Advertisement
Advertisement

Breaking News

বাজারে গিয়ে রংচঙে মাছ পছন্দ? আপনিই কিন্তু জালে পড়ছেন!

চকচক করলেই 'ভাল' মাছ হয় না।

Fishes are painted with artificial colours, harms human body
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 2, 2017 10:36 am
  • Updated:September 21, 2019 2:18 pm

রঞ্জন মহাপাত্র: মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ না হলে একেবারে চলে না। কিন্তু মাছের বাজারে গিয়ে সাবধান। ‘যা চকচকে তা সোনা নয়’। এই প্রবাদ বাক্যটি না মানলে কিন্তু চরম ঠকতে হবে আপনাকে। কারণ দোকানে গিয়ে দেখলেন মাছের দোকানে  টুকটুকে লাল ও টাটকা সমুদ্র কিংবা মিষ্টি জলের মাছটি সুন্দর করে সাজানো রয়েছে। যা দেখে আপনার মনে হবে আজ একটু দাম দিয়ে এই মাছটি বাড়ি নিয়ে গেলে গিন্নি খুশি হবে। এমনটা ভাবার আগে মাছটা একটু নেড়ে-ঝেড়ে দেখুন। মানে গৃহিণীকে খুশি করতে মাছগুলিকে বাড়ি নিয়ে গেলেন কিন্তু রান্নার জন্যে কড়াইতে ফেলতেই প্রতিবেশীরা নাকে রুমাল চাপা দিচ্ছেন। এতে আপনার গৃহিণী খুশি তো দূর অস্ত উল্টে আপনার কপালেই জুটবে দুর্ভোগ। তাই মাছ কেনার আগে একটু দেখে কিনুন মাছটি নরম না শক্ত।

[ভালবাসা ‘ছিনতাই’ করে অপরাধে হাত পাকাচ্ছে আগামীর ক্রিমিনালরা]

Advertisement

মাছের কানকো লাল না কি ফ্যাকাসে ধূসর রংয়ের। মাছে আঁশটে গন্ধ আছে তো। হ্যাঁ, আজকাল পচা মাছকে টুকটুকে ও টাটকা করে তুলতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছে কাপড়ের রং ও ফর্মালিন ব্যবহার করছেন। কাঁথি শহর, মারিশ, রামনগর, দিঘা, হলদিয়া, কোলাঘাট কিংবা এগরা। সর্বত্রই মাছে রং ও ফর্মালিন মিশিয়ে বাজারে বিক্রির রমরমা চলছে। প্রতিনিয়ত রং ও ফর্মালিন মেশানো মাছ মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় ক্যানসার ও কিডনি জনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সব জেনেও প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনের আলোয় রাস্তার পাশে বসেই রং মেশানো ফর্মালিন জলে মাছকে ডুবিয়ে টাটকা করে দেদার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। এই চিত্র শুধু মারিশদা এলাকায় নয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি মাছের বাজের গেলেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফার জন্যে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে চলেছে।

Advertisement

[এক ফোনেই বাড়িতে রান্নার গ্যাস, প্রতিবার ঠকে যাচ্ছেন না তো?]

কীভাবে চলছে এই চক্র?

মাছ ব্যবসায়ীরা সামুদ্রিক রুলি, ভোলা, তাপড়া-সহ নানান সামুদ্রিক ও মিষ্টি জলের মাছ অনুযায়ী রং ব্যবহার করছেন। ব্যবসায়ীরা প্রথমে বালতির বা গামলার জলের সঙ্গে রং ও ফর্মালিন মেশান। সেই জলে পচা ও সাদা মাছগুলোকে ওই বালতির জলে ডুবিয়ে কিছু সময় রেখে দেন। মাছের রং পরিবর্তন হয়ে গেলে তা জল থেকে তুলে বিক্রি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ‘ক্রেতারা মাছ লাল না হলে কেনেন না, তাই রং জলে ডুবিয়ে মাছে রং করা হয়। বাজারে রং ও ফর্মালিন ব্যবহার করার ফলে যেমন পচা মাছকে তাজা বলে বিক্রি করা সহজ হয়, তেমনই টুকটুকে রং দেখে গ্রাহকেরা সহজে মাছ কিনে বাড়ি নিয়ে যান।’

ফর্মালিন কি?

ফর্মালিন (-CHO-)n হল ফর্মালডিহাইডার (CH2O) পলিমার। ফর্মালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মতো। জলে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবণকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়। ফর্মালিন সাধারনত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ফর্মালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। 

ফর্মালিনের ক্ষতিকর দিক:

  • ফর্মালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • তাৎক্ষণিকভাবে ফর্মালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কার্বাইড-সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়েরিয়া, আলসার, চর্মরোগ-সহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
  • ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
  • ফর্মালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতা সহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে। এতে মৃত্যু অনিবার্য।
  • মানবদেহে ফর্মালিন ফর্মালডিহাইড ফর্মিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে অ্যাসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে।
  • ফর্মালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে তা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। ফর্মালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সার সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।
  • গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, শিশুর জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।

ফর্মালিন শনাক্ত করবেন কীভাবে :

  • ফর্মালডিহাইডের দ্রবণের সঙ্গে ২ সিসি ফিনাইল হাইড্রোজাইন হাইড্রোক্লোরাইড (১%) এবং ১ সিসি ৫% পটাশিয়াম ফেরিসায়ানাইড দিয়ে তারপর ৫ সিসি ঘনীভূত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড মেশালে পুরো দ্রবণ গাঢ় গোলাপি রঙ হয়ে থাকে। একে বলা হয় সেরিভারস্ টেস্ট।
  • ফর্মালডিহাইডের হালকা দ্রবণ যেমন মাছে ফর্মালিন দেওয়া আছে তা ধুয়ে তার জলে ১ সিসি সোডিয়াম নাইট্রোপ্রোসাইড মেশালে গাঢ় সবুজ নীল রঙ ধারণ করে। এতে ফর্মালডিহাইড তথা ফর্মালিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে।

কীভাবে মাছ থেকে ফর্মালিন দূর করবেন?

  • ফর্মালিনযুক্ত মাছের ফুলকা উজ্জ্বল লাল বর্ণ , চোখ ও আঁশ উজ্জ্বল হয়, শরীরে আঁশটে গন্ধ পাওয়া যায়, মাছের দেহ নরম হয়। অন্যদিকে ফর্মালিনবিহীন মাছের ফুলকা ধূসর, চোখ ঘোলাটে ও ফর্মালিনের গন্ধ পাওয়া যায়, আঁশ তুলনামূলক ধূসর বর্ণের হয়, শরীরে আঁশটে গন্ধ কম পাওয়া যায়, দেহ তুলনামূলক শক্ত হয় ।
  •  দেখা গিয়েছে জলে প্রায় ১ ঘন্টা মাছ ভিজিয়ে রাখলে ফর্মালিনের মাত্রা শতকরা ৬১ ভাগ কমে যায়।
  • লবণাক্ত জলে ফর্মালিন দেওয়া মাছ ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ফর্মালিনের মাত্রা কমে যায়।
  • প্রথমে চাল ধোয়া জলে ও পরে সাধারন জলে ফর্মালিন যুক্ত মাছ ধুলে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ফর্মালিন দূর হয়।
  • সবচাইতে ভাল পদ্ধতি হল ভিনিগার ও জলের মিশ্রনে (জলে ১০ % আয়তন অনুযায়ী) ১৫ মিনিট মাছ ভিজিয়ে রাখলে প্রায় ১০০ ভাগ ফর্মালিনই দূর হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ