কৃষ্ণকুমার দাস: অবশেষে নীলাচলে মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা নিয়ে কোটি কোটি ভক্তের টানা ন’দিনের উৎকণ্ঠার অবসান। যথাসময়ে ধর্মীয় রীতি ও লোকাচার মেনে এবছর পুরীতে রথে চেপেই গুণ্ডিচায় মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।
‘ভক্তের ভগবান’-এর প্রকাশ্যে রথযাত্রা নিয়ে দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীদের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে এ বছর রথযাত্রার ঠিক ৫০ দিন আগে তিনটি রথেরই নির্মাণ শুরুর সিদ্ধান্ত নিল পুরীর শ্রীমন্দিরের পাঁচ সদস্যের পরিচালন কমিটি। আজ, মঙ্গলবার পুরীর রাজবাড়ির পাশে ঐতিহ্য মেনে ধর্মীয় রীতিকে গুরুত্ব দিয়েই রথখোলায় তিনটি রথেরই নির্মাণ শুরু করবেন ‘বিশ্বকর্মা’র বংশধররা। তবে আগামী ৫ জুন দেবতাদের স্নানযাত্রা ও ২৩ জুন রাজপথে রথযাত্রা নিয়ে এখনই স্পষ্ট করে কোনও সরকারি ঘোষণা করা হয়নি। ১৭ মে তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউন শেষ হলে ফের মন্দির কমিটি ও ওড়িশা সরকার বৈঠকে বসে প্রকাশ্য রাজপথে রথযাত্রা ও ভক্তসমাগম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
পুরীর মহারাজা দিব্যসিংহ, ওড়িশার মুখ্যসচিব অসিতকুমার ত্রিপাঠীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সোমবার এ কথা জানিয়েছেন মন্দির পরিচালন কমিটির অন্যতম সদস্য ও প্রধান শিঙ্গারী নীলকণ্ঠ মহাপাত্র। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকার কোনওরকম জনসমাগম করে ধর্মীয় উৎসব করতে নিষেধ করেছে। কিন্তু রথের নির্মাণে কোনও আপত্তি করেনি। তাই রাজবাড়ির পাশে রথখোলাতেই রথের নির্মাণ শুরু করায় সবুজ সংকেত দিয়েছে সরকার।” সরকারি সিদ্ধান্তের পর সন্ধ্যা থেকেই মন্দিরের ভিতরে চন্দনযাত্রার দিন পুজো করে রাখা কাঠের গুঁড়ি রথখোলায় নিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। তবে রাজপথে রথযাত্রা হবে তা নিশ্চিত হলেও রথের দড়ি আগের মতোই ভক্তরা টানবেন নাকি প্রতীকী প্রশাসনের তরফে গুন্ডিচা মাসির বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে, তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
পুরীর রাজপরিবারের প্রধান পুরোহিত ও রাজার প্রতিনিধি দেবীপ্রসাদ রথযাত্রার পক্ষে জোরালো সওয়াল করে জানিয়েছেন, “সামাজিক দূরত্ব মেনে ও অন্যান্য নিয়ম-রীতি কার্যকর করেই এবছর যে একইপথে রথযাত্রা হবে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। ভগবান তাঁর পথে যাবেন, ভক্তরাই ঠিক করে নেবেন, কীভাবে, কোন পথে দেবতাকে মাসির বাড়ি পৌছে দেবেন।” মন্দিরের অন্যতম শিঙ্গারী জগন্নাথ মহাপাত্রও জানিয়েছেন, ভগবানের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে ভক্তদেরও কিছু করণীয় আছে। তাই রথযাত্রা কীভাবে হবে তা রাজ্য সরকার, পুরীর জেলাশাসক ও পুলিশ সুপাররা বসে ঠিক করবেন। এদিন ভিডিও কনফারেন্স বৈঠকে ভুবনেশ্বরে সচিবালয়ে ছিলেন মুখ্যসচিব, রাজবাড়িতে রাজা দিব্যসিংহ ও শ্রীমন্দিরে বসে ছিলেন পরিচালন কমিটির পাঁচ সদস্য। ছিলেন ওড়িশার স্বাস্থ্যসচিব প্রমোদকুমার মেহেরদা। ঠিক হয়েছে, “যাঁরা রথ তৈরির কাজ করবেন সেই বিশ্বকর্মাদের প্রত্যেকদিন করোনা সংক্রমণ নিয়ে রক্ত পরীক্ষা হবে। সবাই মুখে মাস্ক পরবেন। এলাকা ঘিরে দেওয়া হবে, থাকবে পুলিশ ও র্যাফ। রথের নির্মাণ দেখতে অন্য বছরের মতো কোনও ভক্ত যেতে পারবেন না।” নয় দিন রথের নির্মাণ শুরু না হওয়ায় যে ঘাটতি রয়েছে তা ‘বিশ্বকর্মা’রা দিন-রাত কাজ করে মিটিয়ে দেবেন বলে মন্দির কমিটির দাবি।
করোনার জেরে এ বছর রথযাত্রা না হলে পান্ডারা আর্থিকভাবে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই দিনকয়েক আগে কয়েক’শো বছরের ধর্মীয় রীতি মেনে রথযাত্রা বন্ধ না করতে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পটনায়েককে আবেদন করেছিলেন পান্ডারা। বস্তুত সেই কারণে রথ নির্মাণ শুরুর খবরে সন্ধ্যায় মন্দির ও সংলগ্ন এলাকায় পান্ডা ও পুরোহিতদের মধ্যে কার্যত উৎসবের মেজাজ ছড়িয়ে পড়ে। পুরীর মন্দিরের অন্যতম প্রবীণ পুজারি জগন্নাথ দৈতাপতির প্রতিক্রিয়া, “মহাপ্রভুর রথ তিনিই তৈরি করাচ্ছেন। নির্দিষ্ট দিনে তিনিই রথে চেপে মন্দিরের বাইরে এসে ভক্তকে দর্শন দেবেন। লক্ষ লক্ষ ভক্তের আকুল প্রার্থনা তিনি শুনেছেন, তাই রথযাত্রা হবেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.