Advertisement
Advertisement

Breaking News

শরীর অসাড়, মায়ের কোলে চেপে পরীক্ষা দিয়েই উচ্চ মাধ্যমিকে অসামান্য ফল রোহিতের

মায়ের এই অদম্য জেদকে সম্মান জানাবে রোহিতের স্কুলও।

Nadia: Physically handicapped student done excellent result in HS exam
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 10, 2018 9:39 am
  • Updated:August 21, 2018 8:32 pm

বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: অবশেষে এল সেই দিন। হাসি ফুটল প্রতিবন্ধী রোহিত রায়ের মুখে। প্রাণখোলা হাসি রোহিতের মা রেবা রায়ের মুখেও। যদিও চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোঁটা জলও। আসলে তা আনন্দ -যন্ত্রণা আর সেই সঙ্গে সফলতার অশ্রু। স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, “হ্যাঁ, ছেলেকে অবশ্যই পড়াব। ও যতদূর পড়তে চায়। সব জায়গাতেই আমার কোলে চাপিয়েই যতদূর পারব নিয়ে যাব। কোলে চাপিয়ে নিয়েই বাসে বা ট্রেনে চেপে ছেলেকে কলেজে নিয়ে যাব। পড়াতেও নিয়ে যাব। যত কষ্টই হোক।” সত্যিই এ এক অদম্য জেদের উদাহরণ। আর মায়ের সেই জেদের প্রকৃত মর্যাদাও দিল ছেলে।

মায়ের কোলে চেপে প্রতিবন্ধী ছেলে রোহিত রায়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ। ইচ্ছে থাকলে যে সত্যিই উপায় হয়, তার প্রমাণ দিল শুধু রোহিত একাই নয়, তার মা-ও। বাংলা, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও কম্পিউটার এই চারটি বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে রোহিতের প্রাপ্ত মোট নম্বর ৪১৫। আর তাতেই গর্বিত মা। দীর্ঘ পরিশ্রমের মূল্য পেয়েছেন তিনি।

Advertisement

[হেলমেট ছাড়াই বাইকে! সচেতনতা বাড়াতে আরোহীদের চড়ানো হল খচ্চরের পিঠে]

জন্মের পর থেকেই শরীরের নিম্নাংশ অসাড়। হাঁটাচলার ক্ষমতা তো দূরের কথা, ঠিকমত বসার ক্ষমতাও নেই রোহিতের। পাশের বাড়ির ছেলেকে পড়তে দেখে পড়তে যাওয়া, স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে তার। প্রতিবন্ধী ছেলের সেই সুপ্ত ইচ্ছে পূরণে এগিয়ে আসেন মা রেবা রায়। প্রথম শ্রেণি থেকে আজ অবধি রোহিত মায়ের কোলে চেপেই নবদ্বীপ বকুলতলা স্কুলে যাওয়া-আসা করে। প্রায় দু’কিলোমিটার পথ হেঁটে কোলে চাপিয়েই সব জায়গায় নিয়ে গিয়ে পড়াশুনা করিয়েছেন ছেলেকে। বাবা বানেশ্বর রায়ের সামান্য মুদি দোকানে ক’টাকাই বা আয় হয়? প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করানোর জন্য এক মায়ের অদম্য জেদ দেখে ছয়জন গৃহশিক্ষক বিনা পারিশ্রমিকে রোহিতকে পড়িয়েছেন। মাধ্যমিকে রোহিত দুটি বিষয়ে লেটার পেয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিকে তা বেড়ে দ্বিগুণ। পরীক্ষার ফলাফলে স্বভাবতই খুশির ঝিলিক রেবা রায়ের মুখে। মুদি দোকানি রোহিতের বাবা ছেলের এই রেজাল্টের অনেকটা কৃতিত্বই দিচ্ছেন স্ত্রীকে। বলেন, “ও পেরেছে বলেই এটা সম্ভব হল। নাহলে কীভাবে হত?”

Advertisement

নদিয়ার নবদ্বীপ পুরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের রাধাবাজারের তুরপাড়ার বাড়িতে শনিবার ছিল একটু অন্যরকম পরিবেশ। পড়শিরা অনেকেই এসেছিলেন রোহিত আর তার মাকে দেখতে। এবং অবশ্যই বাহবা দিতে। যদিও রেবা রায় জানিয়েই দিলেন, ছেলেকে ভাল কলেজে ভরতি করানোর ইচ্ছে রয়েছে। বলেন, “ওকে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়াতে চাই। এতটা যখন পেরেছি, বাকিটাও আবশ্যই পারব। ট্রেনে বা বাসে করে কলেজে যেতে হলে ছেলেকে কোলে করেই স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড নিয়ে যাব। সেখান থেকে কোলে চাপিয়েই যাব কলেজ। ফিরব একইভাবেই। আমার মা হিসাবে কষ্ট করতে অসুবিধা নেই।” সন্তানের কাছে মায়ের মূল্যটা হয়তো রোহিতই এদিন সবচেয়ে বেশি করে বুঝেছে।

[সাইকেল সারাইয়ের দোকানে বাড়ছে স্বপ্ন, উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম ধনেখালির রাজশেখর]

রোহিত বলে, “চেষ্টা করব মা-বাবার কষ্টের সম্মান যাতে রাখতে পারি। আরো ভাল করে না পড়লে একটা ভাল চাকরি পাব না।” কিন্তু পড়াশোনার খরচ? রেবাদেবীর বক্তব্য, প্রয়োজনে সবার কাছে সাহায্য চাইবেন। রোহিতের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর সাহা বলেন, “আমরা স্কুলের তরফ থেকে রোহিতকে তো বটেই, ওর মাকেও সংবর্ধনা দেব।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ