সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আবহাওয়া যত গরম হচ্ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে মেজাজও। পান থেকে সামান্য চুন খসল কি না, ব্যস ঘরে ঘরে, পথে-ঘাটে, কর্মক্ষেত্রে লেগে যাচ্ছে ধুন্ধুমার কাণ্ড। কখনও তা বড়সড় অপরাধের আকার ধারণ করছে। না, একে নিছক কাকতালীয় ঘটনা বলে এড়িয়ে গেলে চলবে না। পরিবেশ ও মানবদেহের এই আচরণগত সাদৃশ্যের পিছনে রয়েছে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। সাধারণের ব্যাখ্যায়, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অস্বস্তি বাড়তে শুরু করে। আর তাতেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। আরও এক ধাপ এগিয়ে এই তত্ত্বে সিলমোহর দিয়েছেন পোল্যান্ডের চিকিৎসক-গবেষকরা।
[জীবনের এই মুহূর্তগুলিতে আপনার চুপ থাকা উচিত]
পোজনান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের প্যাথোফিজিওলজিস্ট ড. ডোমিনিকা কানিকোওয়াস্কা জানিয়েছেন, গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহে কর্টিসোল হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল দেহের নুন, শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে দেহ তরলের স্বাভাবিক পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শীতকালে কর্টিসোল ক্ষরণ কম হয়, অন্যদিকে পরিবেশের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই হরমোন ক্ষরণ বাড়তে থাকে। এর কারণ হিসাবে ডোমিনিকা কানিকোওয়াস্কার ব্যাখ্যা, গরমে দরদর করে ঘামের কারণে শরীর থেকে তরল যত কমে যায় রক্তের ঘনত্বও তত বাড়তে থাকে। আর এই ঘন রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছলে কর্টিসোল ক্ষরণের নির্দেশ আসে। ফলে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে অত্যধিক মাত্রায় কর্টিসোল ক্ষরণ হয়। ব্যস, রক্তে কর্টিসোলের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদেরও মেজাজও চড়তে থাকে। শুধু মাথা গরম করেই ক্ষান্ত হয় না। এই হরমোনের লক্ষ্য আরও বহুদূর। মূলত স্বাস্থ্যহানি করাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই কারণে এই হরমোনকে ‘এক নম্বর পাবলিক হেলথ এনিমি’ বলা হয়। এই হরমোনের প্রভাবে স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের শেখার ক্ষমতাও। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, হাড়কে ভঙ্গুর করে। অন্যদিকে দেহের ওজন অত্যধিক বৃদ্ধি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের মতো আঘাত হানতে পারে কর্টিসোল। ক্রনিক মানসিক চাপেরও জন্ম দেয় এই হরমোন যা থেকে হতাশার মতো মানসিক রোগের সূত্রপাত হয়।
এ তো গেল দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। কিন্তু চটজলদি প্রভাবে এক নিমেষে আপনি বড় রকমের কোনও অপরাধ ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। আর এই সব তথ্যই মিলেছে অপরাধ প্রবণতার সংখ্যাতত্ত্ব থেকে। কোন ঋতুতে অপরাধ প্রবণতা বেশি তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই জানা যায়, গরমকালে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়। যার অধিকাংশ আচমকা হয়ে যায়। দেখা গিয়েছে, এই সবের পিছনে খলনায়কের ভূমিকায় রয়েছে কর্টিসোল হরমোন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.