Advertisement
Advertisement

পথের ক্লান্তি ভুলে পুণ্যভূমি কেদার

কথিত আছে, শিবের বয়স যত, কেদারখণ্ড ততটাই প্রাচীন৷ কুরুক্ষেত্রের যুরে পর ভীষণরকম অনুতাপে ভুগতে থাকেন পঞ্চপাণ্ডব৷ এই ধর্মযু‌গে আত্মীয়-পরিজনের নিধন করেছিলেন তাঁরা৷ সেই পাপক্ষালনের উদ্দেশ্যে পঞ্চপাণ্ডব মহর্ষি বেদব্যাসের পরামর্শে হিমালয়ে গেলেন মহাদেব দর্শনে, কেদারখণ্ডে৷

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 21, 2016 4:10 pm
  • Updated:June 11, 2018 4:16 pm

শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী: কথিত আছে, শিবের বয়স যত, কেদারখণ্ড ততটাই প্রাচীন৷ কুরুক্ষেত্রের যুরে পর ভীষণরকম অনুতাপে ভুগতে থাকেন পঞ্চপাণ্ডব৷ এই ধর্মযু‌গে আত্মীয়-পরিজনের নিধন করেছিলেন তাঁরা৷ সেই পাপক্ষালনের উদ্দেশ্যে পঞ্চপাণ্ডব মহর্ষি বেদব্যাসের পরামর্শে হিমালয়ে গেলেন মহাদেব দর্শনে, কেদারখণ্ডে৷ কিন্তু দেবাদিদেব পাণ্ডবদের দর্শন দিতে চান না, তাই তিনি পালিয়ে যান৷ পাণ্ডবরাও শিবের পিছু নেন৷ শেষে পথ না পেয়ে শিব মহিষের রূপধারণ করেন৷ সেই মহিষরূপী শিবকে জাপটে ধরেন ভীম৷ যখন তিনি জাপটে ধরেন মহিষের মুখ ছিল পৃথিবীর দিকে এবং পশ্চাদভাগ ছিল কেদারের দিকে৷ মহিষরূপী শিবের অঙ্গ টুকরো হয়ে পাঁচটি স্থানে ছিটকে পড়ে৷ কেদারে পশ্চাদ্ভাগ, মদমহেশ্বরে নাভি, তুঙ্গনাথে বাহু, রুদ্রনাথে মুখ, কল্পনাথ বা কল্পেশ্বরে জটা৷ হিমালয়ের এই পাঁচ পুণ্যভূমি ‘পঞ্চকেদার’ নামে পরিচিত৷ কথিত আছে, কেদারে এসে পঞ্চকেদার দর্শন না করলে নাকি কেদার-দর্শনের পুণ্য সম্পূর্ণ হয় না৷ একদা ভগবান নরনারায়ণ মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ে পুজো করেন শিবের৷ ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন শিব এবং কেদারে বাস করতে শুরু করেন৷ সেই থেকে কেদারে বাস দেবাদিদেবের৷

কবে যাবেন—

Advertisement

কেদারনাথ বেড়ানোর সবচেয়ে ভাল সময় হল গ্রীষ্মকাল৷ সাইট সিয়িং-এর জন্য আদর্শ সময়৷ বর্ষাকালে সাধারণত কেউ যায় না কেদারে এবং শীতকালে প্রায় ছ’মাসের কাছাকাছি কেদারনাথ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়৷ স্থানীয় লোকজনও থাকেন না ওইসময়৷ শিব তখন থাকেন গুপ্তকাশী বা উখিমঠে৷ কেদারনাথের মতো বরফ খুব কমই দেখা যায়৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগে শোনপ্রয়াগ থেকে যাত্রা শুরু করে গৌরীকুণ্ড, জঙ্গল চটি, চিরবাসা ভৈরব ভীমবলি, রামওয়াড়া, গরুর চটি হয়ে কেদারনাথ পৌঁছতেন যাত্রীরা৷ ২০১৩-র বিপর্যয়ে ধুয়েমুছে গিয়েছে রামওয়াড়া থেকে বাকি পথটা৷ এখন ভীমবলি থেকে লিঞ্চোলি, বদিয়ারপুছ হয়ে কেদারনাথ মন্দিরে পৌঁছতে পারেন দর্শনার্থীরা৷ আবার লিঞ্চোলি থেকে বদিয়ারপুছ পুরো রাস্তাই বরফের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ হেলিপ্যাডও রয়েছে এখানে৷ দু’ধারে দশ-বারো ফুট দেওয়াল মাঝে বরফের ওপর চলার পথ৷ শুধু বরফ আর বরফ, সঙ্গে অপরূপ মোহময়ী রহস্যঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য৷ তীর্থস্হানের স্নিগ্ধ বাতাবরণে এক ঐশ্বরিক পরিবেশ, নিমগ্ন হিমালয়ের গাম্ভীর্য–সবমিলিয়ে কেদারনাথ এক বিস্ময়কর দেবভূমি৷

Advertisement

কীভাবে যাবেন—

হাওড়া থেকে ট্রেনে হরিদ্বার চলে আসুন৷ দুন এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস, উপাসনা এক্সপ্রেস-এ যেতে পারেন হরিদ্বার৷ হরিদ্বার থেকে গাড়ি নিয়ে সীতাপুর, সেখান থেকে রাত্রিবাস করে শোনপ্রয়াগ পৌঁছন৷ শোনপ্রয়াগে চেকপোস্ট আছে৷ এখানে মেডিকেল চেক-আপ হয়৷ এরপর চার কিলোমিটার দূরে গৌরীকুণ্ডর যাত্রা শুরু৷ এই পথে সরকারি শেয়ার জিপের ব্যবস্থা আছে৷ হেঁটেও গৌরীকুণ্ড পৌঁছানো যায়৷ গৌরীকুণ্ড থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে ভীমবলি৷ এখানে মন্দাকিনীর ওপর একটা ব্রিজ তৈরি হয়েছে৷ ব্রিজ পেরিয়ে প্রায় চার কিলোমিটার গেলে লিঞ্চোলি৷ লিঞ্চোলি থেকে কেদার পাঁচ কিলোমিটার৷ হরিদ্বার থেকে কেদার যাওয়ার বাসও পাবেন৷ অপূর্ব এই বাসযাত্রা৷ বিমানে হরিদ্বারের কাছে জলিগ্রাণ্ট এয়ারপোর্টে নেমে আধঘণ্টা সফরে ঋষিকেশ পৌঁছতে পারেন, তারপর যোশিমঠ৷ উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন স্থান থেকে হেলিকপ্টারেও কেদার পৌঁছানো যায়৷

কোথায় থাকবেন—

নিউ হিমাচল হাউজ, শিবালিক ভ্যালি রির্সট, গুপ্তকাশী চারধাম ক্যাম্প, কেদারনাথ ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউজ৷ -গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে৷

কী দেখবেন—

শীতকালে প্রচণ্ড তুষারপাতের কারণে কেদারনাথের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়৷ তাই মূল মন্দিরও মোটামুটি ছ’মাস বন্ধ থাকে৷ লোকালয় স্তব্ধ, ফাঁকা হয়ে যায়, পুরোহিতরা নেমে আসতে বাধ্য হন, কিন্তু দেবতার পুজো তো বন্ধ করা যায় না, তাই ভগবান কেদারনাথও নেমে আসেন ওইসময়৷ তখন তার অস্থায়ী ঠিকানা হয় উখিমঠ৷ এখানে কিছুদিন থেকে আবার শীত শেষে ছ’মাস পর তিনি ফিরে যান কেদারখণ্ডে৷ পালকিতে চড়ে শিবের এই অবরোহণ এবং আরোহণের নাম ‘ডোলিযাত্রা’৷ শিবের নামা এবং ওপরে ওঠাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয় এখানে৷ তবে ডোলিযাত্রা দেখার ভাগ্য সবার থাকে না৷ ২০১৬-র মে মাসে খুলে গিয়েছে কেদারনাথ মন্দিরের দ্বার৷ উখিমঠ থেকে শিব ফিরে গিয়েছেন স্বস্থানে৷ তবে ২০১৩ সালের ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কেদারনাথের ডোলিযাত্রার পথ পাল্টে গিয়েছে৷ ধ্বংসলীলা যতই হোক, কেদারনাথের মন্দিরটি অক্ষতই ছিল৷ বর্তমান কেদারনাথের এই মন্দিরটির নির্মাণকর্তা আদি শংকরাচার্য৷ আদিতে যে মন্দিরটি ছিল সেটি পাণ্ডবরা নির্মাণ করেছিলেন৷ পুরাণের নানা দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে সাজানো মন্দির৷ মন্দিরের দরজায় নন্দীর বড় একটি মূর্তি রয়েছে৷ কথিত আছে, নন্দী নাকি শিবের রক্ষণাবেক্ষণ করেন৷ মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ পুজোর জন্য বুকিং নেওয়া হয়৷ এখন অনেক স্থানই আর আগের মতো নেই৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর অনেক কিছু চেনা যায় না৷ শোনপ্রয়াগে একটা চেকপোস্ট রয়েছে, যেখানে যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড পরীক্ষা করা হয়৷ কার্ড ছাড়া পুণ্যার্থী বা ভ্রমণার্থীদের কেদার যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না৷ এটা উত্তরাখণ্ড সরকারের নতুন নিয়ম৷ বিনায়ক চতুর্থী এবং দিওয়ালি খুব জাঁকজমক উৎসব হয় এখানে৷ শ্রাবণ মাসে রাখিপূর্ণিমার ঠিক আগে অন্নকূট মেলা হয়৷

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ