পৌষালী দে কুণ্ডু: মেয়ের কি তাহলে এবার বিয়ে দিয়ে দেব?
২১ বছরের একটি মেয়ের মা উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্নটা করেছিলেন৷ ওই মহিলা একা নন, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম আছে শুনে বহু তরুণীর অভিভাবক আমাকে এই প্রশ্ন করেন৷ তাঁদের ধারণা, বিয়ের পর এই সমস্যা কেটে যাবে৷ আরও স্পষ্ট কথায় বললে, অনেকেই ভাবেন মেয়ে বাচ্চার জন্ম দিয়ে দিলে পলিসিস্টিকের জন্য আর কোনও টেনশন থাকবে না৷
কেন একটা সামান্য কারণে সদ্য যৌবনে পা রাখা, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাববেন? মানসিকভাবে প্রস্তুত নয় এমন মেয়েকে বিয়ের পরেই মা হওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হবে কেন? যুগটা বদলেছে৷ বাবা-মায়েরা অহেতুক ভয় পাবেন না৷ পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে৷ পলিসিস্টিকের জন্য তাড়াতাড়ি বিয়ে করে গর্ভধারণ করার দরকার নেই৷ তবে ৩০ বছরের মধ্যে মা হয়ে যাওয়াই ভাল৷ তা না হলে অন্যান্য জটিলতা হতে পারে৷
লাইফস্টাইল ও পরিবেশের পরিবর্তনের জন্য শহরের কিশোরী, তরুণীদের মধ্যে এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে ঠিকই৷ তা বলে মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে পিসিওএস প্রতিরোধ করা যাবে এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভুল৷ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হয়৷ অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে ডিম্বাণু নিঃসরণ ঠিকমতো হয় না৷ এটা এমন কিছু সমস্যার বিষয় নয়৷ তাছাড়া, পলিসিস্টিক ওভারি হলেই যে অপারেশন করতে হবে- এমন কোনও দরকার নেই৷
সাবধান:
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা হলে ও অতিরিক্ত মোটা হলেই সতর্ক হোক তরুণীরা৷ এখন কম খেলাধুলা, শারীরিক পরিশ্রম ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের জন্য কমবয়সিদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ তাই নির্ধারিত সময়ে পিরিয়ড না হলে, দু’-তিন মাস ধরে না হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে৷ বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বেড়ে গেলেই সাবধান হোন৷ আপনি ওবেসিটি আক্রান্ত কি না কিংবা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে ভুগছেন কি না তা আন্দাজ করতে পারবেন নিজেই৷
চেক করে নিন বিএমআই: মোট ওজন (কিলোগ্রাম)/ উচ্চতা২ (মিটার) = বিএমআই৷ বিএমআই ১৮.৫-র কম = স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন, ১৮.৫-২৪.৯ = স্বাভাবিক ওজন, ২৫-২৯.৯ = অতিরিক্ত ওজন (সতর্ক হতে হবে), ৩০-এর বেশি = ওবেসিটি আক্রান্ত।
উপসর্গ:
অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ডের সময় পেট ব্যথা, অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়া, চিবুক-ঠোঁটের উপরের অংশে অবাঞ্ছিত লোম, মোটা হয়ে যাওয়া, ওবেসিটি আক্রান্ত হওয়া, থাইরয়েডের সমস্যা হওয়া৷
উপায় নেই, ওজন কমান:
প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত শরীরচর্চা আর সুষম খাদ্য খেয়েই পিসিওএস মোকাবিলা করা যায়৷ ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে৷ রোগীর অতিরিক্ত ওজন বাড়লে প্রথমেই তা কমাতে হবে৷ কোন ধরনের খাবার খাবেন ও কী কী খাবেন না, তা জানার জন্য অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন৷ এক্সারসাইজ, ডায়েটিং ও জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করার ছ’মাস পর ফের গাইনোকলজিস্টের কাছে যান৷ আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে ডাক্তার যদি দেখেন পিসিওএস-এর সমস্যা কমেছে, ঋতুচক্র স্বাভাবিক হয়েছে তাহলে এই পদ্ধতিই রোগীকে চালিয়ে যেতে হবে৷ সমস্যা থেকে গেলে কিছু ওরাল মেডিসিন, মূলত পিল দেওয়া হয়৷ এই পিল ঋতুচক্রকে নিয়মিত করে৷ ফলে ধীরে ধীরে সমস্যার সমাধান হতে শুরু হয়৷
কুমারী-বিবাহিত… ভরসা ওরাল পিলে:
অনিয়মিত ঋতুচক্রকে নিয়মিত করতে ডাক্তাররা বেশ কিছু পিল দেন৷ ২৪ দিন পিল খাওয়ার পর চার দিন গ্যাপ দিয়ে ফের ২৪ দিন পিল খাওয়া যায়। এমন কিছু নতুন পিল পাওয়া যাচ্ছে যা এই চিকিৎসায় বেশ উপকারী৷ এছাড়া ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখতে Desogestrel, Gestodene, Drospirenone, Cyproterone যৌগযুক্ত কম ডোজের পিল ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ব্যবহার করা যায়৷ কুমারী মেয়েরাও এইসব পিল দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারেন৷ পিসিওএস-এ আক্রান্ত বিবাহিত মেয়েরাও এই পিল নিতে পারেন৷ এগুলি গর্ভনিরোধক হিসাবেও কাজ করে৷ তাই বিয়ের পরও এই ওরাল মেডিসিন দিয়ে দিব্যি চিকিৎসা চলে৷ ঋতুচক্র নিয়মিত হলে মহিলারা অনেকটাই মানসিক চাপমুক্ত থাকেন৷ তবে ছ’মাস অন্তর ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর গতিবিধি জেনে রাখা জরুরি৷
প্রেগন্যান্সি চাইলে:
প্রেগন্যান্সি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওরাল মেডিসিন নেওয়া বন্ধ করতে হবে৷ এরপর যদি অন্তঃসত্ত্বা হতে কোনও অসুবিধা হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে৷ অনিয়মিত ডিম্বাণু বেরনোকে নিয়মিত করে দিলেই ভবিষ্যতে মা হতে আর কোনও অসুবিধা থাকবে না৷ তবে পলিসিস্টিকের সঙ্গে ওবেসিটি থাকলে বিষয়টি জটিল হতে পারে৷ তাই মা হতে চাইলে আগে ওজন কমাতে হবে৷ এই রোগীদের প্রেগন্যান্সির সময় ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে৷ এছাড়া অন্য সমস্যা হলে সিস্টগুলিকে পাংচার (ড্রিলিং) করে দেওয়া হয়৷ তাতে সাময়িকভাবে ডিম্বাণু নিঃসৃত হতে পারে৷ তবে এখন এত আধুনিক ওষুধ বেরিয়েছে যে ড্রিলিং করার দরকার হয় না৷
সন্তানের জন্মের পর:
সন্তানের জন্মের পর অনেকেই পিসিওএস-এর চিকিৎসা ছেড়ে দেন৷ তখন অনেক ক্ষেত্রেই ফের পলিসিস্টিক ওভারি ফেরত আসে৷ অনেকে মোটা হয়ে যান, ব্লাড সুগার লেভেল বর্ডার লাইনে এসে যায়৷ সেরকম হলে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে পিসিওএস-এর চিকিৎসা শুরু করতে হবে৷ ব্লাড সুগারের জন্য মেটাফরমিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে৷
৪০-এর পর ডায়াবেটিস:
নিয়মিত চিকিৎসা করালে এর কোনও সমস্যাই হয় না৷ কিন্তু এটাও ঠিক, রোগীর ৪০ বছর বয়সের পর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই থাকে৷ ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশারে ভোগার প্রবণতাও থাকে৷ তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে এগুলো এড়ানো সম্ভব৷
আরও জানতে উডল্যান্ডস হসপিটালের গাইনোকলজির বিভাগীয় প্রধান ডা. কুশাগ্রধী ঘোষকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9831170661। ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.