সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: আত্মীয়স্বজন বলতে কেউই নেই। পিতৃমাতৃহীন মৃত হিন্দু প্রতিবেশীকে শ্মশানে নিয়ে যান মুসলমান যুবক। হিন্দু শাস্ত্রীয় রীতিরীতি মেনেই তাঁর সৎকার করেছিলেন রেজাউল করিম মল্লিক। ১৩ দিন পর ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার ধারে প্রতিবেশীর পারলৌকিক ক্রিয়াও সারলেন তিনি। ধর্মীয় সংস্কারের ঊর্ধ্বে মানবতা তা প্রমাণ করলেন রেজাউল। তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা ডায়মন্ড হারবার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিলক রায়ের পরিবারে কেউ নেই। তাঁর বাবা-মা দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। বিচ্ছেদ হয়ে যায় স্ত্রীর সঙ্গেও। বাড়িতে একাই ছিলেন তিলক। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যু হয় তাঁর। কয়েকজন হিন্দু ও মুসলমান যুবককে সঙ্গে নিয়ে ডায়মন্ড হারবার কালীনগর শ্মশানে দেহ দাহ করেছিলেন রেজাউল। এমনকি নিয়ম মেনে কাছাও নিয়েছিলেন।
আর এবার ১৩ দিন পর হিন্দু রীতিনীতি মেনে ডায়মন্ড হারবারে হুগলি নদীর ধারে একটি ইটভাটায় তিলকের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করলেন ওই মুসলমান যুবক। ব্রাহ্মণের মন্ত্রোচ্চারণে সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হল আত্মীয় পরিজনহীন মৃত যুবকের পারলৌকিক ক্রিয়া। শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে ইটভাটা এলাকায় দুস্থ শ্রমিক পরিবারের ৩২৫ জন বালক ও কিশোরকে বসিয়ে পেটপুরে দুপুরের খাবারও খাওয়ালেন রেজাউল।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যের এক অনন্য নজির আরও একবার স্থাপন হল ডায়মন্ড হারবার শহরে। রেজাউলের এমন মানবিকতায় দারুণ খুশি এলাকার বাসিন্দারা। দুই ধর্মের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষই রেজাউলের জন্য গর্বিত। তাঁদের কথায়, “যে যার ধর্মীয় সংস্কার, রীতিনীতি আছে এবং থাকবে। তবু সেসবের উপরেও যে মানবধর্ম তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন রেজাউল। ডায়মন্ড হারবারবাসী হিসেবে আমরা গর্বিত।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.