বাবুল হক, মালদহ: ইনিও দশভুজা। তবে মহামায়া নন, মহাকালী। এই দেবীর দশটি মাথার মতো দশটি হাত এবং দশটি পা। প্রতিমার সঙ্গে শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দশ হাতেই অস্ত্র। দেবীর পায়ের তলায় অসুরের কাটা মুণ্ড। ভূত চতুর্দশীর দুপুরে এমনই দশমাথা মহাকালীর সাধনায় মাতলেন মালদহবাসী। রীতি মেনেই মহাধুমধাম করে শহরে মহাকালীর শোভাযাত্রা হয়। তারপর মালদহ শহরের গঙ্গাবাগে শুরু হয় মাতৃ আরাধনা।
[দীপাবলি মাতাতে তৈরি কালীপুজোর ‘শহর’ বারাসত, থিমে থাকছে কী কী চমক?]
ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতির এই পুজো এবার ৮৮ বছরে পড়ল। এখনও এই পুজোর ঐতিহ্য অটুট। তার প্রমাণ অবশ্যই জাঁকজমকপুর্ণ মহাকালীর এই শোভাযাত্রা। প্রতিমা আনার সময়ও চমক দেয় পুজোর আয়োজক ব্যায়াম সমিতি। হরেক রকম বাদ্যযন্ত্র, নাচের দল, ধুনুচি নাচ থেকে ভাঙড়া, কান্দির রাইবেশ ও মুর্শিদাবাদের ডগর বাজনায় মুখরিত হয় গোটা এলাকা। মৃৎশিল্পী অষ্টম চৌধুরীর ফুলবাড়ির কারখানা থেকে শহর পরিক্রমার মাধ্যমে দশভুজা মহাকালী আসেন গঙ্গাবাগের মন্দিরে। কালীপুজোর একদিন আগে ভূত চতুর্দশীতে পূজিতা হন মালদহের ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতির দশমাথার এই মহাকালী। দুপুরে পুজো হয়। বিকেলে হয় পাঁঠাবলি। সন্ধ্যায় প্রসাদ বিতরণ।
[কাশ্মীরে শান্তি ফেরাবেন শ্যামা, জঙ্গির বিচারের দায়িত্বেও দেবী]
অনেকের কাছেই এই মাতৃ আরাধনা বিপ্লবীদের পুজো হিসাবে পরিচিত। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জেলার বিপ্লবীরা এই মহাকালীর পুজো শুরু করেছিলেন। গঙ্গাবাগের এই পুজোর উদ্যোক্তা ইংলিশবাজার ব্যায়াম সমিতি। ১৯৩০ সালে এই সমিতি গঠন করা হয়েছিল। সমিতির সভাপতি নটরাজ মুখোপাধ্যায় জানান, দেশে তখন ইংরেজদের রাজত্ব চলছিল। বিদেশি শাসকের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে শহরের পুড়াটুলির কিছু যুবক ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেদের চাঙ্গা রাখার জন্য স্থানীয় যুবকরা একটি ব্যায়ামাগার নির্মাণ করেন। শুরু হয় অনুশীলন। এর সঙ্গেই চলতে থাকা শক্তির আরাধনা। পুজোর সূচনার সময় তাঁদের আরাধ্যা ছিলেন দশমাথার মহাকালী। পরে পুড়াটুলি থেকে পুজোর স্থান পরিবর্তন হয়ে চলে আসে শহরের গঙ্গাবাগে। কালীমূর্তিতেও এখানে বিশেষত্ব রয়েছে। দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুণ্ড। প্রতি হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। চণ্ডী গ্রন্থে এই মূর্তির উল্লেখ আছে। বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়েও প্রাচীন যুগে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি।
[থানায় কালীপুজো, পুলিশের মাতৃ আরাধনার কারণটা কী জানেন?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.