Advertisement
Advertisement

Breaking News

ধর্ষণ

‘মা, ওদের কেউ বলে না, ওরা পুরুষ জাতির কলঙ্ক!’ উন্নাও থেকে খোলা চিঠি

যাওয়ার আগে কি কিছু বলে যেতে চেয়েছিল সে?

What if Unnao girl would like to say something before she died

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:December 9, 2019 5:23 pm
  • Updated:December 10, 2019 10:33 am

সুলয়া সিংহ: আচ্ছা, ওরা কি সোনার চামচ মুখে করে জন্মায়? মানে অন্তত সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে। এই যেমন ওরা জন্মালেই গোটা পরিবার মিষ্টিমুখ করে। চোখে মুখে হাজার ওয়াটের আলো। ওরা ‘লায়েক’ হলে আবার ঠোঁটের কোণ থেকে হাসি ছড়িয়ে পড়ে গোটা মুখে। নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে তো ওদের অহংকারে মাটিতে পা পড়ে না। কিন্তু ওদের কি কেউ বলে না যে ওরা পুরুষ জাতির কলঙ্ক!

হ্যাঁ মা, আমি ওদের কথাই বলছি, যাদের জন্য আজ দগ্ধ শরীর নিয়ে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছি। তোমার-আমার মতো ওরাও তো এই সমাজেরই অংশ। তা সত্ত্বেও দুটো পরিবেশ এমন আলাদা কেন? কেন ওদের জন্য ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়? কেন রাতের অন্ধকারের সঙ্গে ঝুপ করে নেমে আসে একরাশ আতঙ্ক? আলিয়া ভাটের ‘গোয়িং হোম’ শর্ট ফিল্মটা খুব মন দিয়ে দেখেছিলাম একবার। সর্বক্ষণ ভয় হচ্ছিল, এবার যদি কিছু হয়। কিন্তু শেষটায় কী অদ্ভুত একটা স্বস্তি পেলাম। বাস্তবে এমনটা আশা করা পাপ। তাই না মা?

Advertisement

[আরও পড়ুন: রাম মন্দির তো হল, এবার কি তালিকায় কাশী-মথুরা?]

আচ্ছা, খোলা আকাশের নিচে, অন্ধকার ফাঁকা রাস্তায় কিংবা নিজের ঘরে একা নিরাপদে থাকার কথা ভাবাটা কি আমাদের অধিকার বিরুদ্ধ? এর জন্য কী গোপনাঙ্গের চেহারাটা অন্যরকম হওয়া জরুরি? জানো মা, ওরা খুব গর্ব করে বলে, ‘রাতে তোদের একা কোথাও যাওয়া বা বাড়ি ফেরাটা একেবারেই নিরাপদ না।’ আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘কেন? তোদের জন্য?’ উত্তর দেয়নি জানো? তবে একদিন কাজে বুঝিয়ে দিয়েছিল জবাবটা। সমস্ত পৈশাচিক অত্যাচার সহ্য করেছিল শরীরটা। ওদের গায়ের বীভৎস গন্ধ, মুখের গালিগালাজ, শরীরের গভীরতম প্রান্ত পর্যন্ত ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের উচ্ছ্বাস আর কর্তৃত্বের দম্ভের মধ্যে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিল আমার তীব্র আর্তনাদ। পায়ের তলায় গুঁড়িয়ে যাচ্ছিল আমার অসহায়তা। তারপরও বেঁচেছিলাম। ওই যে বলে না, আমাদের নাকি কই মাছের প্রাণ। তাই তো এখন আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে মা। শ্রীহারা, ছাল-চামড়া ওঠা, পোড়া, জ্বালা ধরা শরীরটার মৃত্যু ছাড়া আর কী চাহিদা থাকতে পারে!

Advertisement

জানো, ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, দৈহিকভাবে নাকি ওরা বেশি শক্তিশালী, বেশি বুদ্ধিমান, বেশি দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন, বেশি পরিশ্রমী। খেলার দুনিয়া থেকে ছবির জগৎ- সাফল্য-কৃতিত্বে ওরাই এগিয়ে। কিন্তু এই ব্যাপারটাতেও যে ওরা আমাদের অনেকখানি পিছিয়ে দিয়েছে, তার জন্য ওরা গর্ববোধ করে না? জন্মদাত্রীর আঙুল ধরে বড় হয়ে, স্ত্রীর বুকে ভালবাসা খুঁজে পেয়ে, সন্তানের পিতা হওয়ার স্বাদ পেয়েও ওরা অবুঝ! আচ্ছা, ওদের কেউ বলে দেয়নি, সম্মানের বদলেই সম্মান প্রাপ্য। নাকি আঙটি বাঁকা হলেও সোনার বলে, ওত-সত বলার প্রয়োজন মনে হয়নি। কে জানে।

জানো, অনেকে আবার বলে, আমরা নাকি আইনের সুযোগ নিয়ে মিথ্যে অভিযোগে ওদের ফাঁসানোর চেষ্টা করতে ছাড়ি না। ওরা যদি আমাদের মতো হয়ে যায়, তাহলে কি আর সে সুযোগ থাকবে? আসলে ওরা আমাদের মতো হতেই চায় না। ভ্রুণ অবস্থায় যাকে হত্যার চেষ্টা করে, তাকে দিয়েই আবার দেহের চাহিদা পূরণ করে। আসলে ওরা জানেই না ওরা মাসনিকভাবে অসুস্থ। ওরা আমাদের মতো হতেই পারবে না। পারবে না পোড়া শরীর নিয়ে সুবিচারের স্বপ্ন দেখতে। ওরা ভীরু, তাই দুর্বলের উপর শক্তির অধিষ্ঠান করে তৃপ্ত হয়। ওদের বলো, জ্বালিয়ে দিয়ে শেষ করা যাবে না। ফিনিক্স হয়ে ফিরে আসব। ওদের বলো, ওরা পুরুষ জাতির কলঙ্ক। ওদের জন্য পুরুষ জাতি লজ্জিত।

…হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোয় কি মা’কে এসব কথাই বলে যেতে চেয়েছিলেন উন্নাওয়ের ‘অগ্নিকন্যা’?

[আরও পড়ুন: ‘দেশটা আমার বদলে গিয়েছে’, একান্ত সাক্ষাৎকারে আক্ষেপ রবীশ কুমারের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ