Advertisement
Advertisement

Breaking News

যান্ত্রিকতার বলি শিল্পী জীবন, অনুজদের স্মৃতিতে মেট্রো দুর্ঘটনায় মৃত সজল কাঞ্জিলাল

বিভিন্ন আর্ট কলেজে মডেল হিসেবে কাজ করতেন সজল কাঞ্জিলাল৷

Sajal Kanjilal, the dead man in metro accident is being remembered
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 14, 2019 7:00 pm
  • Updated:July 14, 2019 10:33 pm

সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়: শিল্পীর মতো জীবন কাটিয়েছিলেন৷ কিন্তু শেষটায় বড় গোল পাকিয়ে গেল৷ খোলা আকাশের নিচে, রোদছায়াবৃষ্টির মধ্যে, ধুলোমাখা পথের ধারে কিংবা আপন ঘরে প্রিয়জনের কোলে নয়৷ দৈনন্দিন জীবনের পথ চলতে চলতেই নেমেছিলেন মাটির গর্ভে৷ আর সেখান থেকে উঠে এলেন জীবন নিয়ে নয়, ক্ষতবিক্ষত, হিমশীতল একটা শরীর নিয়ে৷

[আরও পড়ুন: গাফিলতিতেই দুর্ঘটনা, মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর মৃতের পরিবারের]

শনিবার সন্ধেবেলা মহানগরীর পাতালপথে যে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, তার শিকার শিল্পী সজল কাঞ্জিলালকে নিয়ে এখন এসব কথাই শোনা যাচ্ছে তিলোত্তমার বাতাসে কান পাতলে৷ ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি পেশায় একজন ভাস্কর। কলকাতার বিভিন্ন আর্ট কলেজে তাঁর আঁকা ছবি, হাতের কাজ সাজানো রয়েছে৷ বিভিন্ন জায়গায় মডেল হিসেবেও কাজ করতেন সজল কাঞ্জিলাল৷ কসবার বাড়িতে মা ছাড়া কেউ নেই৷ আর থাকা বলতে জনা কয়েক আত্মীয়, বন্ধু৷ ছবি আঁকা, ভাস্কর্য তৈরি ছাড়াও সাহিত্যের কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন এই ‘কাঞ্জিলালদা’ (আর্ট কলেজের জুনিয়ররা তাঁকে এ নামেই ডাকতেন)৷ অ্যাকাডেমি চত্বরে নাটকের পত্রিকা বিক্রি করতেন, যুক্ত ছিলেন কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে৷

Advertisement

সেসব কাজেই শনিবার সন্ধেবেলার ভিড় মেট্রোয় পার্ক স্ট্রিট থেকে উঠতে গিয়েছিলেন সজল কাঞ্জিলাল৷ ব্যস্ত সময়ে নতুন রেকের দরজায় হাতটি গলাতে না গলাতেই দরজা বন্ধ হয়ে যায়৷ আটকে পড়েন তিনি৷ সাধারণত, ডোর সেন্সর এই অবস্থায় নিষ্ক্রিয় থাকে বলে মেট্রো চলতে পারে না৷ কিন্তু সজলবাবু যে মেট্রোয় উঠেছিলেন, হাত আটকে থাকা অবস্থাতেও তা পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে কবি সুভাষের দিকে ছুটতে থাকে৷ কিছুদূর যাওয়ার পর ঝাঁকুনি দিয়ে মেট্রো থেমে যায়৷ পড়ে যান সজলবাবু৷ সরু পাতালপথে তাঁকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে করতেই প্রাণবায়ু নিভে যায়৷

Advertisement

[আরও পড়ুন: স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কাছে গাঁজা বিক্রি, যাদবপুর থেকে মাদক-সহ ধৃত ২]

একজন আদ্যন্ত শিল্পীর জীবন শেষ হয়ে যায় এভাবেই৷ নাগরিক যান্ত্রিকতা কেড়ে নেয় বোহেমিয়ান জীবনকে৷ সজল কাঞ্জিলালের ব্যবহারিক জীবন নিতান্তই সাদামাটা ছিল৷ খুব স্বচ্ছলতা ছিল না কখনওই৷ সম্প্রতি হাল ফিরেছিল৷ কিন্তু তার আগেই সব শেষ৷ মেট্রো কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ, নাগরিক সমাজ৷ কেউ কেউ বলছেন, এই উদাসীনতার জন্য দায়ী কর্মীদের সাসপেনশন নয়, চাকরি থেকেই বরখাস্ত করে দেওয়া উচিত৷ অনিচ্ছাকৃত খুনের জন্য মামলা দায়ের করে বিচার প্রক্রিয়া চলা উচিত৷ রবিবার শেষ বিকেলে অ্যাকাডেমি চত্বরে নাট্যকর্মীরা ফুলে,মালায় সাজিয়ে বিদায় দিলেন তাঁদের প্রিয় দাদাকে৷ কলকাতা মেট্রোতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার তদন্ত করতে আসছেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি৷ দোষীদের সাজা হয়তো হবে, কিন্তু হারানো জীবন ফেরানো যাবে না কোনওদিন৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ