অর্ণব আইচ: “ওরা আমার দুধের বাচ্চাটাকে খুন করতে চায়। ওরা চায় আমিই খুন করি। নাহলে ওরাই খুন করে দেবে।”
স্কুলের সামনে দু’মাসের সন্তান কোলে উপজাতি রমণী। তাঁর দু’চোখ দিয়ে বইছে জলের ধারা। বাচ্চাটিকে খুন করতে চায় তারই দাদু-ঠাকুরমা। নাহলে যে মেয়েকে গ্রামে ফেরানো যাবে না। কিন্তু কেই বা নিজের শিশুকে তুলে দিতে চায় খুনিদের হাতে। তাই পুরুলিয়ার ‘পুলিশ বাবা’র হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দিয়ে দৌড়ে পালালেন ওই মহিলা। কাছে সন্তান নেই। তাই তিনি ঢুকতে পারবেন নিজের গ্রামে। বাঁচতে পারবেন নিজের মতো করে।
পুরুলিয়ার পুঞ্চায় উপজাতি শবরদের শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করেছেন কলকাতা পুলিশের কর্মী অরূপ মুখোপাধ্যায়। লালবাজারের অনুমতি নিয়েই কলকাতা পুলিশের প্রকল্প ‘নবদিশা’র আদলে শবর শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করেছেন অরূপবাবু। শবররা তাঁকে ডাকেন ‘পুলিশ বাবা’ বলে। এখন একশোরও বেশি শবর উপজাতির শিশু ও কিশোর-কিশোরী রয়েছে ওই স্কুলে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাচ্চা নিয়ে স্কুলে এসে হাজির ওই উপজাতি রমণী। তিনি শবর উপজাতির না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন আদাবোলা নামে শবরদের একটি গ্রামে। জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে ওই আদিবাসী যুবতীর সঙ্গে আলাপ হয় অন্য উপজাতির এক যুবকের সঙ্গে। শুরু হয় মেলামেশা। যুবক তাঁকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখায়। ঘনিষ্ঠতার পর সন্তানসম্ভবা হন ওই রমণী। কিন্তু তারপরই যুবক জানিয়ে দেয়, অন্য উপজাতি হওয়ার কারণেই যুবতীকে বিয়ে করতে পারবে না সে। বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে জন্ম হয় শিশুকন্যার। যুবতীর মা-বাবা ও প্রতিবেশীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, শিশুটির বাবা যেহেতু অন্য উপজাতির, তাই শিশুটি বেঁচে থাকাকালীন তার মাকেও গ্রামে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। তাই খুন করে ফেলতে হবে শিশুটিকে। যদি মা সেই কাজ না করতে পারেন, তবে বাড়ির লোকেরাই খুন করে ফেলতে পারে তাকে।
সদ্যোজাত মেয়েকে বাঁচাতে নিজের গ্রাম থেকে বহুদূরে এক শবর গ্রামে আশ্রয় নেন যুবতী। কিন্তু বাড়ি ফিরতে গেলে যে সন্তানকে পরিত্যাগ করতে হবে। শেষপর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তই নিলেন যুবতী। দু’মাসের শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলেন শবরদের ‘পুলিশ বাবা’ অরূপ মুখোপাধ্যায়ের স্কুলে। এখন সেই স্কুলই আশ্রয়স্থল শিশুটির। কখনও অরূপবাবুর স্ত্রী শিখা মুখোপাধ্যায়ের কোলে, আবার কখনও বা অন্যান্য ছাত্রীদের কোলে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। এবার তার জন্য খোঁজা হচ্ছে নতুন নাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.