বাবুল হক, মালদহ: কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও। যা দেখে শিউরে উঠেছে মালদহের কালিয়াচক। মোবাইলে বাবার হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখে আতঙ্কে কাঠ মেয়ে হাবিবা খাতুন। স্বামীর বীভৎস হত্যাকাণ্ড নজরে আসতেই জ্ঞান হারাচ্ছেন হতভাগ্য স্ত্রী গুলবাহার বিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজস্থানের এই ঘটনায় টুইটারে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
[‘লাভ জেহাদ’-এর বলি মালদার যুবক, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার ভিডিও ভাইরাল]
কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য! আঁতকে উঠেছেন গ্রামবাসীরাও। শুধু সৈয়দপুর নয়, পাশের জালুয়াবাথাল, বিবিগ্রাম, মাকলপুর, জালালপুর, যদুপুর তথা গোটা কালিয়াচক থানা এলাকাজুড়েই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে একটাই চর্চা। রাজস্থানে কেন জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হল শ্রমিকের কাজ করতে যাওয়া সৈয়দপুরের আফরাজুল খানকে? কান্নায় ভেঙে পড়া নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী হাবিবার মুখেও ঘুরে ফিরে সেই একই প্রশ্ন, ‘‘কেন মারল আমার বাবাকে? মোবাইলে ছবি দেখলাম, একটা লোক বাবাকে কুপিয়ে খুন করছে। বাবাকে পুড়িয়ে শেষ করে দিল! আমি সেই লোকটার ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।”
[পণের দাবিতে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, কাঠগড়ায় পুলিশ আধিকারিক]
মালদহের কালিয়াচক থানার দিনমজুর অধ্যুষিত গ্রাম সৈয়দপুর। এই গ্রামের অন্যান্য শ্রমিকদের মতোই পঞ্চাশোর্ধ আফরাজুল খানও ভিনরাজ্যে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করতেন। মহরম উৎসবের পর দু’মাস আগে তিনি কাজের সন্ধানে রাজস্থানে গিয়েছিলেন। রাজসামন্দ জেলার কাঁকরোলি ঝালচাক্কিচক এলাকায় তিনি থাকতেন। আফরাজুলের বাড়িতে স্ত্রী গুলবাহার বিবি ছাড়াও রয়েছে ছোট মেয়ে হাবিবা। সে জালালপুর হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। আফরাজুলের বাকি দুই মেয়ে বিবাহিত। বুধবার সন্ধ্যায় সৈয়দপুরে খবর আসে ‘আফরাজুল আর নেই!’ এরপরই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে পরিবার। নিহত শ্রমিকের ছোট মেয়ে হাবিবা খাতুনের কথায়, “মঙ্গলবার আমি বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। বুধবার কথা বলা হয়নি। আমি কি আর জীবনে বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারব না?” কেনই বা মালদহের কালিয়াচকের শ্রমিক আফরাজুল খানকে রাজস্থানে নৃশংসভাবে জ্যান্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোটা সৈয়দপুর।
তবে রাজস্থান থেকে যে সব অভিযোগের কথা প্রচার হয়েছে, তা মানতেই পারছে না নিহত আফরাজুলের গ্রাম। তিনি নাকি ভিনধর্মে বিয়ে করে ফেলেছিলেন রাজস্থানে। পরিবার ও গ্রামবাসীরা এমন অভিযোগ শুনে রীতিমতো অবাক। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, “আফরাজুলের বয়স প্রায় পঞ্চাশ বছর। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। নাতি-নাতনিও রয়েছে। এই বয়সে তার বিয়ে অসম্ভব।” তবে ভিনধর্মে প্রেম বা ‘লাভ জেহাদ’-এর কারণেই খুন। ভিডিওতে বলতে শোনা গিয়েছে অভিযুক্তকে।
[ফুলশয্যার রাতে নববধূর রহস্যমৃত্যু, জা-স্বামীর অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ]
ভিডিওয় দেখা যায়, ঠিকা শ্রমিক আফরাজুলকে প্রথমে তাড়া করে শম্ভুলাল। তারপর তাঁকে গাঁইতি দিয়ে কোপায় সে। প্রাণভিক্ষা করেও কোনও লাভ হয়নি আফরাজুলের। একসময়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন তিনি। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে মাটিতে ফেলে রেখে শম্ভু ভিডিওয় হুমকি দেয়, লাভ জেহাদের পরিণাম এমনই হবে। হুঁশিয়ারি দেয়, কথা না শুনলে এইভাবেই খুন করা হবে। এরপরই আফরাজুলের শরীরে অগ্নিসংযোগ করে শম্ভু। রাজস্থান পুলিশ জানিয়েছে, আফরাজুলকে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে শম্ভু। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল, খুন করা। ভিডিওয় এক তরুণীর উপস্থিতি জল্পনা বাড়িয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, অভিযুক্তর বোন বা কোনও আত্মীয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল নিহতর। তাই আক্রোশের বশে এই খুনের ঘটনা। কালিয়াচকের সৈয়দপুর চায় না এভাবে সংবাদ শিরোনামে আসতে। তরতাজা আফরাজুলের খুনের ঘটনায় ফুঁসছে গোটা গ্রাম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.