ফাইল ফটো
নিজস্ব সংবাদদাতা, খড়গপুর: হাসপাতালের বিল বাকি ছিল এক লক্ষ আশি হাজার টাকা৷ এই বকেয়া বিল মেটাতে না পারায় হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা এক যুবককে বাড়ি ফেরাতে পারেনি পরিবার ও বন্ধুরা৷ ফলে তাঁরা সবাই অথৈ জলে পড়েছিলেন৷ কী করবেন ভেবে কোনও কূলকিনারা করতে পারছিলেন না৷ বিষয়টি জানতে পেরে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী৷ তিনি তৎক্ষণাৎ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পঞ্চাশ হাজার টাকা মকুব করার ব্যবস্থা করে দেন৷ আর নগদ এক লক্ষ টাকা দিয়ে ওই যুবকের পরিবারের পাশে দাঁড়ান৷ মঙ্গলবার সকালে কাঁথিতে গিয়ে যুবকের বন্ধুরা শুভেন্দুর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে আসেন৷ তারপর সেই টাকা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়ানোর জন্য যুবকের বন্ধুরা ও পরিবারের লোকেরা কলকাতায় যান৷ সুস্থ হয়ে ওঠা যুবককে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন৷ আর পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর এই সাহায্য পেয়ে রীতিমতো আপ্লুত খড়গপুর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুরুদ্বার রোড এলাকার প্রজাপতি পরিবার৷ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর এই ভূমিকাকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন খড়গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার৷
গত ছয় ডিসেম্বর দুপুরে খড়গপুর শহরের বড়বাতি এলাকায় একটি পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হয়েছিলেন গুরুদ্বার রোড এলাকার যুবক অঙ্কিত প্রজাপতি৷ মোটরবাইক চালিয়ে তিনি গিরি ময়দানের দিকে যাচ্ছিলেন৷ তখন হঠাৎ একটি পিকআপ ভ্যান মোটরবাইকটিকে ধাক্কা মারে৷ ঘটনায় গুরুতর জখম হন বাইক চালক ওই যুবক৷ অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ওই যুবক বিভিন্ন দোকানে মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম সরবরাহ করে সামান্য টাকা রোজগার করেন৷ ঘটনার পরে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ যুবককে সুস্থ করে তোলার জন্য মোট খরচ হয়েছে ৮ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা৷ চিকিৎসার খরচের জন্য শহরের বিভিন্ন মোবাইল ফোনের দোকানদাররা প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে দেন৷ এছাড়াও অন্যান্য বন্ধুরা আরও কিছু খরচা দেন৷ কিন্তু তারপরও হাসপাতালে চিকিৎসা বাবদ খরচ মেটানোর জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে এক লক্ষ আশি হাজার টাকা৷ এই বকেয়া টাকার মধ্যে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী দেড় লক্ষ টাকার সাহায্য করে দেন৷ বাকিটা মঙ্গলবার বন্ধুরা জোগাড় করে নেন৷ বিপদের সময় রাজ্যের এক মন্ত্রীর কাছ থেকে এই ধরনের সাহায্য পেয়ে অভিভূত যুবকের পরিবার ও বন্ধুরা৷
জখম যুবকের এক খুড়তুতো ভাই দীপক প্রজাপতি বলেন, “বিষয়টি জানার পর যেভাবে মন্ত্রী শুভেন্দুবাবু সাহায্য করলেন সে ঋণ কোনও দিন শোধ করা যাবে না৷ আমরা তাঁর এই সাহায্য কোনও দিন ভুলতে পারব না। এই টাকাটি না পেলে দাদাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনতে খুবই সমস্যা হত৷ ওঁকে অনেক ধন্যবাদ।” আর খড়গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার জানিয়েছেন, “তিনি প্রথম থেকেই এই পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন৷ সোমবার তিনি জানতে পারেন প্রায় দুই লক্ষ টাকা বিল মেটাতে না পারার জন্য অঙ্কিতকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনা যাচ্ছে না৷ তিনি তখন দ্রুত রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ পুরো বিষয়টি খুলে বলেন৷ সব শুনে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন বকেয়া বিল থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ছেড়ে দিতে৷ মন্ত্রীর সেই অনুরোধে কাজ হয়৷ এছাড়াও তিনি মঙ্গলবার সকালে যুবকের বন্ধুদের ডেকে নগদ এক লক্ষ টাকা তুলে দেন সাহায্য বাবদ৷” পুরপ্রধান আরও বলেন, “শুভেন্দুবাবুর এই সাহায্য একটি গরিব পরিবারকে রক্ষা করে দিল৷ খড়গপুর শহরের কোনও দায়িত্বে না থেকেও তিনি যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে পুরসভা কৃতজ্ঞ৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.