Advertisement
Advertisement

Breaking News

পনেরো বছর পর ধর্ষণের কলঙ্ক থেকে মুক্ত যুবক

বিচার বিলম্বের জন্য বিচলিত বিচারপতি।

Calcutta HC frees man of rape accuse
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:November 2, 2018 1:42 pm
  • Updated:November 2, 2018 1:42 pm

শুভঙ্কর বসু: পনেরো বছর পর অবশেষে ঘুচল ধর্ষণের কলঙ্ক। যার অর্ধেকেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে কারাপ্রাচীরের অন্তরালে। জামিন মেলেনি একবারও। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে টানা সাত-সাতটি বছর।

তবু ধর্ষক হিসাবে বেঁচে থাকাটা যে বড় কঠিন। তাই শুধু কলঙ্কমুক্তির তৃপ্তি এখন কামাল শেখের চোখেমুখে। মালদহের মানিকচকের বাসিন্দা কালামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের পর কালামকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল মালদহের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। সেটা ছিল ২০০৮। সেই নির্দেশের ১০ বছর পর কালামকে ধর্ষণের অপরাধ থেকে বেকসুর খালাস করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারে বিলম্বের জন্য এতগুলো বছর জেল খাটতে হলেও শেষমেশ যে অপরাধের কলঙ্ক মোছা গিয়েছে, তাতেই সান্ত্বনা খুঁজছেন কালাম।

Advertisement

[শহরে মাদক পাচারের নেপথ্যে ‘ডার্ক ওয়েব’, তদন্তে লালবাজার]

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত ২০০২ সালে। পাড়ার মেয়ে সোনিয়া খাতুনের (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন কালাম। ক্রমশ ভালবাসা নিবিড় হয়। দু’জনের মধে্য দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পারস্পরিক সম্মতিতে তাঁরা গোপনে একাধিকবার মিলিত হন। এক সময় সোনিয়া গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তারপরই ছবি বদলে যায়। যাবতীয় গোলযোগের শুরু ২০০৩-এর ২ জুলাই। অভিযোগ, সেদিন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ সোনিয়ার বাড়ি আসেন কালাম। প্রেমিকাকে ডাকাডাকিতে মা জেগে যান। তাঁর গলা শুনে কালাম পালিয়ে যান। কিন্তু মায়ের প্রশ্নের মুখে মেয়ে সব বৃত্তান্ত ফাঁস করে দেয়। পরদিন সকালে মা মেয়েকে নিয়ে কালামের বাড়ি ছোটেন। অভিযোগ, দু’জনের ভালবাসার কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন কালামের বাবা। সোনিয়ার মায়ের মুখের উপর তিনি জানিয়ে দেন তাঁর ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে হতে পারে না। কালাম তখন বাড়ি ছিলেন না।

পরে কালামের নামে মানিকচক থানায় ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাগাতার ধর্ষণের’ অভিযোগ দায়ের করে সোনিয়া। কালাম গ্রেপ্তার হন। মালদহ ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচারপর্ব শুরু হয়। এর মধ্যে একটি সন্তানের জন্ম দেয় সোনিয়া। সেই সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, জন্মদাতা কালামই। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় চার্জ গঠন হয়। ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২০০৮ সাল নাগাদ ধর্ষণের দায়ে কালামের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেয় মানিকচক আদালত। এরমধ্যে কালাম সোনিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আদালতে জানায়, সে মেয়েটিকে এখনও ভালবাসে। দু’জনের সম্মতিতেই যাবতীয় কিছু হয়েছে। বিয়েতে শুধুমাত্র তাঁর বাবার আপত্তি। সে রাজি। কিন্তু তাতে আদালতের রায় বদলায়নি।

[সনিকা মৃত্যু মামলায় স্বস্তিতে বিক্রম, আইনি প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ]

সময় নষ্ট না করে নিম্ন আদালতের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কালাম। তাতেও বিশেষ লাভ হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় কেটে গিয়েছে প্রায় ১০ বছর। সাজার মেয়াদ জেলে বসেই কেটেছে। অবশেষে সম্প্রতি কামালকে ‘ধর্ষক’-এর অপরাধ থেকে মুক্তি দিয়ে এক তাৎপর্যপূর্ণ রায়ে হাই কোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মন্থা জানিয়েছেন, দু’জনের মধে্য বাস্তবিক অর্থে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। ফলত দেড় বছর ধরে তাঁদের মধ্যে যে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে তাকে কখনওই ‘ধর্ষণ’ বলা যায় না। মেয়েটির সম্মতিতেই সবকিছু হয়েছে। বিবাহের প্রতিশ্রুতির কারণে নিজের ইচ্ছায় প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়াকে ধর্ষণ বলা যায় না। বিচারে বিলম্বের জন্য একজন নির্দোষকে যেভাবে এত বছর ধর্ষকের কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হয়েছে, তাতে আক্ষেপও শোনা গিয়েছে বিচারপতির কণ্ঠে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ