ধীমান রায়, কাটোয়া: মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে মহিলাদের। টাকার টোপে এই দলে নাম লেখাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহস্থবাড়ির মহিলারাও। বস্তুত দারিদ্রের কারণে অনেক সেই ফাঁদে পা-ও দিয়ে ফেলছে। কাটোয়া শহরে বিগত তিন চার মাসে মাদক পাচার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে বমাল ধরা পড়েছে বেশ কয়েকজন মহিলা। তাদের জেরা করে এই তথ্য হাতে এসেছে পুলিশের।
[বাংলাদেশে ডলার পাচার, পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার ১]
জানা গিয়েছে, মাদক পাচারে এখন পুরুষরা আড়ালে থেকে কাজে লাগিয়ে চলেছে বিভিন্ন বয়সী মহিলাদের। শুধু সংশ্লিষ্ট জেলায়, বা এক রাজ্যেই সীমাবদ্ধ নয় মহিলাদের পাঠানো হচ্ছে ভিন রাজ্যেও। ধৃতদের জেরা করে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলা মিলে মহিলাদের একটি বড়সড় চক্র মাদক পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত মে মাসে কাটোয়ায় ৭০০ গ্রাম হেরোইন-সহ সিআইডির জালে ধরা পড়ে দুই মহিলা পাচারকারী। ধৃতদের মধ্যে একজনের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা এলাকায়। অপরজন নদীয়া জেলার বেথুয়াডহরির বাসিন্দা। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর ও ইম্ফল থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকার হেরোইন নিয়ে কাটোয়ার গঙ্গা পেড়িয়ে মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে তারা কাটোয়া স্টেশনে নামে। তার আগেই গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাদের ধরে ফেলে সিআইডি।
জুন মাসে ১৭৮ কেজি গাঁজা-সহ পাঁচ মহিলাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে কাটোয়া থানার পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজনের বাড়ি কাটোয়ার বাঁধমুড়া গ্রামে। বাকি চারজনেই মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দা। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওদিন প্রায় ১৪-১৫ জনের একটি দল বিপুল পরিমাণ গাঁজা নিয়ে কাটোয়া ফেরিঘাট ধরে নদীয়া জেলা দিয়ে বাংলাদেশে পাচারের পরিকল্পনায় ছিল। তবে ১৫ জনের দলে ছিল মাত্র দু’জন পুরুষ। বাকি সকলেই মহিলা ছিল। বাকিরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে পাঁচজন।
পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে জানতে পারে ধৃত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের ওদিনই অপরাধে হাতেখড়ি হয়েছিল। তাদের জেরা করে জানা যায় দুই পরিচিত মহিলা তাদের রোজ ১০০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে মাদক পাচারে কাজে লাগিয়েছিল। তিনচারদিন আগে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে প্রথমে কলকাতা, সেখান থেকে অন্যরাজ্যে নিয়ে গিয়েছিল মাদক কারবারীরা। তারপর কাটোয়া হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার আগেই ধরা পড়ে যায় তারা। মহিলাদের দলটিকে ইশারায় গাইড করে আসছিল দুজন পুরুষ। পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা পালিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, চার মাস আগে কাটোয়ার কেশিয়ায় প্রায় ২৫ কেজি গাঁজা সহ এক মহিলা ধরা পড়েছিল। এভাবে কাটোয়া এলাকায় মাদক পাচারে ধরা পড়ল বেশ কয়েকজন মহিলা। ধৃতরা নিজেরাই স্বীকার করেছে মাদক কারবারীরা তাদের টাকার টোপ দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ব্যাগটি তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌছে দেওয়ার জন্য চুক্তি করে নিয়ে যায়। তার জন্য ১০০০-১৫০০ টাকা রোজমজুরি, যাতায়াত ও খাওয়াদাওয়ার খরচ দেয় মাদক কারবারীরা। আর অভাবী ঘরের মেয়েরা ওই টাকার লোভেই মাদক পাচারের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন অনেকেই। এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন পুলিশ কর্তারাও।
[সিন্ডিকেটের রাজত্ব চলছে বাংলায়, মেদিনীপুরে মমতাকে তোপ মোদির]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.