চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বাড়ির ঠিক করা বিয়েতে সায় ছিল না। প্রেম চলছিল অন্যজনের সঙ্গে। কিন্তু বাড়ির চাপে বিয়ে করতেই হয়েছিল। তাই পথের কাঁটা সরাতে প্রেমিকের সাহায্য নিয়ে স্বামীকে খুন করাল স্ত্রী। ঘটনায় দুই ভাড়াটে খুনি-সহ স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে বিহার পুলিশ। মৃতের নাম বিজয়কুমার সিং (৪৫)। তাঁর বাড়ি হীরাপুরে। স্ত্রী রাজনন্দিনী তার প্রেমিক গুলশনের সাহায্যে স্বামীকে খুন করিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে। মাত্র ছ’ মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। বউমা খুনে যুক্ত, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না বিজয়ের পরিবারের সদস্যরা। ঘটনায় হতবাক প্রতিবেশীরাও।
[ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাহাড়ে সিআইডির অভিযান, বাজেয়াপ্ত গুরুং দম্পতির সম্পত্তি ]
গত বৃহস্পতিবার বার্নপুর থেকে দেওঘরে বাবা বৈদ্যনাথের মাথায় জল ঢালতে রওনা হয়েছিলেন বিজয়কুমার। হীরাপুরের নবঘন্টির বাসিন্দা বিজয়কুমার প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে জল ঢালতে যান। বিহারের সুলতানগঞ্জে গঙ্গা থেকে জল নিয়ে হাঁটাপথে ১০৫ কিলোমিটার দূরে ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ ধামে জল ঢালার কথা ছিল তাঁর। এর মাঝেই দুষ্কৃতীরা খুন করে বিজয়কুমারকে। ঘটনার তদন্তে নেমে ধন্ধে পড়ে বাঁকা জেলার সুরাইয়া থানার কাটুরিয়া ফাঁড়ির পুলিশ। একজন পুণ্যার্থীকে কে খুন করতে পারে? খুনের উদ্দেশ্য কী?
তদন্তে নেমে দুই স্থানীয় সুপারি কিলারকে আটক করে পুলিশ। ধৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে বিজয়কুমারকে। গুলশন কুমারের কথায় তারা খুন করেছে। খুনের সময় তাদের সঙ্গে ছিল গুলশন। সুরাইয়া থানার এসডিপিও বিনোদকুমার গুপ্তা বলেন, “গুলশনের বাড়ি বিহারের মুঙ্গের জেলায়। রাজনন্দিনীর বাড়িও ওই একই এলাকায়। গুলশনের ফোনের কল লিস্ট বের করে দেখা যায় খুনের সময় গুলশনের ফোনে লাগাতার ফোন করেছে রাজনন্দিনী।” তারপরেই হীরাপুর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলা হয় বিজয়কুমারের খুনিদের ধরা হয়েছে। পরিবারের লোক যেন থানায় আসেন। মৃতের বাবা নগেন্দ্র সিং, ছোট ভাই অমিতকুমার সিং ও রাজনন্দিনী বাঁকা জেলায় যান। পুলিশ রাজনন্দিনী সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। রাজনন্দিনীর কললিস্ট বের করে দেখা হয়। দেখা যায়, ওই দিন স্বামী বিজয়কুমার ও প্রেমিক গুলশনের সঙ্গে দফায় দফায় ফোনে কথা হয়েছে তার। এরপরেই জেরায় ভেঙে পড়ে রাজনন্দিনী। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
[ রায়নার জাল সিমেন্ট কারখানার হদিশ, ধৃত দুই ]
মৃতের ভাই অমিত সিং বলেন, “দাদা-বউদি ৫ জুলাই আমেদাবাদ থেকে বার্নপুরে আসেন। আমেদাবাদেই কর্মসূত্রে থাকেতেন তাঁরা। শ্রাবণের পূর্ণিমার দিন দাদা জল ঢালতে রওনা হন। রবিবার বিকেলেও খবর আসে দাদা জিলিবি পাহাড় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কিন্তু ওই রাতেই সুরাইয়া থানার পুলিশ দাদার মৃত্যুর খবর দেয়।” জানা গিয়েছে, রাজনন্দিনীর প্রেমিক গুলশন জেসিবি অপারেটরের কাজ করে। বিয়ের পর থেকে বিজয়-রাজনন্দিনীর বনিবনা হচ্ছিল না। বিজয় আমেদাবাদ চলে যাওয়ার পর রাজনন্দিনীও মুঙ্গেরে বাপেরবাড়ি চলে যায়। সেখানেই গুলশনের সঙ্গে খুনের ছক কষে। জুলাই মাসেই শ্বশুর়বাড়িতে ফিরে আসে রাজনন্দিনী। তারপরেই খুন। ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হলেও গুলশন এখনও ফেরার।