Advertisement
Advertisement
পুরুলিয়া রাস্তা

রাস্তা নেই, প্রশাসনের ভরসায় না থেকে কোদাল হাতে নেমে পড়লেন ১০০ ‘দশরথ মাঝি’

বুধবার থেকে শুরু হয়েছে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর কাজ।

Frustrated with administration Purulia villagers construct road
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:October 17, 2019 2:29 pm
  • Updated:October 17, 2019 3:14 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন এক দশরথ মাঝির গল্প। তবে এই গল্পে দশরথ মাঝি একজন নন, অনেকে। আর গল্পটাও বিহারের নয়। এই বাংলার।

একটা রাস্তার জন্য থমকে গিয়েছে একটা আস্ত গ্রামের জীবন! আজ একবিংশ শতাব্দীতেও সেই রাস্তার মুখ দেখেনি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় রেঞ্জের আড়শা ব্লকের ধানচাটানি। তাই পাহাড়ি পথ ভেঙে আনতে হয় রেশন। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গেলে সাহায্য নিতে হয় খাটিয়ার। যে কাঠ সাপ্তাহিক হাটে বেচে দিন চলে সেই হাটও এই পথেই।

Advertisement

কিন্তু রাস্তা না থাকার ফল? ফি সপ্তাহে রেশন আসে না ঘরে। খাটিয়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অন্তঃস্বত্তার মৃত্যুর উদাহরণও রয়েছে। কাঠ বেচতে হাটে না যেতে পারায় হাঁড়ি চড়েনি, এমন উদাহরণও কম নেই। অনেক ঘরেই দিন কাটে অনাহারে। তবুও একটা রাস্তা হয়নি। তাই প্রশাসন তথা সরকারের ওপর আর ভরসা না করে গ্রামবাসীরা নিজেরাই কোদাল, গাঁইতি, শাবল, ঝুড়ি নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই পাহাড়ি পথকে রাস্তায় রূপ দেওয়ার কাজ শুরু করল। যেন গোটা গ্রামের উপর ভর করেছে দশরথ মাঝির আত্মা। আগাছা পরিষ্কার করে, পাথরের চাটান ভেঙে, গাডোয়াল তৈরি করে জীবন বাঁচাতে রাস্তা তৈরি করছে ধানচাটানি।

Advertisement

purulia-road

[ আরও পড়ুন: সন্তান খুনে গ্রেপ্তার বাবা, সৎকার থামিয়ে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠাল পুলিশ ]

বুধবার সকাল ন’টা থেকে এই কাজ শুরু করেছে গ্রামের প্রায় একশ জন বাসিন্দা। তারপর ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে আবার দু’টো থেকে রাস্তা তৈরিতে শ্রম দেওয়া। ধানচাটানি–নালাকোচা ১০ কিমি পাহাড়ি পথকে রাস্তায় রূপ দিতে এই রুটিনেই তাদের এই স্বেচ্ছাশ্রম চলবে। কারণ এই পথ দিয়েই যে সিন্দুরপুরের রেশন দোকান। যার দূরত্ব ১৩ কিমি। এই পথেই রয়েছে রাজপুতি গ্রামীণ হাসপাতাল, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। ১৩ কিমি দূরে কান্টাডি সাপ্তাহিক হাট, ব্যাংক এই পাহাড়ি পথ ভেঙেই যেতে হয়। এই পথেই পড়ে ১৫ কিমি দূরে মুদালি হাইস্কুল ও ডাকঘর। ১৬ কিমি দূরে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতও যেতে হয় এই পথ ভেঙেই। তবুও একটা রাস্তা হয়নি।

রাজ্যে পালাবদলের পর বলরামপুরের খুনটাঁড় থেকে অযোধ্য হিলটপ যাওয়ার সময় হেদেলবেড়া পার হয়ে ডান দিকে ধানচাটানি পর্যন্ত একটা পাকা রাস্তা হয়েছে বটে। তবে তা স্রেফ মাও দমনে পুলিশের জন্য। ফলে অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় আড়শা ব্লকের চাটুহাসা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই ধানচাটানি আজও একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। তাই এখানে নিয়মিত আসেন না অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। সকলের হাতে নেই রেশন কার্ড। স্বাস্থ্য কেন্দ্র অনেকটা দূরে থাকায় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয় না গর্ভবতী মহিলাদের। বয়স্করা পান না পেনশন। ম্যালেরিয়া কবলিত বলে এই এলাকা খাতায়-কলমে চিহ্নিত থাকলেও স্বাস্থ্য দপ্তর কোনও পদক্ষেপই নেই না। এভাবেই জীবন চলে ধানচাটানির।

[ আরও পড়ুন: অবৈধ খনিতে উদ্ধারকাজে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত প্রশাসনের, নামল এনডিআরএফ ]

তবে সম্প্রতি পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার এই গ্রামে জনতার দরবার বসায়। সেখানেই এই গ্রাম ধানচাটানি-নালাকোচার রাস্তার কথা বলে। কিন্তু এই পাহাড়ি পথে যে বনদপ্তরের জমি রয়েছে। ফলে সেই হ্যাপা সামলে প্রশাসনের রাস্তা তৈরি বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই হিঙুটাঁড়-ধানচাটানি দশ কিমি রাস্তার জন্য ২ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার প্রকল্প ধরে জেলায় অনুমোদনে পাঠায় আড়শা ব্লক প্রশাসন। বিডিও অমিত গায়েন বলেন, “হিঙুটাঁড়–ধানচাটানি ছাড়াও ধানচাটানি–নালাকোচা রাস্তার জন্য আমাদের বনদপ্তরের সঙ্গে কথা চলছে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ