সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যত দিন যাচ্ছে, রাজ্যে ততই যেন চেপে বসছে ‘নীল তিমি’র থাবা। পশ্চিম মেদিনীপুর, কলকাতার পর ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের সাম্প্রতিকতম শিকার বারাসত গার্লস স্কুলের একাদশ ও নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী। তাদের মধ্যে এক ছাত্রী আবার গেমের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়েও পৌঁছে গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত স্কুলের প্রধানশিক্ষিকার সচেতনতার কারণে রক্ষা পেল ওই দুই ছাত্রী। ওই শিক্ষিকাই খবর দেন বারাসত থানায়। বিধাননগর সাইবার সেল বিশেষজ্ঞ ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। রাজ্যে নীল তিমি’র মারণ প্রভাবে উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।
সূত্রের খবর, বুধবার রাতেই ওই দুই ছাত্রীর কাউন্সেলিং করেন বিধাননগর সাইবার সেলের বিশেষজ্ঞরা। ওই ছাত্রীদের মোবাইল ঘেঁটে মিলেছে ব্লু হোয়েল গেম সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি তথ্য। গত কয়েকদিন ধরেই দুই ছাত্রীর আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করেন তাদের অভিভাবকরা। সে কথা স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা জানান ছাত্রীদের অভিভাবকদের। রাজ্য প্রশাসন যে এই মারণ গেমের বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের সতর্ক থাকতে বলেছে, সেই বিষয়টি জানতেন বারাসত গার্লস স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি পুলিশ ও সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই ছাত্রীদের সম্পর্কে জানান। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানতে পেরেছেন, গত ১৫ দিন ধরে ওই দুই ছাত্রী ব্লু হোয়েল গেম খেলছিল। এক ছাত্রী অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। তার হাতে মিলেছে অস্বাভাবিক কাটা দাগ।
[এবার প্রাণ কাড়তে হাজির মারণ গেম ‘সল্ট অ্যান্ড আইস’]
ছাত্রীদের মোবাইল ঘেঁটে তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, এটা কি আদৌ ‘নীল তিমি’ হামলা নাকি কোনও অসাধু চক্র কোনওভাবে ওই ছাত্রীদের ক্ষতি করতে চাইছিল? তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রীদের গত কয়েকদিনের আচরণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ চাইছে জেলা পুলিশ। দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ইদানিং ওই দুই ছাত্রী পড়াশোনার চেয়ে বেশি মোবাইল ফোন ঘেঁটে সময় কাটাত। বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলত না সেভাবে। রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতো না। তবে ঠিক সময়ে কাউন্সেলিংয়ের পর আপাতত ওই দুই ছাত্রীই নিরাপদে রয়েছেন বলে জানতে পারা গিয়েছে। রাজ্যে ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের প্রভাব রুখতে তৎপর সিআইডি ও সাইবার ক্রাইম শাখার বিশেষজ্ঞরা।
Say No to Blue Whale Game pic.twitter.com/xqh7l974pM
— CID West Bengal (@CIDWestBengal) August 24, 2017
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন, এরকম মারণ খেলার হাত থেকে বাঁচাতে পড়ুয়াদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর রাশ টানতে হবে অভিভাবকদের। পাশাপাশি, স্কুল-কলেজে যেন ছেলেমেয়েরা মোবাইল ব্যবহার না করে, সেদিকে শিক্ষকদের বাড়তি নজর দেওয়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। শিক্ষকরাও যেন পড়ানোর সময় মোবাইলে কথা না বলেন, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। রাশিয়াতে জন্ম এই মারণ খেলা আসলে কোনও নির্দিষ্ট ‘গেম’ নয়। এটি একটি চ্যালেঞ্জ যা ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে খেলতে হয় প্রতিযোগীদের। একের পর এক ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপে আত্মহত্যা করতে হয় প্রতিযোগীকে। এদিনই ব্লু হোয়েল গেমের মূলচক্রী এক কিশোরীকে গ্রেপ্তার করেছে রুশ পুলিশ। ১৭ বছরের ওই কিশোরী নিজেও একসময় ব্লু হোয়েল গেম খেলত, কিন্তু শেষ ধাপে গিয়ে সে আত্মহত্যা না করে একটি গ্রুপের অ্যাডমিন হয়ে যায়।