সরোজ দরবার: কারও এই প্রথমবার। কারও আবার বছর পাঁচেকের অভিজ্ঞতা। পরনে শাড়ি। মাথায় ঘোমটাখানা তোলা। কপালে লম্বা সিঁদুরের ফোঁটা। কিন্তু মোটে একটা দিনের জন্য আর শখের গোঁফটা কেউ কেউ বিসর্জন দেননি। কেউ আবার মায়া ছাড়তে পারেননি ফ্রেঞ্চ কাটের। সেই অবস্থাতেই হাতে ধরা বরণের ডালা। কারও হাতে গঙ্গাজল। নিয়ম মেনে এয়োস্ত্রীদের মতোই প্রতিমা প্রদক্ষিণ। চলছে বরণের যাবতীয় কাজকর্ম। তাজ্জব হচ্ছেন! দশমীতে ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজোয় কিন্তু ঠিক এ দৃশ্যই চোখে পড়বে। পুরুষরাই সেখানে নারী সেজে করেন প্রতিমা বরণ।
পুজোর বয়স গড়িয়েছে ২২৫ বছরে। এখনও রীতি বদলায়নি। বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে। কৃষ্ণনগরের মহারাজ ছিলেন পরম দুর্গাভক্ত। একবার তৎকালীন বাংলার নবাব আলিবর্দী খানকে কর দিতে না পারায় বন্দি হন তিনি। সেটা ১৭৫৪ সাল। সময়টা দুর্গাপুজোর কাছাকাছি। সব ঝামেলা মিটিয়ে মহারাজ যখন ফিরছেন, সেদিনটা ছিল দশমী। নৌকায় বসেই বুঝতে পেরেছিলেন, সেবছর আর তাঁর দুর্গা আরাধনা করা হল না। বিষণ্ণ, ক্লান্ত কৃষ্ণচন্দ্র একসময় ঘুমিয়ে পড়েন। আর তখনই পান দেবীর স্বপ্নাদেশ। দেবী তাঁকে বলেন, কার্তিকের শুক্লানবমীতে জগদ্ধাত্রী রূপে যেন তাঁর পুজো করা হয়। স্বপ্নাদেশ মেনে শুরু হয় পুজো। বাংলায় এভাবেই শুরু জগদ্ধাত্রী বন্দনা। ভগীরথ হয়ে থাকলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ানের হাত ধরেই কৃষ্ণনগর থেকে চন্দনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু। যার মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীন এই ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলার পুজো।
কিন্তু কেন এখানে এই প্রথা? কেন মহিলারা থাকতেও পুরুষরাই নারী সেজে বরণ করেন? পুজোর সঙ্গে জড়িত অন্যতম কর্মকর্তা কল্যাণ মিত্র জানাচ্ছেন, “সম্ভবত ইংরেজ আমলে মহিলারা প্রকাশ্যে আসতে স্বস্তি বোধ করতেন না। মাকে বরণ করতেও তাই বেরতে পারতেন না। তাই পুরুষরাই সে ভার নিয়েছিলেন। নারী সেজে পুরুষদের মাকে বরণ করার সূত্রপাত সেখান থেকেই।” আজ অবশ্য মহিলাদের প্রকাশ্যে আসতে কোনও সমস্যা নেই। তবু সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.