বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: রাস্তার পাশে বেআইনিভাবে সরকারি গাছ কাটার কাজ চলছিল। আর সেই গাছ মাথায় পড়ে মৃত্যু এক ব্যবসায়ীর। ওই মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। বিক্ষোভ, অবরোধে ফেটে পড়েন স্থানীয়দের। ওই ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার করতে গেলে বাধা পায় পুলিশ। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরেরও চেষ্টা করা হয়। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার তীব্র উত্তেজনা ছড়াল নদিয়ার শান্তিপুর থানার গয়েশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সগুনা এলাকায়।
নিহত ব্যবসায়ী বছর ছেচল্লিশের খুরশেদ মণ্ডল, নবদ্বীপ থানার ফকিরডাঙ্গা-ঘোলাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাহিরচড়া গ্রামের বাসিন্দা। শান্তিপুরের বাগআঁচড়া থেকে নবদ্বীপের ভালুকা যাওয়ার রাস্তাটি গয়েশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সগুনা এলাকায় কিছুটা নির্জন। রাস্তার পাশেই রয়েছে পরপর বেশ কয়েকটি সরকারি গাছ। গোপনে সেই গাছ কেটে পাচার করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরেই নজর ছিল কাঠ পাচারকারীদের। বুধবার দুপুরে ওই রাস্তায় লোকজন বিশেষ ছিল না। সেই সুযোগে একজন কাঠ পাচারকারী কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটছিল। ঠিক সেই সময় খুরশেদ বাইক চালিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে হিজুলি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আচমকাই দমকা হাওয়ায় সেই গাছ ভেঙে খুরশিদের মাথায় পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ওই ব্যবসায়ী। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
ওই ঘটনা দেখে ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দেয় পাচারকারী। যদিও মৃত্যুর খবর মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সগুনা এলাকায়। খবর পৌঁছে যায় নবদ্বীপের বাহিরচড়া গ্রামেও। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে জড়ো হন প্রচুর মানুষ। তাঁরা মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মৃতদেহ আটকে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শান্তিপুর থানার পুলিশ। গাড়ি দেখেই মানুষের সব ক্ষোভ গিয়ে পড়ে পুলিশের উপর। পুলিশকর্মীরা গাড়ি থেকে নামামাত্রই তাঁদের ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। আক্রান্ত হন পুলিশকর্মীরা। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। সেই খবর পাওয়ার পর শান্তিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক লাল্টু ঘোষ বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তিনি ক্ষুব্ধ জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন। যদিও বিক্ষোভকারীরা কিছুতেই শান্ত হতে চাইছিলেন না। তাঁদের অভিযোগ, কাঠ পাচারকারীরা মাঝেমধ্যেই রাস্তার পাশের সরকারি গাছ কেটে চুরি করে নিয়ে যায়। পুলিশি প্রহরা থাকলে এমনটা হত না। প্রাণ যেত না একজন নিরীহ মানুষের। যদিও সরকারি গাছ কাটা ও দেখভালের দায়িত্ব বনদপ্তরের, পালটা দাবি পুলিশের।
অবশেষে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার আশ্বাস দেয় পুলিশ। তাতেই পরিস্থিতি শান্ত হয়। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। নবদ্বীপের ফকিরডাঙ্গা-ঘোলাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান আকবর আলি মণ্ডল বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই আর্থিক অনটনের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী খুরশেদ মণ্ডল। তাঁর মুদি দোকানের রোজগারের উপরেই পরিবারের ৬ সদস্য নির্ভরশীল। বেআইনিভাবে গাছ কাটার জন্যই অকালে মৃত্যু হল ওই ব্যবসায়ীর। অবিলম্বে বেআইনিভাবে গাছ কাটা বন্ধ করা উচিত।” দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃতের ভাইপো আলামত মণ্ডল। পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত বর্তমানে পলাতক। তার সন্ধানে তল্লাশি চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.