রঞ্জন মহাপাত্র: মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ না হলে একেবারে চলে না। কিন্তু মাছের বাজারে গিয়ে সাবধান। ‘যা চকচকে তা সোনা নয়’। এই প্রবাদ বাক্যটি না মানলে কিন্তু চরম ঠকতে হবে আপনাকে। কারণ দোকানে গিয়ে দেখলেন মাছের দোকানে টুকটুকে লাল ও টাটকা সমুদ্র কিংবা মিষ্টি জলের মাছটি সুন্দর করে সাজানো রয়েছে। যা দেখে আপনার মনে হবে আজ একটু দাম দিয়ে এই মাছটি বাড়ি নিয়ে গেলে গিন্নি খুশি হবে। এমনটা ভাবার আগে মাছটা একটু নেড়ে-ঝেড়ে দেখুন। মানে গৃহিণীকে খুশি করতে মাছগুলিকে বাড়ি নিয়ে গেলেন কিন্তু রান্নার জন্যে কড়াইতে ফেলতেই প্রতিবেশীরা নাকে রুমাল চাপা দিচ্ছেন। এতে আপনার গৃহিণী খুশি তো দূর অস্ত উল্টে আপনার কপালেই জুটবে দুর্ভোগ। তাই মাছ কেনার আগে একটু দেখে কিনুন মাছটি নরম না শক্ত।
[ভালবাসা ‘ছিনতাই’ করে অপরাধে হাত পাকাচ্ছে আগামীর ক্রিমিনালরা]
মাছের কানকো লাল না কি ফ্যাকাসে ধূসর রংয়ের। মাছে আঁশটে গন্ধ আছে তো। হ্যাঁ, আজকাল পচা মাছকে টুকটুকে ও টাটকা করে তুলতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছে কাপড়ের রং ও ফর্মালিন ব্যবহার করছেন। কাঁথি শহর, মারিশ, রামনগর, দিঘা, হলদিয়া, কোলাঘাট কিংবা এগরা। সর্বত্রই মাছে রং ও ফর্মালিন মিশিয়ে বাজারে বিক্রির রমরমা চলছে। প্রতিনিয়ত রং ও ফর্মালিন মেশানো মাছ মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় ক্যানসার ও কিডনি জনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সব জেনেও প্রশাসনিকভাবে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনের আলোয় রাস্তার পাশে বসেই রং মেশানো ফর্মালিন জলে মাছকে ডুবিয়ে টাটকা করে দেদার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে সামুদ্রিক মাছ। এই চিত্র শুধু মারিশদা এলাকায় নয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি মাছের বাজের গেলেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে। ব্যবসায়ীরা নিজেদের মুনাফার জন্যে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে চলেছে।
[এক ফোনেই বাড়িতে রান্নার গ্যাস, প্রতিবার ঠকে যাচ্ছেন না তো?]
কীভাবে চলছে এই চক্র?
মাছ ব্যবসায়ীরা সামুদ্রিক রুলি, ভোলা, তাপড়া-সহ নানান সামুদ্রিক ও মিষ্টি জলের মাছ অনুযায়ী রং ব্যবহার করছেন। ব্যবসায়ীরা প্রথমে বালতির বা গামলার জলের সঙ্গে রং ও ফর্মালিন মেশান। সেই জলে পচা ও সাদা মাছগুলোকে ওই বালতির জলে ডুবিয়ে কিছু সময় রেখে দেন। মাছের রং পরিবর্তন হয়ে গেলে তা জল থেকে তুলে বিক্রি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, ‘ক্রেতারা মাছ লাল না হলে কেনেন না, তাই রং জলে ডুবিয়ে মাছে রং করা হয়। বাজারে রং ও ফর্মালিন ব্যবহার করার ফলে যেমন পচা মাছকে তাজা বলে বিক্রি করা সহজ হয়, তেমনই টুকটুকে রং দেখে গ্রাহকেরা সহজে মাছ কিনে বাড়ি নিয়ে যান।’
ফর্মালিন কি?
ফর্মালিন (-CHO-)n হল ফর্মালডিহাইডার (CH2O) পলিমার। ফর্মালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মতো। জলে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবণকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়। ফর্মালিন সাধারনত টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ফর্মালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ফর্মালিন শনাক্ত করবেন কীভাবে :
কীভাবে মাছ থেকে ফর্মালিন দূর করবেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.