মণিরুল ইসলাম, হাওড়া: অমিতাভ বচ্চনের ডাই-হার্ট ফ্যান ছিলেন হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের পাতিহালের শেখ রাজু। অমিতাভের ছবির গানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ অনুরাগ। আশক্তি ছিল অমিতাভের নাচের প্রতিও। শাহেনশার স্টাইলের প্যান্ট পরতে ভালোবাসতেন তিনি। আর মৃত্যুও হল ‘ম্যায় হুঁ ডন’ ছবির গানে নাচতে নাচতে। মৃত্যুর মুহূর্তেও গাইছিলেন ‘ম্যায় হুঁ ডন’। অমিতাভ ভক্ত শেখ রাজুর (৪৯) এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে হতবাক গোটা পাতিহাল গ্রাম।
গত বুধবার ছিল রাজুর ভাগনির বিয়ে। সেই উপলক্ষ্যে বাড়িতে বাজছিল বক্স। বাজছিল ডন ছবির গান ‘ম্যায় হুঁ ডন’। গানের তালে তালে নাচছিলেন রাজু। রাত তখন ১২টার বেশি। দর্শকও জনা পঞ্চাশেক। নাচতে নাচতে কয়েক মুহূর্ত থমকে দাঁড়ানো। তারপরেই রাজু ঢলে পড়েন মাটিতে। তখনও তিনি গেয়ে চলেছেন ‘ম্যায় হুঁ ডন’। রাজুকে পড়ে যেতে দেখে ছুটে আসেন দর্শকরা। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বুধবার ধর্মীয় রীতি মনে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
রাজুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই তাঁর শখ ছিল গান আর নাচ। রাজু প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ না নিয়েও ভাল নাচতে পারতেন, গাইতেনও। রাজু এতটাই ভাল নাচতেন যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচগানের জন্য তাঁর ডাক পড়ত। তিনি সেখানে নাচগান করে মনোরঞ্জনও করতেন লোকেদের। তবে প্রিয় ছিল বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। ছোটবেলা থেকেই নানা ক্ষেত্রে অমিতাভ বচ্চনকেই নকল করতেন। কিন্তু অমিতাভের ছবির গানের তালে তালে নাচতে নাচতেই যে তাঁর মৃত্যু হবে তা ভাবতে পারছেন না রাজুর ভাই শেখ মুস্তাকিনও।
রাজু পেশায় গাড়ি চালক। তিনি এক ব্যক্তির টাটা সুমো চালাতেন ভাড়ায়। পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী ও চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সকলেরই বয়স অল্প। সংসারে অভাব ছিল। তাই নেচেগেয়ে কিছু রোজগারও হত রাজুর। তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবার কার্যত সমস্যায় পড়ল। মুস্তাকিন বলেন, “পরিবারে উপার্জনক্ষম বলতে দাদা একাই ছিলেন। ভাইপোরা সবে কাজ শিখতে শুরু করেছে। তারা সেভাবে উপার্জন করতে পারে না। জানি না কীভাবে সংসার চলবে।” পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পাতিহাল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান কল্যাণ রায়চৌধুরি। তিনি বলেন, “আমরা ওর মৃত্যুতে শোকাহত। আমরা ওর পাশে রয়েছি। দলমত নির্বিশেষে অন্য সকলকে রাজুর পরিবারের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.