টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: প্রেমিকাকে খুন করে সিমেন্টের বেদির নিচে দেহ লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মঙ্গলবারই প্রেমিক উদয়নকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। বুধবার বাঁকুড়ার (Bankura) ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুরেশ বিশ্বকর্মা তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে সাজা শোনাল। হইচই ফেলা সেই ঘটনায় দোষী শাস্তি পাওয়ায় খুশি নিহত তরুণী আকাঙ্ক্ষা শর্মার পরিজনেরা।
বাঁকুড়ার রবীন্দ্রসরণির বাসিন্দা ছিলেন ব্যাংক আধিকারিকের মেয়ে আকাঙ্ক্ষা। ২০১৬-র ২৩ জুন ইউনিসেফের কাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। বাড়িতে প্রেমিকের দেওয়া ভুয়ো নিয়োগপত্র দেখিয়েছিলেন তরুণী। এরপর ১৫ জুলাই ভোপালের সাকেতনগরে প্রেমিক উদয়নের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখানে যাওয়ার পর প্রেমিকের সঙ্গে বচসা বাঁধে। কথা কাটাকাটির মাঝে প্রেমিকাকে গলা টিপে খুন করে উদয়ন। তারপর বাড়িতে থাকা লোহার টিনের বাক্সে সে প্রেমিকার দেহ ঢুকিয়ে দেয়। উপরে সিমেন্টের বেদি বানিয়ে দেয়।
[আরও পড়ুন: শক্তি বাড়াচ্ছে নিম্নচাপ, ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দক্ষিণবঙ্গের ৪ জেলা ও উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে]
প্রেমিকাকে খুনের পর তার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে থাকে উদয়ন। ওই নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায় প্রেমিকার বাড়িতে। জানিয়ে দেয় সে আমেরিকা পৌঁছে গিয়েছে। আকাঙ্ক্ষা হোয়াটসঅ্যাপ করলেও বাড়ির কারও ফোন ধরেনি। তাই চিন্তায় পড়ে যান তাঁর বাবা-মা। বাঁকুড়া সদর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পুলিশ আকাঙ্ক্ষার মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে। টাওয়ার লোকেশনের সূত্র ধরে জানা যায় তিনি ভোপালের সাকেতনগরে রয়েছে। আক্ষাঙ্ক্ষার বাবা ও ভাই সেখানে যান। তবে কারও দেখা পাননি তাঁরা। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি উদয়নের বিরুদ্ধে আকাঙ্ক্ষাকে অপহরণের মামলা করা হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ভোপালে গিয়ে বাঁকুড়া পুলিশ উদয়নকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার হয় আকাঙ্ক্ষার দেহাবশেষ।
জেরা করে নানা তথ্য সামনে আসার পর অবাক হয়ে যান পুলিশকর্মী। তাঁরা জানতে পারেন, উদয়ন তার বাবা বীরেন্দ্রকুমার দাস ও মা ইন্দ্রাণী দাসকেও ২০১০ সালে খুন করে। তারপর ছত্তিশগড়ের রায়পুরের বাড়ির বাগানে পুঁতে দেয় দেহ। জেরায় বেরনো তথ্য খতিয়ে দেখার পর ৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের কঙ্কালও উদ্ধার হয়। বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ আকাঙ্ক্ষা খুনের চার্জশিট তিন মাসের মাথায় দাখিল করে। শুরু হয় বিচার। সওয়াল জবাবের পর মঙ্গলবারই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বুধবার যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক।