শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী, ঢাকা: সংবিধান সংশোধন ছাড়া কোনওভাবেই বাংলাদেশের বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। বর্তমান মহম্মদ ইউনুস সরকারও এ বিষয়ে সুনিশ্চিত পদক্ষেপ করতে পারছে না। মেনে নিলেন বাংলাদেশে নতুন গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক অনীক রায়ের। পাশাপাশি, নতুন গঠিত দলের অন্যতম ‘হিন্দু মুখ’ অনীক স্বীকার করে নিলেন, সাম্প্রতিক অতীতে হিন্দুদের উপর কয়েকটা হামলার ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। তবে, তার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। যেমন রাজনৈতিক কারণ আছে, তেমনই সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণগুলোকেও উপেক্ষা করা যায় না।
ঢাকার পরিবাগের বাড়িতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অনীকের দাবি, “বাংলাদেশের হিন্দু তথা সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-অত্যাচারের ঘটনাকে কোনওদিনই তেমনভাবে গুরুত্ব অতীতের কোনও সরকার দেয়নি। তাদের সবার মানসিকতা অনেকটা যেন এমনই ছিল যে, সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটতেই পারে। তাকে গুরুত্ব দেওয়ার কী আছে? প্রতিটি সরকারের এমন মানসিকতার জন্যই আজ বাংলাদেশে হিন্দু তথা সংখ্যালঘুরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন।”
সিলেটের সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত শাল্লা উপজেলার ছেলে অনীকের কথায়, বছরের পর বছর এভাবেই চলে এসেছে। সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করা হয়েছে। হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়েছে। বৌদ্ধ তীর্থস্থানে ভাঙচুর করা হয়েছে। তার পরও কোনও সরকারই এর বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনাগুলো বাড়তে বাড়তেই আজ পরিস্থিতির এই বাড়বাড়ন্ত। এভাবে চলতে চলতেই দেশে বেড়েছে লুঠপাট। আর এখানেই অনীকের দাবি, তাঁরা যদি ক্ষমতায় আসেন, সবার আগে দেশের সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করবেন।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে কাজ করছে তাতেও যে তাঁরা খুব একটা খুশি নন, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন অনীক। জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়কের দাবি, দেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর জন্য একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া আছে। এই ক্ষমতা অবিলম্বে হ্রাস করতে হবে। আর তা না হলে, যিনিই ক্ষমতায় বসবেন, তিনিই কালে কালে স্বৈরশাসকের ভূমিকায় উঠে আসবেন।
পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙা হয়েছে, বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে– তার জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকেই ফের একবার আঙুল তুলেছেন অনীক। তাঁর দাবি, মুক্তিযুদ্ধ বা শেখ মুজিব সম্পর্কে প্রতিটি বাংলাদেশবাসীর একটা ভয়ংকর আবেগ-ভালোবাসা রয়েছে। এটা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু, মুজিবকে সামনে রেখে, বছরের পর বছর শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা চরম অত্যাচার চালিয়েছিলেন। আসলে তাঁরা মুজিবের নাম ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্মটাকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মূর্তি-বাড়ি ভাঙার মতো অনৈতিক কাজ আসলে সেই সব ক্ষোভ-রাগের বহিঃপ্রকাশ– এমনই দাবি অনীকের।
আগামী নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি যে পূর্ণ ক্ষমতায় লড়াই করবে তাও স্পষ্ট করেছেন নতুন দলের হিন্দু নেতা। তাঁর কথায়, “আমরা একটা রাজনৈতিক দল হিসাবেই লড়াই করব। মানুষ যদি গণতান্ত্রিকভাবে আমাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হবে সকল মানুষের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গঠন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। আর যদি ভোটে পরাজিত হই, তা হলে গঠনশীল বিরোধী হিসাবেই দায়িত্ব পালন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.