষী এই লাইফের হয়ে যান। কোনও সেনার আপত্তির পরোয়া করার প্রয়োজন নেই। কারণ তাঁদের প্রতিবাদের কোনও কারণই নেই। এ ‘পদ্মাবত’ শুধুই গর্বের। তাতে আপত্তির তো কিছু নেই।

[আমার রাজ্যে পদ্মাবত মুক্তি পেলে খুশি হব, জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ