Advertisement
Advertisement

Breaking News

দিদিকে বলো

কটূ কথা ও পরামর্শের মিশেল, ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে হরেক অভিজ্ঞতা বিধায়কদের

দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে বিরোধী শিবিরের বিশিষ্টদের কাছে যেতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের।

MLA's are having various experiences during 'Didik Bolo' campaign
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 19, 2019 9:29 am
  • Updated:August 19, 2019 9:29 am

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কর্মসূচিতে বেরিয়ে প্রশ্নপত্র যে কমন পড়বে না, তা একেবারেই ভাবেননি। হল কালেকশনও তাই কাজে এল না। দিনের শেষে মুখ ভার করেই ফিরতে হয়েছে বিধায়কদের। একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রেই এই ছবিটা দেখা গিয়েছে।

[আরও পড়ুন: পথ সুরক্ষার সচেতনতায় জোর, নবদম্পতিকে হেলমেট উপহার পুলিশের]

লোকসভা ভোটে আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে কাটাছেঁড়ার পর সম্প্রতি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসংযোগ কর্মসূচিকে ঢেলে সাজিয়েছেন। দলের বিধায়কদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন,  ১০০ দিনের মধ্যে যাঁর যাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে।তাঁদের সমস্ত কথা শুনতে হবে, সমাধান করে দিয়ে আসতে হবে। পৌঁছে যেতে হবে বিশিষ্ট মানুষজনের দুয়ারেও। তাঁদের সুচিন্তিত মতামত নিয়ে সব কাজ করতে হবে। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সেটাই মূল অঙ্গ। সেইমতোই কলকাতা থেকে জেলা – সর্বত্র বিধায়কদের ছুটোছুটি করতে হচ্ছে এপাড়া-ওপাড়া। রাতও কাটাতে হচ্ছে স্থানীয় মানুষজনের বাড়িতে।

Advertisement

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, হাওড়া,নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো কয়েকটি জেলায় বিশিষ্ট হিসেবে যাঁদের নাম দল চিহ্নিত করে দিয়েছে, তাঁরা অনেকেই বিরোধী শিবিরের সমর্থক। তা সত্ত্বেও দলনেত্রীর নির্দেশ, জনসংযোগ কর্মসূচিতে পৌঁছতে হবে তাঁদের কাছেও। জানতে হবে তাঁদের মতামত। আর তা করতে গিয়েই অদ্ভূত অভিজ্ঞতার মুখে পড়লেন বেশ কয়েকজন বিধায়ককে।

Advertisement

কোথাও সেই ‘বিশিষ্ট’ ব্যক্তির দেখা পেতে সময় পেরিয়ে গিয়েছে। অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। তো কেউ মুখের উপরই বলে দিয়েছেন, তৃণমূলের কর্মসূচি নিয়ে  কোনও আগ্রহ নেই। ব্যতিক্রমও হয়েছে অবশ্য। সিপিএম—বাড়ি, বিজেপি—বাড়ি বলে পরিচিত অনেকের বাড়ি গিয়ে মন দিয়ে পরামর্শও শুনে এসেছেন কেউ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন এই জনসংযোগের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সেদিন বিশিষ্টদের নামের একটি তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল বিধায়ক বা দলের জনপ্রতিনিধিদের হাতে। বলে দেওয়া হয়, যেতে হবে মোট চার জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি। তালিকা হাতে পাওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁরা জানতেও পারেননি কাদের বাড়ি যেতে হবে। ‘আনসিন কোশ্চেন’ হাতে পেয়েই কাজ শুরু হয়। হাওড়ার এক বিধায়ককে যেমন এক বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে পড়তে হয়েছে বেজায় সমস্যায়। সময় দিয়ে দেখা করবেন বলেও তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখেন কয়েক ঘণ্টা। জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি সিপিএম সমর্থক। তাই তিনি শেষপর্যন্ত দেখা করতে চাননি।

একই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল নদিয়ার দুই বিধায়ককে। নামের তালিকা খুলে দেখতেই চক্ষু চড়কগাছ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এমন এক ব্যক্তিকেই ‘বিশিষ্ট’  বলে চিহ্নিত করেছে দল। বিধায়ককে যেতে হবে তাঁর বাড়িতেই। যা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে হলেও শেষে তাঁকে যেতেও হয় সেই বাড়িতে। এক বিশিষ্ট সিপিএম ও বিজেপি সমর্থক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ নিতে হয়েছে আরেক বিধায়ককে।

তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে রাজ্যসভার এক সাংসদের বিধায়ক স্ত্রীর সঙ্গেও। তাঁর এলাকায় যে বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি যেতে তাঁকে বলা হয়, তিনি একজন শিক্ষক।  বিজেপি সমর্থক। তাঁর বাড়ি গিয়ে বিধায়ককে শুনতে হয়েছে কিছুটা রূঢ় কথাই। বিধায়কের দাবি, ওই শিক্ষক বলেছেন, ‘আপনি এসেছেন ভাল। বসুন, কথা বলুন। কিন্তু আমি বিজেপিকে ভোট দিয়েছি। ভবিষ্যতেও তাই করব।‘  এভাবে বিধায়ককে মুখের উপর এ পর্যন্ত কেউ কিছু বলেননি। তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান মন্ত্রীর কথায়, ‘এটাই দলনেত্রী চেয়েছিলেন। বারবার বলেছিলেন বিরোধীদের কাছে যেতে হবে। তিনি স্রেফ একজন সমর্থক হলেও পৌঁছতে হবে তাঁর কাছে। তাতে এলাকার স্পষ্ট একটা ছবি পাওয়া যাবে। তাছাড়া অনেক বিধায়কের নাক উঁচু ভাব ছিল। ইগো হয়ে গিয়েছিল। বাস্তবের মাটিতে সেসবও ভেঙে পড়ল।’

[আরও পড়ুন: নিজের কুকীর্তি ঢাকতে ‘মাওবাদী’ তত্ব! পুরুলিয়ার রেশন ডিলারকে জেরায় নয়া তথ্য]

উত্তর ২৪ পরগনার এক বিধায়কের অবস্থা আরও করুণ। তাঁর কাছে যে দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম পৌঁছেছিল,  তাঁরা কেউই তাঁর বিধানসভা এলাকার নন বলে পরে জানা গিয়েছে। ওই বিধায়ক দলের কাছে অনুরোধও জানিয়েছেন নাম বদলে নতুন তালিকা দেওয়ার জন্য। জেলার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘আমিও জনসংযোগের মধ্যে রয়েছি। তবে এখনও এতটা কড়া অভিজ্ঞতা না হলেও বিরোধীদের বাড়িতে যাচ্ছি। তাঁদের নানা পরামর্শ শুনে নিচ্ছি।’ দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী কেন্দ্রে মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা আবার দলের এক কাউন্সিলরকে নিয়ে। যা তাঁকে অপ্রস্তুতেই ফেলেছে। তাঁর এলাকার এক কাউন্সিলর সরকারি পরিষেবা দেওয়ার নাম করে উপভোক্তার কাছে ৫০ হাজার টাকা ‘তোলা’ চেয়েছিলেন। সেই অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে দলের তরফে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন মন্ত্রী।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ