Advertisement
Advertisement

Breaking News

বাড়িতেই করুন মাশরুম চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি

বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারছেন।

Mushroom cultivation in Katwa
Published by: Sayani Sen
  • Posted:February 28, 2019 4:59 pm
  • Updated:February 28, 2019 4:59 pm

ধীমান রায়, কাটোয়া: বর্তমানে রাজ্যে জনপ্রিয় হতে চলা খাবারের মধ্যে অন্যতম মাশরুম। মাশরুম আদতে এক ধরনের ছত্রাক। অনেকের ধারণা, মাশরুম মানেই বিষাক্ত। কিন্তু সব মাশরুম বিষাক্ত নয়। পৃথিবীতে প্রায় ৪৫ হাজার ধরনের ছত্রাক আছে। এর মধ্যে দু’হাজার রকমের ছত্রাক খাবার হিসাবে যোগ্য। এর মধ্যে ভারতে তিন ধরনের মাশরুম বিভিন্ন জলবায়ু এলাকায় চাষ হয়। সেগুলি হল পোয়াল, ধিংড়ি ও বোতাম মাশরুম।

উপকারিতা: মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক আ্যসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী। বাজারে মাশরুমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারছেন।

Advertisement

[বাড়তি আয় চান? পড়ে থাকা জমিতে করুন তেজপাতা চাষ]

চাষের পদ্ধতি: প্রথমে ৫০ কিলোগ্রাম এক বছরের পুরনো আমন ধানের খড় ৩২ টি আঁটিতে ভাগ করে নিতে হবে। ওই খড় পরিষ্কার জলে ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর বাড়তি জল ঝড়িয়ে নেওয়া হয়। মাশরুম চাষে ফোটানো জল ঠান্ডা করে ব্যবহার করলে রোগ লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। এবার পাটাতন বা মাচার ওপর আসেই খড়ের আঁটি একদিকে মাথা বা আগা রেখে পাশাপাশি বিছিয়ে দিতে হবে। আবার বিপরীত দিকে মাথা রেখে আগে বিছানো চার আঁটির উপর আরও চার আঁটি খড় বিছোতে হবে। পাটাতনের ধার বরাবর খড়ের বাড়তি অংশ কাস্তে দিয়ে কেটে দিতে হবে। এইভাবে বিছানো আট আঁটি খড়ের একটি স্তর তৈরি হল। ওই স্তরের উপর ধার বরাবর তিন থেকে চার সেন্টিমিটার ভিতরে সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো ও মাশরুমের বীজ দেওয়া হয়। প্রথম স্তরের কাজ এইভাবে শেষ হয়।

Advertisement

[বাড়িতে শিম চাষ করতে চান? রইল পদ্ধতি]

এরপরে ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় স্তরের আট আঁটি খড় প্রথম স্তরের আড়াআড়ি বিছিয়ে আগের মতো একইভাবে মাশরুমের বীজ ও ডালের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় স্তরের আট আঁটি খড় প্রথম স্তরের সমান্তরাল একইভাবে বিছিয়ে বীজ ও ডালের গুঁড়ো আগের মতো ছিটিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় স্তরের সমান্তরাল চতুর্থ স্তরে আট আঁটি খড় একইভাবে বিছানো হয়। এই স্তরে বীজ বা ডালের গুঁড়ো ছিটানো হয় না। তিনটি স্তরের মোট ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম বীজ ও সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো প্রয়োগ করা হয়। প্রতিটি স্তরের খড়ের আঁটিগুলি যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য এক বা একাধিক জায়গায় দড়ি বা খড় দিয়ে আলতো বাঁধন দিতে পারলে ভাল হয়। স্তরগুলি সাজানোর সময় পুরো স্তর জোরে চাপ দিয়ে ঘনসন্নিবিষ্ট করা যেতে পারে। পলিথিনের চাদর দিয়ে পুরো স্তরগুলি ঢেকে দেওয়া হয়।

[উৎপাদন বাড়াতে মৎস্যচাষির ভরসা বায়োফ্লক প্রযুক্তি]

প্রথম চারদিন ঢাকা খোলা বা জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তারপর প্রতিদিন পলিথিনের চাদর খুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাওয়া খাওয়ানোর পর প্রয়োজন মতো জল হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ফের পলিথিন চাদর ঢেকে দিতে হবে। আট থেকে ১০দিনের মধ্যে স্তূপে ছত্রাকের কুঁড়ি জন্মায়। কুঁড়ি জন্মানোর পর আর পলিথিন ঢাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সকালে বিকেলে প্রয়োজন মতো জল প্রতিটি স্তূপে ছিটিয়ে দিতে হয়। ১৫ দিনের মাথায় মাশরুম তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। পাঁচ থেকে সাতদিনের বিরতি দিয়ে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত অল্প করে মাশরুম উৎপন্ন হয়। এইরকম এক একটা স্তূপে তিন থেকে চার কিলোগ্রাম পর্যন্ত মাশরুম জন্মায়।

[অতিরিক্ত লক্ষ্মীলাভে চাষ করুন ছোলা, জেনে নিন পদ্ধতি]

সতর্কতা: মাশরুম চাষে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন তা হল পাটাতন সরাসরি সূর্যের আলো বা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা। ঠিক সময়ে পরিমিত মাত্রায় স্তূপে জল প্রয়োগ। স্তূপের তলায় কোনও মতেই জল জমতে না দেওয়া। যথাসময়ে পলিথিন চাদর ঢাকা দেওয়া ও সরিয়ে নেওয়া। একটি স্তূপে ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। বিরতির পর আবার অল্প হারে ফলন পাওয়া গেলেও কোনও অবস্থাতেই একমাসের বেশি কোনও স্তূপে রাখা উচিত নয়। পুরনো স্তূপের খড় কম্পোষ্ট পিটের গর্তে ফেলে দিয়ে আবার নতুন স্তূপ তৈরি করা হয়। তাই একসঙ্গে মাশরুম ও কম্পোষ্ট দুইই উৎপন্ন হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ