সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জন্মভূমিতে শেষবারের মতো রাধাপদ হাজরা। তবে এবার সশরীরে নয়, নিথর দেহ হয়ে। সাম্বা সেক্টরে শহিদ হওয়া জওয়ানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মুর্শিদাবাদের রেজিনগরে ভেঙে পড়েছিল গোটা এলাকা। চোখের জলে বিদায় জানানো হল বীর জওয়ানকে।
[রাম রহিমের শিষ্য পরিচয়ে মধুচক্র, বড়বাজারে পর্দাফাঁস]
রেজিনগর থেকে ২০ বছর আগে চলে গেলেও মুর্শিদাবাদের এই জনপদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি রাধাপদর। তাঁর পৈত্রিক ভিটে রেজিনগরের হাটপাড়া এলাকায়। বৃহস্পতিবার জন্মভিটেতে যখন কফিনবন্দি হয়ে দেহ যায় তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। শুক্রবার দুপুরে বাড়ি লাগোয়া শক্তিপুর ঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দিয়ে শহিদকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শক্তিপুর ঘাটে তখন কয়েকশো মানুষ। প্রত্যেকের মুখে উঠে আসে রাধাপদর ছেলেবেলার কথা, বীরত্বের কাহিনি। হাটপাড়াতেই তাঁর পড়াশোনা। ১৯৯১ সালে ২৪ বছরে পান বিএসএফের চাকরি। সেনাবাহিনীর কাজের জন্য দীর্ঘদিন তাঁকে বাইরে থাকতে হত। এতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সমস্যা হবে বলে ২০০৮ সালে গ্রামের বাড়ি ছেড়েছিলেন রাধাপদ। চলে যান নদিয়ার করিমপুরে। সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন নাজিরপুরে। বুধবার আসে মৃত্যুর খবর।
[মাত্র ১৮০ টাকা উদ্ধারে পুলিশের দ্বারস্থ, হইচই জলপাইগুড়িতে]
এর আগে দু’বার জম্মু ও কাশ্মীরে পোস্টিং হয়েছিল রাধাপদর। এক বার পায়ে গুলিও লেগেছিল তাঁর। কিছু দিন অন্যত্র পোস্টিংয়ের পর ফের তাঁকে পাঠানো হয়েছিল উপত্যকায়। রাধাপদর সেনার চাকরি তাঁর বাড়ির লোক কোনওদিনই ঠিকমতো মেনে নেয়নি। রাধাপদর মা অম্বিকা হাজরা তবু ছেলের অকুতোভয় মনোভাব মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে জীবনের কাছে সাহস ছেড়ে যাওয়ার তিনি শোকস্তব্ধ। আর কোনও মায়ের কোল যাতে এভাবে ফাঁকা না হয়, এখন এটাই প্রার্থনা এই প্রৌঢ়ার। রাধাপদকে অবসর নেওয়ার জন্য বাড়ির লোকজন পীড়াপীড়ি করলেও তিনি রাজি হননি। ছেলেমেয়েরা একটু দাঁড়ালে চাকরি ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন। ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল তারাপদর। সেই সুযোগ তিনি পেলেন না। সাম্বা সেক্টরে পাক স্নাইপারের গুলিতে নিহত হন বিএসএফের ১৭৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল রাধাপদ হাজরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.