Advertisement
Advertisement

Breaking News

Pica

আজব রোগ ‘পাইকা’র ছোবলে অখাদ্যে লোভ, মেনুতে কাচ থেকে টিকটিকি-পেরেকও

সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

Pica, psychological disorder an appetite for non edible substances
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:April 24, 2018 3:42 pm
  • Updated:March 29, 2019 6:49 pm

গৌতম ব্রহ্ম: মাইকেল লোটিটোকে মনে আছে? আস্ত একটা এরোপ্লেন খেয়ে ফেলেছিলেন এই ফরাসি ভদ্রলোক। লোটিটোর মতো এ রাজ্যেও অনেক ‘মিস্টার ইট অল’ আছে। পেরেক, চামচ, কাচ, সেফটিপিন, টুথ ব্রাশ, কার্পেট, মাথার চুল, মাটি, টয়লেট পেপার। অখাদ্যের হাজার পদ রয়েছে এদের খাদ্য তালিকায়। দেওয়াল থেকে জ্যান্ত টিকটিকি ধরে খাওয়ার নজিরও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে এই শহরে।

[সরকারি চাকুরের ছদ্মবেশে নিষিদ্ধ মাদক পাচার, যাদবপুরে ধৃত ১]

বিশ্বাস না হলে আবার পড়ুন!

Advertisement

খাওয়ার অযোগ্য বস্তুর প্রতি এই আসক্তি এক ধরনের রোগ। যার পোশাকি নাম ‘পাইকা’। শিশুদের মধ্যে এই অখাদ্য খাওয়ার প্রবণতা খুব বিরল নয়। কেউ মাটি, কেউ সাবান খায়। কেউ আবার দেওয়ালের চুন খুঁটে খায়। সম্প্রতি নেহা সাউ নামে এক ১২ বছরের মেয়ের পাকস্থলি থেকে আড়াই কেজি চুলের টিউমার বের করেন সার্জনরা। মনোরোগে আক্রান্ত বয়স্কদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের একুশ বছরের যুবক কেরি ট্রেবলিকক হট সস দিয়ে ৪ হাজারের বেশি বাসন মাজনি খেয়ে ফেলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির একজনের পেটে ১৪০০ রকমের অখাদ্য উদ্ধার করেছিলেন চিকিৎসকরা। সম্প্রতি মালদহে এক যুবকের পেট কেটে দু’টি চামচ, একটি  লোহার রডের টুকরো ও একটি জিভছোলা বের করেন সার্জনরা। এনআরএসে মেডিক্যাল কলেজের সার্জনরাও এক প্রৌঢ়ের পাকস্থলি থেকে ৩০০ টি পেরেক উদ্ধার করেছেন। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। পাইকা রোগ অবশ্য নতুন নয়। তেরো শতকের গ্রিক ও রোমান সাহিত্যেও এই অদ্ভূতুড়ে রোগের উল্লেখ রয়েছে। পিজি হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’ (আইওপি)-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, পাইকা রোগে আক্রান্তরা এমন বিজাতীয় কিছু খান যার ভিতর কোনও পুষ্টি নেই। ইট, কাদামাটি, পাথর, রং, কাচ, পয়সা, সাবান, কাপড়, কাগজ। ৪-২৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে পাইকা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব,  শিশুদের মধ্যে বিজাতীয় কিছু খাওয়ার প্রবণতা থাকলেই সতর্ক হতে হবেন অভিভাবকদের। শিশুকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

Advertisement

পাইকা কী?

খাওয়ার অযোগ্য বস্তুর (মাটি, সাবান, চুল, ধাতু, কাচ, কার্পেট, ইত্যাদি) প্রতি আসক্তি এক ধরনের রোগ। যার পোশাকি নাম ‘পাইকা’।

রোগের উৎস

রোগের উৎস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে, এই রোগের সঙ্গে মানসিক রোগ, উদ্বেগ, অপুষ্টি, রক্তাল্পতার সম্পর্ক রয়েছে।

কাদের হয়?

শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও ডিমনেশিয়ায়া কাবু বয়স্কদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। আদিবাসীদের মধ্যেও প্রকোপ বেশি।

চিকিৎসা ?

এই রোগ কাউন্সেলিং ও ওযুধ দিয়ে সম্পূর্ণ সেরে যায় বলে দাবি সাইক্রিয়াটিস্টের।

রোগের উৎস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কারও পর্যবেক্ষণ, বাসস্থানের আশপাশে রাসায়নিক কারখানা, বর্জ্য নিষ্কাশন হলে পাইকা রোগ বাসা বাধতে পারে মনে। কেউ আবার বলছেন,  উদ্বেগ থেকেই এই রোগের জন্ম। পড়াশোনার চাপ, বাবা-মায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে শিশুর উপর মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। তার থেকেই পাইকা’র জন্ম হতে পারে। দীর্ঘ চিকিৎসক জীবনে প্রদীপবাবু পাইকা রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী পেয়েছেন। এর মধ্যে রাজপুর ও মালদহের এক রোগীর কথা উল্লেখযোগ্য। রাজপুরের ছেলেটির বয়স ৩৫ বছর। স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত যুবকটি কাচ খেত। মালদহের ছেলেটির বয়স ১৮ বছর। তার আবার পেরেক, পিন, জেমস ক্লিপ খাওয়ার নেশা। যদিও এই রোগ নিয়ে তেমন কোনও গবেষণা হয়নি। ফলে অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে বেড়েছে বলেই মনে হয়। এমনটাই জানালেন আরজি কর হাসপাতালে সাইকিয়াট্রিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজর্ষি নিয়োগী। তাঁর পর্যবেক্ষণ, এই রোগের সঙ্গে মানসিক রোগ, উদ্বেগ, অপুষ্টি, রক্তাপ্লতার সম্পর্ক রয়েছে। গর্ভবতী মহিলা এবং ডিমেনশিয়ায় কাবু বয়স্কদের মধ্যেও এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। পাইকা’য় আক্রান্তরা অনেক সময় যৌনাঙ্গ দিয়েও বিজাতীয় জিনিস প্রবেশ করায়। বিজ্ঞানীদের মতে  পাইকা’য় আক্রান্তদের পরিপাকতন্ত্র এমনভাবে তৈরি হয়ে যায় যে লোহাও হজম হয়ে যায়।

[লিলুয়ায় বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড, পুড়ে ছাই রঙের কারখানা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ