Advertisement
Advertisement

মর্গে বাবা, কনেকে লগ্নভ্রষ্টা হতে না দিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে শোকে বিহ্বল ছেলে

পিতৃহারা পাত্রের ব্যতিক্রমী বাস্তবিক সিদ্ধান্ত।

Groom decides to marry despite losing father
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 21, 2019 9:40 pm
  • Updated:February 21, 2019 9:40 pm

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বিবাহবাসরে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সানাই। থেমে গিয়েছিল কলকোলাহল, আনন্দমুখরতা। বিয়ের ঠিক আগের দিনই পাত্রের বাবা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। অশুভ ঘটনায় বাতিল হতে বসেছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। লগ্নভ্রষ্টা হয়ে যেতেন পাত্রী। কিন্তু তা হতে দিলেন না স্বয়ং পাত্রপক্ষই। সাময়িক শোক সামলে বিয়ের পিঁড়িতে এনে বসালেন সদ্য পিতৃহারা পাত্রকে। শোকের মধ্যেই সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে পাত্রীকে নিজের অর্ধাঙ্গিনী করে নিলেন আসানসোলের মিঠানির বাপি বাউড়ি।

মিঠানি গ্রামের লক্ষ্মীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় কালিপাহাড়ি কুমারডিহা এলাকার বাসিন্দা বাপি বাউড়ির। শিবডাহা কোলিয়ারির শ্রমিক নবীন বাউড়ির একমাত্র ছেলে বাপি। তিনি নিজে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বিয়ের প্রস্তুতি সব ঠিকঠাকই হয়ে গিয়েছিল। আত্মীয়স্বজনও ভিড় করেছিলেন দুই বাড়িতে। কিন্তু অঘটন ঘটে গেল বুধবার, গায়ে হলুদের সন্ধ্যায়।  গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরই খবর আসে, কালিপাহাড়ির স্টেশনের কাছে রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে নবীন বাউড়ির। আনন্দের আবহ এক নিমেষেই বদলে গেল। রেল পুলিশ নবীন বাউড়ির দেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠায়। সন্ধে হয়ে যাওয়ায় বুধবার আর ময়নাতদন্ত হয়নি। মর্গেই রাখা থাকে নবীনবাবুর দেহ। অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের আগে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে না।

Advertisement

[ইতিহাসে মাস্টার্স শহিদ জওয়ানের স্ত্রী, যোগ্য চাকরি দিতে চায় রাজ্য]

পরিবারের সদস্যরা তখনই সিদ্ধান্ত নেন, বুধবারই বিয়ে সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। কারণ, তারপর অশৌচ শুরু হবে। একটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। বিয়ে অনেকটা পিছিয়ে যাবে। হিন্দু মতে সৎকারের আগে অশৌচ হয় না। তাই তার আগে বাপিকে বিয়ের জন্য বোঝানো হয়। পরিস্থিতি বুঝে বিয়ে করতে সম্মত হন বাপিও। বাবার মৃতদেহ মর্গে রেখেই তিনি বন্ধু ও আত্মীয়,পরিজনদের সঙ্গে মিঠানি পৌঁছে যান বিয়ে করতে। রাতে কনের বাড়ির লোকজন এমন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না একেবারেই। কিন্তু খবর শুনে, পরিস্থিতি বুঝে এবং সর্বোপরি বাপির পরিবারের উদ্যোগ দেখে তড়িঘড়ি আয়োজন করা হয়। নির্দিষ্ট লগ্নের কিছুটা আগেই, পুরোহিতের পরামর্শমতো বিয়ে হয়। চোখে জল নিয়েই বাপি সিঁদুর পরিয়ে দেন লক্ষ্মীকে। বাজেনি শাঁখ, ছিল না উলুধ্বনিও। উপস্থিত সকলে নিস্তব্ধ থেকে শুধু শুভ পরিণয়ের সাক্ষী থেকেছেন। আর বিয়ের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছিল বাপির কান্নায়। তাড়াতাড়ি বিয়ে সেরে নববধূকে নিয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যান বাপি। সবটার সাক্ষী রইল আসানসোলের মিঠানি গ্রাম।

Advertisement

[জাল শংসাপত্রে নিয়োগ, সশ্রম কারাদণ্ড বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যের]

সিনেমায় দেখেছেন। গল্পে পড়েছেন। কিন্তু চোখে দেখেননি। কাউন্সিলর উত্তম বাউরি বলেন এমন ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। পাত্রর মামা রঞ্জিত বাউড়ি বলেন, ‘বিয়েটা না হলে দু’জনেরই অমঙ্গল হত। তাই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হল।’ পাত্রীর বাবা বৃন্দাবনবাবু অসুস্থ। তিনি সাময়িক শোক সামলে বলেন, ‘এযাত্রা মেয়েটা বেঁচে গেল। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোক অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। যা সচরাচর দেখা যায় না।’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ