Advertisement
Advertisement
Bangladesh

মুজিব-গৃহের ধ্বংসস্তূপও আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা ‘নতুন’ বাংলাদেশে

হিংসার আগুনে পুরোপুরি ছারখার হয়ে গিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য বাড়িটা।

The current situation of Bangladesh
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:April 17, 2025 5:31 pm
  • Updated:April 17, 2025 5:31 pm  

শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী, ধানমন্ডি: বুধবার ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে দশটা। গাড়িটা সবে ধানমন্ডির রাস্তাটায় ঢুকেছে। গোটা কয়েক পুলিশ এসে রাস্তা আটকালেন। কঠোর চোখে তাদের প্রশ্ন, “এখানে কী চাই?” নিজের পরিচয় দিতেই ওপ্রান্ত থেকে প্রতিক্রিয়া এল, “কোনও খবর করা যাবে না। এখনই এলাকা ছেড়ে চলে যান।” কলকাতা থেকে আসা একটা নাছোড়বান্দা সাংবাদিকের পরের প্রশ্ন ছিল, “একটিবার গেলে কী হবে? কোনও অন্যায় কাজ তো করতে যাচ্ছি না। বর্তমান পরিস্থিতির ছবি তুলতে যাচ্ছি। খবর করতে যাচ্ছি। এটাই তো আমাদের পেশা।” আমার সঙ্গে থাকা, এক বাংলাদেশি চিত্রসাংবাদিক রীতিমতো আতঙ্কিত। কোনও কথা শুনবেন না তাঁরা। স্পষ্ট হুমকি তাঁদের, “বেশি কথা বাড়ালে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

বাধ্য হয়েই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এক শীর্ষকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। পুরো বিষয়টা তাঁকে জানালাম। তারপরও মিনিট কুড়ি অপেক্ষা। অবশেষে অনুমতি মিলল। চারপাশে ঘিরে থাকা বড় মোটা লোহার ব্যারিকেড সরিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। আমাদের সঙ্গেই এগিয়ে চললেন সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থাকা বেশ কিছু মানুষ! প্রায় মাস দু’য়েক কেটে গিয়েছে। সন্দেহ কিন্তু বেড়েই চলেছে। এখনও ভেঙে দেওয়া ইট-লোহা পুরোপুরি সরানো যায়নি। গোটা এলাকা ঘিরে রয়েছে সেনাবাহিনী। কেউ পোশাকে। কেউ সাদা পোশাকে।

Advertisement

বিরাট-বিরাট লোহার ব্যারিকেড ঘিরে রেখেছে গোটা এলাকা। যা উর্দিধারীদের অনুমতি ছাড়া পেরনো যাবে না। হ্যাঁ, এটাই আজকের ৩২ নম্বর ধানমন্ডি এলাকার ছবি। বছরখানেক আগেও এই বাড়িটি ছিল দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অন্যতম সেরা ঠিকানা। ঢাকায় এলে একটিবার সেখানে তাদের যেতেই হত। বাঙালির মুক্তিযোদ্ধা শেখ মুজিবুর রহমানের এই বাড়িটির কোনায় কোনায় ছড়িয়ে ছিল হাজারো ইতিহাস। আজ সে সবই অতীত। এখন চারিদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। গুটিকয়েক মানুষ আসছেন। কৌতূহলের সঙ্গে ছবি তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, কয়েকশো মানুষের চোখের নজরদারিতে মুহূর্তে তাদের সেই জায়গা ছাড়তে হচ্ছে। বাড়িটার যতটুকু কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার অনেক জায়গাতেই হাসিনা বিরোধী স্লোগান লেখা। লেখা রয়েছে ‘স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক’।

প্রায় ভেঙে যাওয়া সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করলাম। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে ইট-লোহা-কাচের টুকরো। বেশি দূর এগোতে পারলাম না। তার আগেই একটু দূর থেকে নির্দেশ এল, “অনেক হয়েছে, এবার আসুন।” ততক্ষণে সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি চিত্র সাংবাদিক বন্ধুটি বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছেন। কিছু ভিডিও করার ইচ্ছা ছিল। তার আগেই ক্যামেরা আটকালেন উর্দিধারীরা। তাঁরা জানালেন, ১৫ মিনিটের জন্য ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সময় হয়ে গিয়েছে। হিংসার আগুনে পুরোপুরি ছারখার হয়ে গিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য বাড়িটা।

এমন পরিণতি কি প্রাপ্য ছিল?
এ প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অনীক রায়ের দাবি, এইসবই হাসিনার অত্যাচারের পরিণতি। শেখ মুজিবুরের নাম করে বছরের পর বছর অত্যাচার চালিয়েছেন হাসিনা। জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা না বলার অপরাধী, হাজার হাজার মানুষকে জেলবন্দি করেছেন। গুমঘরে নিক্ষেপ করেছেন। বছরের পর বছর মুজিবের নাম করে অত্যাচার চালিয়েছেন হাসিনা। এই সবই তার পরিণতি। কিন্তু কারণ যাই হোক, দিনের শেষে দেশের একটা ইতিহাস যেন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। অনেকটা দুঃখের সঙ্গে কথাগুলো বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্রী রবীনা-মাধবীরা। এক সময় তাঁরাও ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা। কিন্তু এভাবে ইতিহাস ধ্বংসকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement