Advertisement
Advertisement

মর্যাদাযুদ্ধে আজ লর্ডসে ইংরেজদের বিরুদ্ধে নামবেন কোহলিরা

সুইংয়ের সামনে বিজয়দের ব্যর্থতার রোগ লর্ডসে সারবে কি? দেখুন ভিডিও।

India to face crucial second test in Lords against England
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:August 9, 2018 12:37 pm
  • Updated:August 9, 2018 1:14 pm

গৌতম ভট্টাচার্য: বিরাট কোহলিদের নিয়ে আসা বাসটা যে গেটের মধ্যে পার্ক করা, তাতে এক ফোঁটা বৈচিত্র নেই। টিম বাস ডব্লিউ জি গ্রেসের ভেতরেই পার্ক হওয়ার কথা। বরং ক্রিকেট পর্যটকদের কৌতূহল জাগতে পারে গ্রেস গেটের গা ঘেঁষা বাড়িটা কেমন আছে? ক্রিকেট ইতিহাসে অসম্ভব কুলীন আর সমাদৃত জায়গাটা। ওই বাড়ি যে বাসস্থান জুগিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যপূর্ণ সরাইখানার- লর্ডস ট্যাভার্ন! সত্যি-মিথ্যে মিলে কত রকম গল্প আছে লর্ডস ট্যাভার্ন নিয়ে। যেটা প্রামাণ্য সত্য তা হল লর্ডস মাঠে সারাদিন খাটাখাটনির পর এক পাত্তর নিয়ে দু’দল এখানেই বসত। শুঁড়িখানাটা ড্রেসিংরুমের স্বাভাবিক এক্সটেনশন ছিল। লারউড এখানেই নাকি অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদের পানীয়র গ্লাসটা ঠেলে দিয়ে বলেছিলেন, ডনকে কাল সকালে তুলব। তুলেওছিলেন। আর এক ফাস্ট বোলার নিয়েও গল্প! ফ্রেডি ট্রুম্যানের প্রচণ্ড পেস ১৯৫২-তে খেলতে না পেরে ভারতীয় দলের কেউ কেউ নাকি ফন্দিফিকির করেছিল, ট্রুম্যানকে এখানে মদ খাইয়ে ওর মনটা নরম করো। বন্ধুত্ব বাড়াও। তা ট্রুম্যান প্রচুর বিয়ার খেয়েছিলেন। পরের দিন আরও জোরে বল করেছিলেন। ভারতীয়দের এই ক্রিজের বাইরে ব্যাট করার মতো বুদ্ধিদীপ্ত টেমপ্লেট ছিল সেটা। আর সেই বিকেলেই সমাধি! সাবেকি ইংরেজ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত কত যে গল্প লর্ডস ট্যাভার্নের লেবার রুমে ভূমিষ্ঠ, ইয়ত্তা নেই।

মঙ্গলবার রাতে সেই ট্যাভার্নে ঢুকে দেখা গেল, অঙ্গসজ্জার অনেক রূপবদল হয়ে এখন একটা ছোটখাটো রেস্তোঁরা। আরও বদল- যারা প্লেটে ফিস অ্যান্ড চিপস আর সামনে পানীয়র গ্লাস নিয়ে বসা, তাদের চোখ টিভির দিকে। সেখানে খেলা চলছে ডারহ্যাম বনাম ল্যাঙ্কাশায়ার। রঙিন পোশাকে টি-টোয়েন্টি। কেমন যেন ছ্যাঁত করে লাগল। সময় বদলায় ঠিক। তা বলে এতটা, এত দ্রুত? বছর কুড়ি আগেও সেরা আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটারদের যে চৌকাঠ একবার ঘুরে যাওয়ার জন্য অবশ্য ছিল, সেখানেও আজ টি-টোয়েন্টি মজলিস? ইন্ডিয়ান টিম যেখানে প্র্যাকটিস করছে, সেটা আরও উত্তর-পশ্চিম। ব্যাট-বলের আওয়াজ ট্যাভার্ন পর্যন্ত এসে পৌঁছবে না। কিন্তু উলটোদিকের বাড়িগুলো দেখলে প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিকদের ঠক করে লাগতে বাধ্য। লর্ডসের উল্টো দিকেই তো সেই বিখ্যাত অ্যাপার্টমেন্ট- লর্ডস ভিউ। যেখানে ইংল্যান্ডে প্রোগ্রাম করতে এলে উঠতেন লতা মঙ্গেশকর। অ্যাপার্টমেন্টটা যে তাঁর বেসরকারি স্বামীর। জীবিত থাকলে যিনি অবশ্যই বিরাটের এজবাস্টন ব্যাটিং মিস করতেন না। আর ভারতীয় মিডিয়া নার্সারি এন্ডে যেখানে দাঁড়িয়ে প্রাক্ টেস্ট ম্যাচ নেট দেখছে, সেখানে আর্বিভূত হয়ে যেতেন ছয় ফুট তিন ইঞ্চি চেহারাটা নিয়ে। জেন্টেলমেন, আমাদের কুলদীপকে খেলানো উচিত। কে বসবে, আই ডোন্ট কেয়ার। তাঁর নাম রাজ সিং। লর্ডসে টিম খেলছে আর রাজ নেই, খাপ খাওয়ানো যায় না কিছুতেই।

Advertisement

[অনুষ্কা কি ভারতীয় দলের ক্রিকেটার? নেটিজেনদের রোষের মুখে কোহলি পত্নী]

Advertisement

নার্সারি এন্ড থেকে গ্রেস গেট যাওয়ার সরু রাস্তাটা ক্রিকেটের তথাকথিত হল অব ফেম। মার্শালের বোলিং অ্যাকশন। গাভাসকর স্কাল ক্যাপে হুক মারছেন। আর একটু সামনে মন খারাপ করিয়ে দেওয়া স্টিল- স্যর রিচার্ড হ্যাডলি। পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়া হ্যাডলি কেমন আছেন. প্রচুর উদ্বেগ এদেশের ক্রিকেটমহলেও। লর্ডস গেটের মুখে ক্যানসার বললে এ মুহূর্তে আর একজনের কথা মনে পড়ে যায়। ক্রিকেটার না হয়েও তিনি ঘোর ক্রিকেটপ্রেমী আর আপাতত শুয়ে আছেন লর্ডসের ঠিক উলটোদিকে হাসপাতালে। ওয়েলিংটন হসপিট্যালের উলটো ফুটে দানিয়ুবস হোটেল। তিরাশির বিশ্বজয়ীদের লাকি টিম হোটেল হিসেবে যা খ্যাত। তার সামনের ফুটপাথেই তো হসপিট্যাল। ক্যানসারের এ দেশে সেরা চিকিৎসা শোনা যায় এখানেই হয়। তিনি ইরফান খানও তো এখানেই শুয়ে আছেন অদৃষ্টের কাছে নিজের অভিনয় জীবনকে সঁপে দিয়ে। টিম ইন্ডিয়ার জাগতিক পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখকর পরিস্থিতি হল ৩১ রানে হারলেও তার টিউমার এখনও ম্যালিগন্যান্ট নয়, বেনাইন। যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঠিকঠাক প্রতিষেধক পড়লে সেরে যাবে। প্রশ্ন একটাই। সুইং বোলিং খেলতে পারার অক্ষমতাতে টিমের কয়েক জন যে অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছে তাতে কি রোগ সারবে? দেশ থেকে আসার আগে রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, আমরা ইংল্যান্ড সফরকে নিচ্ছি খুব স্বাভাবিক ভাবে। একটা হোম সিরিজ হিসেবে। শুনতে ভাল এবং এক নম্বর টিমের মনোভাব তো তাই হওয়া উচিত।

[শচীনের পর প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে এক নম্বর কোহলি]

কিন্তু আদতে কোথায়? বরং যারা র‌্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বর এবং লর্ডসে বেন স্টোকসকে পাবে না, তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তারাই বুঝি এক। লর্ডস ট্যাভার্ন যেমন বদলেছে, তেমন রূপান্তর ঘটেছে আধুনিকতম ইংরেজ ক্রিকেট মানসিকতায়। ভারতের মতো অভিজ্ঞ দলের বিরুদ্ধে দু’টো কুড়ি বছরের আনকোরা ছেলেকে নামিয়ে দেওয়া তো চরম দুঃসাহস। তা-ও দল ঘোষণা হয়ে যাচ্ছে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে। সরব নির্ঘোষ যে, আমরা ফার্স্ট বয়। বেল পড়া অবধি খাতা জমা দেওয়ার জন্য ওয়েট করি না। ইংল্যান্ডের হয়ে এখন তো আর বোথাম-গুচ-ফ্লিনটফরা খেলেন না। এই টিম নিয়ে এত ঔদ্ধত্য ভাবাই যায় না। তুলনায় ভারত শম্বুক গতিতে ভাবছে, দেখছে, নড়ছে। মনঃস্তাত্বিক যুদ্ধে তারা পিছিয়ে যাচ্ছে।

ইংলিশ রূপান্তরের পিছনে তাদের মুখ্য নির্বাচক এড স্মিথ। এড নির্বাচক প্রধান হয়ে আসার পর দল নির্বাচন এবং ক্রিকেট চালানোয় এমন সব সংস্কার আমদানি করেছেন যে কোচ ট্রেভর বেলিস বা ক্যাপ্টেন জো রুট অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন। বাটলারকে তিনি ফিরিয়েছেন। আদিল রশিদকে চূড়ান্ত সমালোচনা আর চাপের মুখেও সমর্থন করে গিয়েছেন। এমনকী মইন আলিকে বসিয়ে রশিদকে খেলিয়েছেন। দু’টো ক্যাচ ফেলার শাস্তি হিসেবে দাভিদ ম্যালানকে বাদ দিয়ে সটান অলি পোপকে নিয়ে এলেন। এর আগে কুরানকে ব্যাক করেছেন। যা ধরছেন এমন খেটে যাচ্ছে যে এরপর না তাঁকে ব্রিটিশ প্রেস ক্রিকেটের গ্যারেথ সাউথগেট বলে ডাকতে শুরু করে। ওয়েস্টকোটটা শুধু গলাতে হবে। মাইক ব্রিয়ারলি উল্লেখ করেছেন বারবার এডের কথা। মাত্র তিন টেস্টের অনুজ্জ্বল কেরিয়ার সম্পন্ন এডের তো দারুণ শ্লাঘার কথা যে ব্রিয়ারলির মধ্যেও রেখাপাত করেছেন। নাসের হুসেন অবশ্য প্রশংসা করেও নিজের কলামে লিখেছেন, এড স্মিথ তুমি অসম্ভব নির্দয় এবং সাহসী। কিন্তু পরীক্ষা যে কোনও সময় বিগড়োতে পারে। তাঁর মন্তব্য শুনে ময়দানি সুপারস্টার কোচের উক্তি মনে পড়ে গেল। চললে সুন্দরী চম্পা। না চললে পাঁচু।

দু’পক্ষের যা তুলনামূলক শক্তি সংস্থান এড স্মিথের পাঁচু স্টেশনেই থাকার কথা ছিল। বলতে বলতে মনে পড়ল স্থানীয় বেকার স্ট্রিট স্টেশনের খুব কাছেই লন্ডনের আর একটা হাইএন্ড জায়গা- বন্ড স্ট্রিট। এই রাস্তার উপর একটা হোটেলেই এক সময় জীবনদীপ নির্বাপিত হয় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের। সাল ১৮৪৬ এবং রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরদা মাত্র ৫২। লর্ডস থেকে মাইল আটেকের মধ্যে কেনসাল গ্রিন বলে একটা জায়গায় সমাধি রয়েছে সেই দ্বারকানাথের। উনিশ শতকের বাঙালি নবজাগরণের সঙ্গে যিনি প্রত্যক্ষ জড়িয়ে ছিলেন এবং দু’হাতে দানধ্যান করেছেন। ব্রিস্টলে রামমোহনের মূর্তি এবং সমাধির সমস্ত খরচ তখনকার দিনে নিজে দেন। লন্ডনে দ্বারকানাথের স্মৃতিকে সম্মান দিতে তাঁর সমাধিস্থলেই টেস্টের তৃতীয় দিন একটা মূর্তি বসাচ্ছে বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশন।

অসামান্য উদ্যোগ সন্দেহ নেই। কিন্তু শুনে প্রথমেই আশঙ্কা হল টেস্টের তৃতীয় দিনের মূর্তি উন্মোচনের আগেই দ্বারকানাথ স্টাইলে টেস্ট ম্যাচ দানধ্যান করে বসে থাকবে না তো ভারত!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ