Advertisement
Advertisement

কেন রাধার সঙ্গে হোলিতে মেতে উঠেছিলেন কৃষ্ণ?

বসন্তোৎসব এককালে ছিল মদনোৎসব।

Story behind of Holi Celebration of Radha Krishna in Vrindaban
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 18, 2019 5:26 pm
  • Updated:March 18, 2019 5:26 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৃ্ন্দাবনে বরাবরই উদার পরিবেশ। গোঁড়ামির বাতাস তেমন হালে পানি পায়নি।  এমন এক সময় সংকেত কুঞ্জে দেখা হয়েছে রাধা-কৃষ্ণের।  দিনটা ছিল বসন্তপঞ্চমীর।  আচমকাই শ্রীমতী খেয়াল করলেন উপর থেকে তাঁদের উপর কিছু ফুলের পাপড়ি ঝরে পড়ল।  ব্যাপার কী? কৃষ্ণ যোগবলে জানলেন, দেবতারা স্বর্গে রঙের উৎসব পালন করছেন। শ্রীমতীও বায়না ধরলেন রং খেলার জন্য। কৃষ্ণ জানালেন, সেদনিটা দেবতাদের জন্যই থাক, অন্য একদিন রংয়ে রেঙে ওঠা যাবে’খন। শ্রীমতীর সে আবদারই পূরণ হল ফাল্গুনি পূর্ণিমায়।  আবার অনেকে বলেন ছোট্ট কৃ্ষ্ণ পুতনার বিষ-স্তন পান করার পর থেকেই কালোবরণ। এদিকে রাধা ও তাঁর সখীরা সকলেই গৌরবরণী।  তাই দেখে মা যশোদার কাছে অনুযোগ করলেন কৃষ্ণ।  মা তাঁকে জানালেন, কোনও একদিন গিয়ে কৃষ্ণও যেন গোপীদের রঙে রাঙিয়ে দেয়।  তাহলেই সব এক।  সেই থেকেই রংয়ের উৎসবের সূচনা।  কৃ্ষ্ণ আর তাঁর দলবল গিয়ে রাধাকে রঙ মাখিয়ে এসেছিলেন বরষাণায়।  প্রত্যুত্তরে গোপীরা লাঠি হাতে তেড়ে এসেছিল নন্দগাঁওতে।  আর আত্মরক্ষা করেছিল কৃ্ষ্ণের সখারা।  এই হল লাঠমার হোলি।

1030_radha-krishna-holi-raslila

Advertisement

সে যাই হোক বসন্তোৎসব এককালে ছিল মদনোৎসব। পরবর্তীকালে বিষ্ণুর জায়গা যেভাবে নিয়েছিলেন কৃষ্ণ, সেভাবেই মদনের জায়গাও নিলেন তিনি। এ কথা মনে করতেন স্বামিজীও। আসলে মদনের সঙ্গে বসন্তের যোগাযোগ নিবিড়। তাই কুমারসম্ভবের কবি শিব-পার্বতীর মিলন ঘটাতে ডেকে এনেছিলেন বসন্তসখাকে। মদনের পরিবর্তে কৃষ্ণের জায়গা নেওয়া আসলে প্রেমের শিরোমণি হিসেবে কৃষ্ণের প্রতিষ্ঠার প্রতিই ইঙ্গিত দেয়।  রাধা-কৃষ্ণের সঙ্গে দোলের যোগাযোগ এইভাবে। নিশ্চয়ই এমনই কোনও ফাল্গুনি পূর্ণিমাতে গোপীশ্রেষ্ঠাকে নিয়ে রঙ খেলার সময় দোলনাতেও দুলেছিলেন, সেই থেকে দোল লেগেছে।  যাই হোক বসন্তের এই উৎসব একদিনের নয়, বেশ প্রলম্বিতই ছিল। এখনও তাই কোথাও কোথাও পঞ্চম দোল বা ষষ্ঠ দোল পালন করা হয়।  মহাকবি হালের রচনা থেকে জানা যায়, দোলে কাদা ছোঁড়াছোঁড়িও হত। যা এখনও ‘মেটে হোলি’ নামে চালু আছে।  দোলের সঙ্গে মদ্যপানের যোগাযোগও প্রাচীন।  ভাসের রচনায় জানা যায়, এই রঙের উৎসবেই বলরাম বৃন্দাবনের বারুণি মদ পান করে এত উতলা হয়েছিলেন যে, যমুনাকে কাছে ডেকেছিলেন স্নান করবেন বলে।  ইতিহাস সাক্ষী দেয়, যমুনা নদীর সে গতিপথ পরিবর্তনের। এই যে কলহ, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, মদ্যপান এসবই জানায় যে, দোল মোটেও শৌখিন উৎসব ছিল না।  বরং উদ্দামতা, উচ্ছ্বাস ছিল অনেক বেশি।

Advertisement

Mahaprabhu_web

এই দোলের মাত্রাই বদলে দিয়েছিলেন মহাপ্রভু। তাঁর দৌলতেই সর্বভারতীয় হয়ে উঠেছিল দোল।  এরকমই দোলপূর্ণিমা ছিল সেদিনও। বাংলা ৮৯১ সন। ১৪৮৫ খ্রীস্টাব্দ। অনেকে বলেন ১৪৮৬। পাঁচশো বছরেরও আগে এরকমই এক দিনে জন্ম নিয়েছিলেন মহাপ্রভু।

চৈতন্যচরিতামৃত-এ সেদিনের বর্ণনা দিয়ে কবিরাজ গোস্বামী লিখছেন,

চৌদ্দশত সাত শকে, মাস যে ফাল্গুন।

পূর্ণমাসীর সন্ধ্যাকালে হৈল শুভক্ষণ।।

অকলঙ্ক গৌরাঙ্গ দিলা দরশন।

সকলঙ্ক চন্দ্রে আর কিবা প্রয়োজন।।

এত জানি, চন্দ্রে রাহু করিল গ্রহণ।

‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরিনামে’ ভাসে ত্রিভুবন।

পূর্ণিমাতে চন্দ্রগ্রহণ যেন বাংলার সেই অবস্থার প্রতিনিধি স্বরূপ।  ঐতিহ্য সত্ত্বেও একরকমের ভঙ্গুর দশা চলছিল সে সময়।  একদিকে মুসলমান রাজত্বের জোরজুলুমে জেরবার সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের গোঁড়ামিতে তিতিবিরক্ত সমাজ।   এহেন এক সময়েই গৌরচন্দ্রের আবির্ভাব।   তার আগে থেকেই বিদ্যাচর্চার জন্য প্রসিদ্ধ ছিল নবদ্বীপ। নিমাই নিজেও ছিলেন বড় পণ্ডিত। তবে তর্কে যতদূর যাওয়া যায়, প্রেমে যে তার থেকেও বহুদূর, তা তিনি বুঝেছিলেন।  আর তাই ক্ষয়াটে সমাজব্যবস্থার বদল আনতে প্রেমেই ভরসা রেখেছিলেন।  সে প্রেম কৃষ্ণপ্রেম।  আর তাই মূলত মহাপ্রভুর কারণেই রাধা-কৃষ্ণের দোল সর্বভারতীয় উৎসবের চেহারা নিয়েছিল।

[কীভাবে মহা শিবরাত্রি ব্রত পালন করবেন?]

যবন শাসকের বিরুদ্ধে এককাট্টা করতে সারা ভারত তিনি প্রায় পদব্রজে ভ্রমণ করেছিলেন। আর যেখানে যেখানে গিয়েছিলেন সেখানেই ঘটেছে কৃ্ষ্ণচর্চার প্রসার।  ফলত দোলও গণ্ডি ছেড়ে হয়ে উঠেছে সর্বভারতীয়।  ধর্মের বেড়া টপকে হয়ে উঠেছিল সার্বজনীন।   মহাপ্রভু গৌড়ের শাসক হননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর আদর্শ নবজাগরণ ঘটিয়েছিল।  চৈতন্য রেনেসাঁ নামে যা পরিচিত। মহাপ্রভুর তিরোধানের পর, বৈষ্ণবদের সমাজ আবার পড়েছিল ভাঙনের মুখে। পরবর্তী মোহন্তরা এই দোলকে কেন্দ্র করেই পুনরায় তাঁর আদর্শ স্থাপন করেছিলেন।

কৃষ্ণের সমস্ত কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমণ্বয় একটা প্রধান ব্যাপার। তা যেমন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, তেমনই সেই সময় সমস্ত ভাব ও দর্শনেরও সমণ্বয় ঘটিয়েছিলেন তিনি।  এই হোলির মধ্যেও আছে সেই সমণ্বয়।  পাশপাশি কয়েক হাজার বছর আগেও নারী স্বাধীনতার পরিবেশটা ঠিক কীরকম ছিল, এই উৎসবে ব্রজ রমণীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই তার প্রমাণ মেলে।

দোল আনন্দ উৎসব। রঙের নেশায় ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যে পৌঁছনোর সোপান।  প্রাচীন রাধা-কৃ্ষ্ণের উপাখ্যান অবলম্বন করে মহাপ্রভু সেই কাজটিই করেছিলেন।  আর তা থেকে দোলও পেয়েছে এক বিভেদহীন উৎসবের পরম্পরা।

[হারানো নদীই আসলে দেবী সরস্বতী?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ