Advertisement
Advertisement

Breaking News

কৃষ্ণ, শিবের মিলনভূমি উজ্জয়িনী

এই অঞ্চলে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়৷

Holiday destinastion, Ujjain
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:November 17, 2016 8:08 pm
  • Updated:November 17, 2016 8:27 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহাকবি কালিদাস, সম্রাট অশোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণর স্মৃতিধন্য অবন্তিকা উজ্জয়িনী৷ চম্বলের শাখা শিপ্রা নদীর তীরে মালব মালভূমিতে উপত্যকায় উজ্জয়িনী নগরী৷ কিংবদন্তি, নর্মদাতটে দানবরাজ ত্রিপুরাকে হারিয়ে অবন্তীর রাজা শিব নামের বদল ঘটান অবন্তিপুরা হয়ে উজ্জেন (জয়ের গৌরব) বা উজ্জয়িনী৷ দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম হিন্দুতীর্থ উজ্জয়িনী৷ অন্যতম সতীপীঠও উজ্জয়িনঃসতীর কনুই পড়ে উজ্জয়িনীতে৷ তবুও বারবার ধ্বংস হয়েছে পুরাকালের উজ্জয়িনী৷ সম্রাট অশোকের পিতা বিন্দুসারের রাজ্যপাটও ছিল সেকালের অবন্তিকায়৷ এমনকী চন্দ্রগুপ্ত পাটলিপুত্র থেকে এসে রাজধানী গড়েন অবন্তিকাতে৷ জয়ন্ত-বাহিত অমৃতকুম্ভ থেকে অমৃতও পড়ে উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীতটে (আর পড়ে হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিকে)৷

মর্ত্যধামের চারের এক কুম্ভযোগও ঘটে উজ্জয়িনীর পুণ্যতোয়া শিপ্রা নদীর ঘাটে৷ আজ লুপ্ত হলেও অতীতে চার শতাধিক বৌদ্ধবিহার ছিল উজ্জয়িনীতে৷ নবম রত্নের অন্যতম মহাকবি কালিদাস এই উজ্জয়িনীরাজ বিক্রমাদিত্যর সভাকবি ছিলেন৷ নগরীরও বর্ণনা মেলে তাঁর ‘মেঘদূত’-এ৷ ইলতুতমিসের হানায় ধবংসলীলার শিকার হয় উজ্জয়িনী৷ লুপ্তপ্রায় প্রাচীরের অংশ আজও অবশিষ্ট৷ আর ইতিহাসকে চমৎকৃত করে ঔরঙ্গজের অর্থ জোগান হিন্দু মন্দির গড়তে৷ মহারাজা জয় সিং (জয়পুর) মলোয়ার গভর্নর হয়ে নানা মন্দিরের সঙ্গে যন্তর-মন্তর গড়েন উজ্জয়িনীতে৷ সিন্ধিয়া-রাজের দখলে যায় উজ্জয়িনী৷ আর দৌলত রাও সিন্ধিয়া ১৮১০-এ রাজধানীর স্থানান্তর ঘটান উজ্জয়িনী থেকে গোয়ালিয়রে৷

Advertisement

শহরের দক্ষিণে শিপ্রা নদীর পাড়ে উজ্জয়িনীর মূল আকর্ষণ মহাকালেশ্বর মন্দির৷ শিখর উঠেছে আকাশে অতীতের মূল মন্দির ইলতুতমিসের হাতে ধ্বংস হলে ১৮ শতকের নতুন করে ৫ তলা মন্দির গড়েন সিন্ধিয়ারাজ৷ তবে, চৌবিশ খাম্বা দরওয়াজাটি ১১ শতকের৷ নিচে মূল মন্দিরে স্বয়ম্ভু দেবতা মহকালেশ্বর শিব আর উপরে ওঙ্কারেশ্বর শিব৷ মন্দিরের আর এক অভিনবত্ব তন্ত্রমতে একমাত্র দক্ষিণামূর্তি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম শক্তির উৎস এই মহাকালেশ্বর৷ আর আছেন পার্বতী, গণেশ, কার্তিকঃ উত্তর-পশ্চিম-পূর্বে৷ নন্দীও আছেন দক্ষিণে৷ এমনকী শ্রীরাম সব তীর্থের জল এনে পিতৃপিণ্ড দানে করেন এই মহাকালেশ্বরে, সেই জলে হয়েছে কোটিগঙ্গা কুণ্ড৷ অদূরে হরসি‌দ্ধি মার্গে পাহাড় ঢালে ট্যাঙ্কের উপর বড়া গণেশ মন্দির৷ নানা রঙে রঞ্জিত বিশালাকার গণেশ৷ আর আছেন পঞ্চমুখী হনুমান মন্দিরের মাঝে৷ স্বল্প যেতে ১৮ শতকে মারাঠাদের গড়া তাল-বেতালসি তান্ত্রিক রাজা বিক্রমাদিত্যর আরাধ্যা দেবী অন্নপূর্ণা বা হরসি‌দ্ধি মাতার মন্দির৷ নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে শিপ্রা নদী৷ কাশীর গঙ্গার মতো উজ্জয়িনীর শিপ্রায় নানা দেবাচার পালিত হচ্ছে প্রশস্ত ঘাট জুড়ে৷ বিক্রমাদিত্যর বেতালসি বটবৃক্ষ সিবট৷ প্রতি ১২ বছর অন্তর চৈত্রের পূর্ণিমায় শুরু হয়ে বৈশাখী পূর্ণিমা পর্যন্ত স্নানের সঙ্গে মেলা বসে কুম্ভের শিপ্রা নদীর রামঘাটে৷ লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী আসেন দেশ-দেশান্তর থেকে কুম্ভে৷

Advertisement

kumbh-mela

ভারতের ৫ টি যন্তর-মন্তরের মধ্যে একটি হয়েছে উজ্জয়িনীতে৷ রেল স্টেশন থেকে ১ কিমি দূরে মহারাজা জয় সিং চয় শিপ্রা নদীর পাড়ে মানমন্দির অর্থাৎ যন্তর-মন্তর গড়েন৷ আকারে জয়পুর ও দিল্লির পর হলেও সময়, সূর্য ও চন্দ্রের গ্রহণ ও গতিবিধি আজও নির্ভুল নির্ণয় করে এর পাঁচ যন্ত্রে৷ নতুন করে টেলিস্কোপ ও প্ল্যানেটোরিয়াম বসেছে৷ শহরের ৭ কিমি উত্তরে শিপ্রা নদীর বাম তীরে ভর্তুহরি গুহা৷ মহারাজ বিক্রমাদিত্য একদা বৈমাত্রেয় ভ্রাতা ভর্তুহরিকে রাজ্যপাট সঁপে দেশভ্রমণে যান৷ কালিদাসের বরদাত্রী বিশালাকার কালীও দেখে নেওয়া যায় চলার পথে গড়কালিকা মন্দিরে৷ কেবল মুখমণ্ডল দৃশ্যমান দেবীর, বাকি অংশ আবরণে আচ্ছাদিত৷ এই দেবীরই বরে অজ্ঞতা দূরীভূত হয় কালিদাসের৷

jpg

শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে কালিদহ প্যালেস৷ নালা কেটে শিপ্রা থেকে জল এনে দ্বীপের মতো করা হয়েছে৷ গ্রীষ্মের থেকে প্রাসাদকে ঠান্ডা রাখতে ব্রহ্মকুণ্ড, সূর্যকুণ্ড ছাড়াও নানা কুণ্ড হয়েছে৷ আর, সূর্যদেবের মূর্তিটি বসায় সিন্ধিয়া রাজমাতা৷ অত্যুত্সাহীরা ওরিয়েণ্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিক্রম কীর্তি মন্দিরে প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম, আর্ট গ্যালারি ও ইনস্টিটিউটে ১৮০০ পুঁথির লাইব্রেরিটিও দেখে নিতে পারেন৷ তেমনই চলতে ফিরতে দেখে নেওয়া যায় রাজ্য সরকারের গড়া কালিদাস একাডেমি৷

হাওড়া থেকে উজ্জয়িনী হয়ে ইন্দোর যাচ্ছে ২২৯১২ শিপ্রা এক্সপ্রেস, ১৭.৪৫ হাওড়া ছেড়ে পরদিন ২৩.৩৫ উজ্জয়িনী পৌঁছায়৷ এছাড়া ভোপাল থেকে ইন্দোর রেলপথে পড়ে উজ্জয়িনী৷ শহরের কেন্দ্রস্থলে রেলস্টেশন পুরনো বাসস্ট্যান্ডও রেলস্টেশনের সন্নিকটে৷ আর নতুন বাসস্ট্যান্ড রেল স্টেশন থেকে ৫ কিমি দূরে৷ বাসে দেড় ঘণ্টা লাগে ইন্দোর থেকে দূরত্ব ৫৫ কিমি, সাড়ে চার ঘণ্টা লাগে ভোপাল থেকে ১৮৮ কিমি দূরত্ব৷ এছাড়াও বাস যাচ্ছে মাণ্ডু ১৪৬, গোয়ালিয়র ৪৫৫, ওঙ্কারেশ্বর ১২৯, পাঁচমারি ৩৮৩ কিমি থেকে৷ শহরের মধ্যে চলছে মিনিবাস, টাঙা, অটো, রিকশা ও ট্যাক্সি৷ উজ্জয়িনীর এটিডি কোড ০৭৩৪৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ