চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: জোর করে খনিগর্ভে কাজ করতে পাঠানোর মৌখিক নির্দেশ পেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিলেন এক খনি শ্রমিক। জেকে নগর কোলিয়ারি চত্বরেই একহাতে পেট্রোলের জার আর অন্যহাতে দেশলাই নিয়ে রীতিমতো আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অন্য শ্রমিকরা ছুটে গিয়ে তাঁর হাত থেকে পেট্রোল, দেশলাই কেড়ে নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ঘটনায় রানিগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
রাজু সিং ইসিএলের সাতগ্রাম এরিয়ার জেকে নগর কোলিয়ারির জেনারেল মজুর। তাঁর দাবি, গত এক বছর ধরে তিনি অসুস্থ। ইসিএল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়েছেন। তারপরও তাঁকে খনিগর্ভে কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আমি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে খনির উপরেই কাজ করছিলাম। হঠাৎ আমাকে খনিগর্ভে কাজ দিতে চাইছে। যখন কাজ করতেই পারব না, তখন বেঁচে থেকে লাভ কি!” ঘটনায় কোলিয়ারির ম্যানেজার ধর্মেন্দ্র কুমার সিং বলেন, “রাজু সিং মিথ্যা অভিযোগ করছেন। ওঁর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ রয়েছে। কাজে অত্যধিক ফাঁকির জন্য মৌখিকভাবে বদলির কথা বলা হয়েছিল। তারপরেই খনি চত্বরে নাটক করে সে।”
এদিকে, পাঁচদিন পর আকনবাগান গ্রামে ফিরল কালীচরণ কিসকু, বিনয় মূর্মূদের দেহ। স্বজন হারানো কান্নায় ভারি হল আকনবাগান গ্রাম। এদিন হেঁশেলে ভাত চাপলো না কোনও ঘরে। ১৬ বছরের কালীচরণের মা রমণী কিস্কু একচিলতে মাটির বাড়িতে বুক চাপড়াচ্ছেন। বিলাপ করছেন ছেলেটা বলল, ‘গাঁয়ের মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছি। কী করতে যে ওই খাদানে নামল।’ বিনয়ের মৃত্যুর পর বারে বারে মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী প্রতিমা মুর্মু। ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়ে রবীন, শুকদেব আর শিবানীকে নিয়ে সাজানো সংসার ছিল বিনয়-প্রতিমার। এ দিনের ঘটনার পরে প্রতিমার গলায় ভবিষ্যতের জন্য সংশয়, কী ভাবে চালাবেন সংসার! পেশায় গাড়ির চালক সন্তোষের স্ত্রী সুরবতা দেড় বছরের মেয়ে লক্ষ্মীকে আঁকড়ে ধরে স্থবির হয়ে বাড়ির এককোণে। ঢুকরে কেঁদে উঠছেন সন্তোষের বৃদ্ধা মা সাধমণি মারান্ডি।
শুক্রবার বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় যাওয়া মাত্রই গ্রামবাসীদের আর্জি, ‘পরিবার গুলির জন্য কিছু করুন স্যার।’ তিনি আশ্বাস দেন পাশে থাকার। বিধায়ক বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি ওরা কয়লা কাটতেই গিয়েছিল। কিন্তু কয়লা চুরি করে বিক্রি করতে নয়। বাড়ির জ্বালানির জন্য। ওরা খুব গরীব। কী করা যায় দেখছি। ওই এলাকাগুলি বিষাক্ত উপত্যকা হয়ে আছে। আমি যেতে ওদের নিষেধ করেছি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.