বিপ্লবচন্দ্র দত্ত ,কৃষ্ণনগর: কন্যা সন্তানকে কেউ যেন অবহেলা না করেন। পুত্রবধুরূপে অন্যের কন্যা সন্তানকে নিয়ে এসে কেউ যেন অত্যাচার না করেন। সমাজের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে নিজের কন্যাকে এবার লক্ষ্মীরূপে পুজো দিলেন নদিয়ার এক স্কুল শিক্ষক। পাঁচ বছরের শিশু কন্যাকে রীতিমত লক্ষ্মী রূপে সাজিয়ে ব্রাহ্মণ ডেকে সম্পূর্ণ শাস্ত্রমতে জীবন্ত লক্ষ্মী পুজো দিলেন স্কুল শিক্ষকের পরিবারের লোকজন। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের শিবনিবাস গ্রামে এমনই এক ব্যতিক্রমী লক্ষ্মীপুজো হল।
সম্পূর্ণ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে লক্ষ্মীরূপে নিজের কন্যাকে পুজো দিয়ে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ নিলেন তারা। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতন ও কন্যা সন্তানকে অবহেলা করার চরম প্রতিবাদ জানালেন ওই স্কুল শিক্ষকের পরিবারের লোকজন। রবিবার কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন, বেলা একটা নাগাদ ওই পুজো দিয়ে পুরোহিত তরুণ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন,’ মেয়েরা তো মায়েরই জাত। তাই এখানে কুমারী মায়ের লক্ষ্মীপুজো করা হল। সম্পূর্ণ শাস্ত্রমতে কুমারী কন্যাকে এখানে লক্ষ্মীরূপে পুজো করা হয়েছে।’
কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের চৌগাছা গ্রামে বাড়ি শিক্ষক রমেশচন্দ্র বিশ্বাসের। কৃষ্ণনগর শক্তিনগর হাই স্কুলে তিনি বাংলার শিক্ষকতা করেন। শিবনিবাস গ্রামে তার শ্বশুর বাড়ি। রবিবার সেখানেই করা হয়েছিল পুজোর আয়োজন। রমেশচন্দ্রবাবুর দুই মেয়ে। বড় মেয়ের নাম রূপকথা আর ছোটটির নাম সাজবাতি। রূপকথার বয়স পাঁচ আর সাজবাতি এখন এক বছর বয়সী । দুজনের মধ্যেই শিশুমনের বালখিল্য স্বভাব-আচরণ ভীষণরকমভাবে বিদ্যমান।
নিজের কন্যা সন্তানকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করার কারণ প্রসঙ্গে শিক্ষক রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন,’ কন্যাসন্তানকে অনেক মানুষই অবহেলা করে থাকেন। পুত্রবধূ হিসাবে অন্যের কন্যাসন্তানকে নিজের ঘরে আনার পর তাঁকে অত্যাচার করার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি ,পুত্র ও কন্যা সন্তান, দুজনেই সমান। দু’জনকেই সমান, ভালোবাসা-সম্মান দেওয়া উচিত। বর্তমানে তো কন্যা সন্তান কোনও অংশেই কম নেই পুরুষদের থেকে। প্রতিটি বাবা মায়ের কাছে তাদের সন্তানই মূল সম্পদ। তাই সম্পদের দেবীর পুজোতে আমরা নিজেদের কন্যাকেই লক্ষ্মী রূপে পুজো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছেই আমরা পৌঁছে দিতে চেয়েছি এই বার্তা, কেউ যেন কন্যা সন্তান ও পুত্রবধূকে অসম্মান বা তাদের প্রতি অত্যাচার না করেন।’
আড়িপেতে ঘটে লক্ষ্মী পূজো এদিন যেমন হয়েছে, একই সঙ্গে তার পাশে শিশুকন্যা রূপকথাকে লক্ষী রূপে সাজিয়ে করা হয়েছে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা। রূপকথার মা ঝুমা শ্রীদেবী জানিয়েছেন,’ আমাদের মেয়ে জন্ম নেবার পর থেকেই আয় ,উন্নতি, সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই , মেয়েকেই আমরা লক্ষীরূপে পুজো দিলাম। আমরা চাই, প্রতিটি মানুষই যেন নিজেদের কন্যাসন্তানকে মাতৃরূপে সম্মান করেন।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.