সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: অঙ্গদানে নয়া নজির গড়তে চলেছে রাজ্য। এই প্রথম জেলা থেকে প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ আসছে কলকাতায়। দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল থেকে গ্রিন করিডর করে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আসছে অঙ্গ। গোটা প্রক্রিয়াটি যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় সেজন্য ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। কমিশনারেটের পদস্থ কর্তা থেকে শুরু করে পুলিশকর্মী মিলিয়ে মোট ১০০ জন এই গ্রিন করিডর নিয়্ন্ত্রণ করছেন। মিশন হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে পৌঁছানোর জন্য দুই নম্বর জাতীয় সড়ককেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
মিশন হাসপাতাল সূত্রের খবর, সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই মিশন হাসপাতাল থেকে মধুস্মিতার দুটি কিডনি, দুটি কর্নিয়া ও লিভার গ্রিন করিডরের মাধ্যমে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবে। তাই জোরকদমে চলছে অস্ত্রোপচারের কাজ। অন্যদিকে, মিশন হাসপাতাল থেকে এসএএসকেএম, এই ১৭০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট। অঙ্গ নিয়ে যাত্রা শুরুর আগে তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
[‘খোয়া’ গিয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসা, দিঘায় এসে শ্রীঘরে ঠাঁই চিনা যুবকের]
জানা গিয়েছে, গত ১৬ নভেম্বর দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে এক নাবালিকার ব্রেন ডেথ হয়। মৃতের নাম মধুস্মিতা বায়েন (১৩)। মধুস্মিতার বাবা দিলীপ বায়েন আদতে অসমের বাসিন্দা। কর্মসূত্রেই তিনি বাঁকুড়ার মেজিয়াতে থাকেন। মেজিয়া থার্মালপাওয়ারে সিআইএসএফ-র পদে কর্মরত তিনি। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মধুস্মিতা জন্ম থেকেই অসুস্থ। ভালভাবে হাঁটতে, চলতে, কথা বলতে পারত না। একমাত্র মেয়েক সুস্থ করতে সবরকম চেষ্টা করেছেন দিলীপ বায়েন। দক্ষিণ ভারতেও নিয়ে গিয়েছেন মেয়েকে। তবে সুফল মেলেনি। দিন যত গড়িয়েছে আরও অসুস্থতার দিকেই এগিয়েছে মধুস্মিতা। নিয়মিত ওষুধেই সে সুস্থ থাকত। এভাবেই চলছিল, গত ১২ তারিখ রাতে আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই নাবালিকা। তাকে বাঁকুড়ার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে নাবালিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত শনিবার বিকেলে সেখানেই মধুস্মিতার ব্রেন ডেথ হয়।
মধুস্মিতার মৃত্যু হলেও তাঁর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালই আছে। তাই দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে মৃত মেয়ের অঙ্গদানে রাজি করানোর পদক্ষেপ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর বায়েন দম্পতি সম্মতি দিলে মিশন হাসপাতালের তরফে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিশন হাসপাতাল থেকে মধুস্মিতার অঙ্গ নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবে অ্যাম্বুল্যান্স।
ছবি : উদয়ন গুহ রায়।