ধর্মবিরোধিতার অভিযোগে অভয়ারণ্য পাঠাগারের বইয়ের তাকগুলো প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। ছবি- সংগৃহীত
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহম্মদ ইউনুসের জমানায় শুধু মন্দির-গির্জাই নয়, বাংলাদেশে রেহাই মিলল না রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বইয়েরও। এবার ‘অভয়ারণ্য’ নামের একটি পাঠাগার থেকে তাঁদের লেখা বই লুট করে নিয়ে গিয়েছে তৌহিদি জনতার যুবকরা। রাজধানী ঢাকা থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূরের জেলা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো বইগুলো পাঠাগার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলো নাকি ধর্মবিরোধী! তাই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বহুদিন ধরেই ‘নতুন’ বাংলাদেশে রবীন্দ্র-নজরুলকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে। ফলে এই ঘটনায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ১৫-২০ জন যুবক পাঠাগারে ঢুকে পাঁচটি বস্তায় ভরে বইগুলো উপজেলা নির্বাহী আধিকারিকের (ইউএনও) কাছে জমা দেয়। ওই যুবকদের দাবি, তারা যেসব বই পাঠাগার থেকে নিয়ে এসেছে, সেগুলো ধর্মবিরোধী। এসব বই পড়ে যুবসমাজ ধর্মবিরোধী হয়ে উঠছে। পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় দু’লক্ষ টাকার বই ও নথিপত্র লুট এবং ৫০ হাজার টাকার আসবাব ভাঙচুর করেছে ওই যুবকরা। তারা যে বইগুলো নিয়ে গিয়েছে তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই রয়েছে।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ জানান, “তৌহিদি জনতা’র নাম নিয়ে স্থানীয় যুবক গোলাম রাব্বানী রিশাদ-সহ ১৫-২০ জন পাঠাগারে ঢুকে বই বস্তায় তুলতে শুরু করে। তারা হুমকি দিয়ে বলে, এখানে কোনও পাঠাগার থাকতে দেবে না, বই পুড়িয়ে ফেলবে।” প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে স্বতন্ত্রতাবিহীন বিক্ষুব্ধ মুসলিমদের যেকোনও দলকে তৌহিদি জনতা বলে। এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানীর দাবি, “অভয়ারণ্য পাঠাগার যারা পরিচালনা করেন, তারা সব ধর্মের বিরোধী। গত বুধবার এই পাঠাগারের এক সদস্য ফেসবুকে ধর্মবিরোধী একটি পোস্ট দেয়। আমরা তার কাছে জানতে পারি, সে ওই পাঠাগারের সঙ্গে জড়িত হয়ে ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছে। এ জন্য বৃহস্পতিবার আমরা পাঠাগারে গিয়ে যে বইগুলো ধর্মবিরোধী মনে হয়েছে, তা নিয়ে ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছি। বই লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।”
ইউএনও শাহীন মাহমুদের বক্তব্য, “তৌহিদি জনতার নাম করে কয়েকজন কারও অনুমতি ছাড়াই বস্তায় ভরে বইগুলো পাঠাগার থেকে আমার অফিসে নিয়ে এসেছেন। দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র বলেন, “হামলা কেবল বইয়ের উপর নয়, মুক্তচিন্তা ও যুক্তিনির্ভর জ্ঞানচর্চার একটি নিরাপদ পরিসরকে ধ্বংসের চেষ্টা। আমি দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং পাঠাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।”
এই মুহূর্তে মহম্মদ ইউনুসে বদলের বাংলাদেশে নিপীড়িত হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। ভাঙচুর করা হয়েছে শতাধিক মন্দির। কয়েকদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম। তাই বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির কোনও প্রয়োজন নেই। সেই বিষয়কে মান্যতা দিয়েই নতুন খসড়া তৈরি করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটিকে বাদ হয়েছে নয়া সুপারিশে। সেই নতুন খসড়াই তুলে দেওয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার হাতে। ফলে বাংলাদেশ কি ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়ার দিকে এগোচ্ছে? উঠছে এমনই প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.