সুমিত বিশ্বাস: প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ এখানে মিলেমিশে একাকার। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এক গহন অরণ্যের বিবরণ আজকের টোটোয়। কথা হচ্ছে পুরুলিয়ার দুয়ারসিনিকে নিয়ে।
সবুজে-সবুজ
শাল, সেগুন, অর্জুন, মহুয়া। এক কথায় অরণ্য সুন্দরী। বান্দোয়ানের দুয়ারসিনির তাই অরণ্য সুন্দরী নাম যেন মানানসই। যার বিশেষত্ব ঘন জঙ্গল। এখানকার দুপাশে চোখ জুড়ানো সবুজকে পিছনে ফেলে লং ড্রাইভে যেতে পছন্দ করেন অনেকেই। বান্দোয়ান থেকে দুয়ারসিনির দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। ঝকঝকে রাস্তা, সবুজ। আর কী চাই!
[সামনেই রয়েছে বিরাট ছুটি, ঘুরে আসুন প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি শিমুলতলায়]
‘ভাল’ পাহাড়
যা সুন্দর তাই যেন পবিত্র। এই যেমন ভাল পাহাড়। দুয়ারসিনি যাওয়ার পথে একটি পাহাড়ের এমন আজব নাম অনেকেরই কৌতূহলের কারণ। আসলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই এলাকায় এত উন্নয়নমূলক কাজ করেছিল তার জন্য এমন নামে ডাকা হয়। দুয়ারসিনির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে এখানে দু-দণ্ড জিরিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এইপথে পরে কুঁটিয়া। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই এলাকায় রয়েছে সিআরপিএফ ক্যাম্প। দুয়ারসিনি থেকে রাস্তা আসনপানি পর্যন্ত যাচ্ছে। এটি বাংলার শেষ সীমানা।
আতঙ্ক সরিয়ে ভরসার রোদ্দুর
একসময় এই দুয়ারসিনিতে মাওবাদীদের ডেরা ছিল। মাওবাদী দৌরাত্ম্যে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের একটি কটেজ বন্ধ হয়ে যায়। ছবির মতো ছিল কটেজটি। আপাতত আতঙ্ক অতীত। বন উন্নয়ন নিগম ফের সুন্দর করে কটেজটি সাজিয়েছে।
[নদীর এপারে হাতি ওপারে আপনি, ডামডিম যেন স্বপ্নের ঠিকানা]
অনাঘ্রাতা কুমারী
ঘন জঙ্গল এক কথায় ‘আনটাচ’। স্থানীয়রা বলেন দুয়ারসিনি অনাঘ্রাতা কুমারী। এখানে এক এক ঋতুতে যেন প্রকৃতির আলাদা রূপ। জঙ্গল রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে। সবুজ বনরাজি ঘিরে রয়েছে নদী সাতগুড়ুম। এই নদী জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে। পাহাড়ের টিলার কোল ঘেঁষে জঙ্গলের পাশ দিয়ে সাতগুড়ুমের ছন্দ মনে করিয়ে দেয় তিস্তাকে। উত্তরবঙ্গের এই নদী নিয়ে যাদের আলাদা রকম অনুভূতি রয়েছে সাতগুড়ুম দেখলে তাদের মন ভাল হয়ে যাবে।
প্রকৃতি যেখানে সুন্দর
সাতগুড়ুম নদীতে দলমা থেকে আসা হাতির দল ও হরিণের দল জল খায়। কপাল ভাল থাকলে ওদের তৃষ্ণা মেটানোর ছবি চাক্ষুষ করতে পারবেন। এখানে ট্রেকিং করে যাওয়া যায়। জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে অজস্র কীটপতঙ্গ। অতএব একটু সাবধান। আর পথে চলতে চলতে মিলতে পারে হনুমান বা ময়ূর।
অন্যরকম সব ছাউনি
দুয়ারসিনিতে থাকতে হলে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা বলতে বান্দোয়ান শহরে বেসরকারি লজ। ওই লজ ছাড়া দুয়ারসিনি গ্রামে ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর আছে। স্থানীয়দের বললে ওরা সব ব্যবস্থা করে দেবে। দুপুরে গরম গরম ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু চোখা আর দেশি মুরগির ঝোল পেয়ে যাবেন। কপাল ভাল থাকলে এসে যেতে পারে মহুয়া। রাতেও থাকার ব্যবস্থা আছে। শৌচাগারের কোনও সমস্যা নেই।
বৈচিত্র্য
দুয়ারসিনিতে ঢোকার সময় কুঁড়েঘরের মতো দোকান রয়েছে। প্রতি শনিবার এখানে হাট বসে। রয়েছে নিজস্ব হস্তশিল্পের পসার। তা দেখার মতো। দুয়ারসিনি এলে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানাকার জিলিপি যারা একবার খান, তারা ফের খোঁজ নেন।
কোন পথ ধরবেন
ঝাড়খণ্ডের গালুডি অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট। গালুডি থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে দুয়ারসিনি। গালুডি গিয়ে দুয়ারসিনি হয়ে বান্দোয়ান যেতে পারেন। সেখান থেকে পুরুলিয়া হয়ে কলকাতা। এই রুটে অনেক কিছু ঘোরা যাবে।
ছবি: অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.