Advertisement
Advertisement

Breaking News

মতুয়া

মতুয়াগড় হাতছাড়া মমতার, আত্মীয়াকে হারিয়ে বনগাঁয় জয়ী শান্তনু ঠাকুর

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের উপর ভরসা রেখেই মতুয়াদের মন জয় বিজেপির৷

Lokabha Election 2019: Mamata loses Motua base at Bongaon
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 23, 2019 10:07 pm
  • Updated:May 23, 2019 10:07 pm

নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: পদ্মবনে হাতছাড়া তৃণমূলের মতুয়া রাজনীতি৷ মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে ‘মমতা’র স্পর্শে আর উদ্বেলিত হল না৷ বরং নিজেদের সমর্থন জানাল গেরুয়া শিবিরের প্রতি৷ বনগাঁ থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হলেন ঠাকুরবাড়ির সদস্য শান্তনু ঠাকুর৷ হারালেন নিজের জেঠিমা তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুরকে৷ জয়ের ইঙ্গিত পেতেই ঠাকুরবাড়িতে শুরু হয়ে যায় উৎসব৷ আবির খেলা, মিষ্টি বিতরণ শুরু হয়৷

[আরও পড়ুন: কঠোর পরিশ্রমের ফল পেলেন মহুয়া, কঠিন ম্যাচে হার কল্যাণ চৌবের]

এই জয়কে বনগাঁর মানুষের জয় বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেন শান্তনু ঠাকুর৷ তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনরায় বলে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, উদ্বাস্তু সমস্যা-সহ বনগাঁর মানুষের নানা সমস্যার সমাধানই এখন তাঁর প্রথম এবং প্রধান কাজ৷এবারে বনগাঁর লড়াই ছিল নজরকাড়া৷ একই পরিবারের দুই সদস্য অবতীর্ণ হয়েছিলেন ভোট ময়দানে৷ তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং ঠাকুরবাড়ির ছোট ছেলে শান্তনু ঠাকুর৷

Advertisement

কিন্তু এই ফলাফল তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত বনগাঁয় উঠছে বহু প্রশ্ন৷ যে মতুয়াদের এত ঘনিষ্ঠ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে কেন  এই পরাজয়? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতামত, তৃণমূল এনআরসি নিয়ে যে প্রচার করেছিল, তাতে মানুষ তেমন ভরসা রাখতে পারেনি৷ বরং বিজেপি যা প্রচার করেছিল, তাতে সমস্ত হিন্দু ও মতুয়ারা এ দেশের নাগরিক। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কথা বলে মতুয়াদের সুরক্ষা দেওয়ার পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদি৷ সে কথা এখানকার উদ্বাস্তু জনগণের মন ছুঁয়েছে৷

Advertisement

এনআরসিকে ইস্যু করে তৃণমূলের পক্ষ থেকে উদ্বাস্তু ও মতুয়াদের মন পাওয়ার জন্য ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে প্রচার শুরু করেছিল তৃণমূল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরনগরের মাটিতে এসে সভা করে এনআরসি নিয়ে মানুষের কাছে বলেন৷ অসমে এনআরসি নিয়ে আন্দোলনে করার কথা উল্লেখ করে সমগ্র মতুয়া সমাজ ও উদ্বাস্তু মানুষের মন পাওয়ার চেষ্টা করে মুখ্যমন্ত্রী।তারপরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঠাকুর বাড়িতে এসে মতুয়া ধর্ম সম্মেলনে যোগ দেন। সভামঞ্চে এক মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরকে পাশে দাঁড় করিয়ে  এনআরসির বিষয় মানুষের কাছে তুলে ধরে হিন্দু উদ্বাস্তু ও মতুয়াদের আশ্বস্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ভোটের আগে বনগাঁ লোকসভার বিভিন্ন এলাকায়  এসে অনেকগুলি সভা করেছিলেন। তিনি এখানে  এনআরসি নিয়ে প্রচার করেছেন।

[আরও পড়ুন: নেত্রীর ভরসা রাখলেন মিমি-নুসরত, বিপুল ভোটে জয়ী তৃণমূলের নতুন তারকা প্রার্থীরা]

ভোটের ফলাফলের পর দেখা গেল, এলাকায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রচার  এবং কর্মিসভার তেমন প্রভাব পড়েনি৷ বরং লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদি এ রাজ্যে বেশ কয়েকটি সভা এনআরসি নিয়ে বিজেপির বক্তব্য তুলে ধরেন মতুয়া সমাজের সামনে। প্রধানমন্ত্রী কথা বিশ্বাস করে ভরসা রেখেছে বনগাঁ লোকসভার মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষেরা। সে কারণেই তৃণমূলের এই ভরাডুবি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

তবে হারের আরও এক কারণ হিসেবে উঠে আসছে বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন এলাকার তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব৷ সেই সমস্যা শীর্ষস্তরে জানানো সত্ত্বেও সমাধান হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই৷ ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়েছে৷তারউপর নির্বাচনের মাস কয়েক আগেই দেহত্যাগ করেন মতুয়া মহাসংঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবী। তার মৃত্যু ও মৃতদেহ সৎকার  শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করেও ঠাকুর বাড়ির দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। রাজনৈতিক কোন্দল চরমে পৌঁছায়। সেসময় শান্তনু ঠাকুর অভিযোগ করেছিল মতুয়াদের ভাবাবেগে আঘাত করে তাদের নিয়ে রাজনীতি করে ঘৃণ্য খেলায় নেমেছে তৃণমূল ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ সেসবের ফলই ভুগতে হল রাজ্য সরকারকে৷ ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকে অবশ্য মমতাবালা ঠাকুরকে আর কোথাও দেখা যায়নি৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ