গৌতম ব্রহ্ম: একটানা ৩০৬৩ সেকেন্ড শঙ্খ বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন বিহারের বেগুসরাইয়ের শম্ভু কুমার। সেই রেকর্ড এবার ভাঙার মুখে। টানা ৪০২৪ সেকেন্ড শঙ্খ বাজিয়ে নয়া রেকর্ড গড়লেন এক বঙ্গসন্তান। রেকর্ড বুকে জায়গা পাওয়ার অপেক্ষায় এখন প্রহর গুনছেন বাঁকুড়ার হাঁড়িভাঙা গ্রামের বাসিন্দা অসীম মাজি।
প্রায় এগারো বছর ধরে শঙ্খ বাজাচ্ছেন অসীম। বাড়িতে থাকলে এখনও সন্ধেয় তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালানোর সময় শাঁখ বাজান এই হবু ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। জানালেন, “আমাদের বাড়িতে কোনও শাঁখ ছিল না। দাদা সুষেণ মাজি একবার দিঘায় গিয়ে একটি শাঁখ কিনে নিয়ে আসেন। তারপর থেকেই আমি শাঁখ বাজিয়ে পুজোর সময় মাকে সঙ্গত করতাম। শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতা হলেই অংশ নিতাম। প্রথম হতাম।”
অসীম নাম দেওয়া মানেই প্রথম পুরস্কার সকলের হাতছাড়া। এখানেই বাধে বিপত্তি। একটি প্রতিযোগিতা থেকে অন্যায়ভাবে অসীমকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই জেদ চেপে যায়। অসীম জানান, “রাজামেলা গ্রামে আমার মামাবাড়ি। সেখানেই প্রতিযোগিতা হয়েছিল। আমি অনেকক্ষণ শাঁখ বাজিয়ে ফেলেছিলাম। বিচারকরা তাই দেখে অবাক হয়ে যান। ভাবেন, আমি কোনওভাবে ‘চিটিং’ করছি। তারপরই আমায় মঞ্চ থেকে অপমান করে নামিয়ে দেওয়া হয়।” সেদিনই বাবা-মায়ের পা ছুঁয়ে শপথ নেন অসীম যে শঙ্খ বাজিয়ে একদিন বিশ্বরেকর্ড গড়বেন। শুরু হয় সাধনা।
কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবাসে শাঁখ বাজাতে দেওয়া হয় না অসীমকে। বাধ্য হয়েই কলেজ থেকে এক কিমি দূরে মলানদিঘি স্মার্ট হোমের মাঠে গিয়ে রিহার্সাল করতে হয়। তবে তাঁকে সর্বক্ষণ উৎসাহ জোগাচ্ছেন মা সুভদ্রা মাজি ও বাবা ভৈরব মাজি। অসীমের আক্ষেপ, “বাইরের কেউ সহযোগিতা করছেন না। শঙ্খধ্বনিতে দেখছি অনেকেরই এলার্জি। বাধ্য হয়েই মাঠে গিয়ে সপ্তাহে একদিন মহড়া দিই।” তাতেই বাজিমাত। অসীম বছরখানেক আগে একটানা ১ ঘণ্টা ৭ মিনিট ৪ সেকেন্ড শঙ্খ বাজান। বলেন, “বাবা-মাকে সামনে রেখে এই বিশ্বরেকর্ড গড়ি। এবার এই রেকর্ড নথিভুক্ত করার পালা।” প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১০ জুলাই ৩০৬৩ সেকেন্ড শঙ্খ বাজিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন শম্ভু কুমার। তাঁর বর্তমান বয়স ৩৪ বছর। অসীম সবে একুশ। ইতিমধ্যেই ৪০২৪ সেকেন্ডের রেকর্ড তাঁর পকেটে। এখন দেখার, তা কবে মলাটবন্দি হয়।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.