Advertisement
Advertisement
১০০ দিনের কাজ

একশো দিনের কাজ নেই পুরুলিয়ায়, বাস্তব দেখে ক্ষুব্ধ জেলাশাসক

দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য ১০০দিনের কাজ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি জেলা প্রশাসনের।

No 100days work in Purulia, DM got displeased over it

ফাইল ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 25, 2019 2:52 pm
  • Updated:August 25, 2019 3:19 pm

সুমিত বিশ্বাস,পুরুলিয়া: ‘কাজ নেই। কী খাব? তাই পরিবার–সংসার নিয়ে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, রাঁচি যেতে হয়।’ পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ‘গো টু ভিলেজ’ কর্মসূচিতে শনিবার আড়শা ব্লকের উপরগুগুই গ্রামে গিয়ে সেখান হতদরিদ্র মানুষজনের থেকে এমন কথাই শুনতে হল জেলাশাসক রাহুল মজুমদারকে।

[আরও পড়ুন: কফিনবন্দি হয়ে শেষবার বাড়ি ফিরল জওয়ান, গান স্যালুটে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন]

শনিবার ওই গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে জল সংরক্ষণে হাপা নির্মাণের কাজ দেখতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন জেলাশাসক। তিনি দেখেন, পিঠে দেড় বছরের শিশুকে বেঁধে নিয়ে ওই হাপা কাটার মাটি ঝুড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলছেন মহিলারা। সেই কাজের সময়েই জেলাশাসককে কাছে পেয়ে রহনী গড়াইৎ বললেন, ‘স্যার সেই পৌষ মাসে ষোলো দিন কাজ পেয়েছিলাম। আর এই কাজে দু’দিন হল। আমাদের তো জমিজায়গা নেই। তাই ১০০ দিনই ভরসা। কিন্তু কাজই নেই! কী খাব?  ছেলেমেয়েকে পালন করব কী করে? তাই বাধ্য হয়ে দিল্লি, রাঁচি যেতে হয়।’   শুধু রহনী গড়াইৎ নয়। এই হাপা তৈরির কাজ করা এই গ্রামের বাসিন্দা মহকুম গড়াইৎ, বৈশাখী গড়াইৎ, শুকুরমনি গড়াইৎ–এর এটাই জীবন কথা। তাই হাড়- জিরজিরে শরীর নিয়ে মহকুম গড়াইৎ বললেন, ‘এই বছরটার অর্ধেক দিন চলে গেল। এখনও  পর্যন্ত কাজ পেয়েছি আঠারো দিন। তাই আমাদের পুব খাটতে যেতে হয়। রাঁচির ইটভাটাতেও যাই।’  

Advertisement

prl-DMআসলে খিদের যন্ত্রণা সহ্য করা যে বড় কঠিন। তাই কাজ না পেয়ে বাস্তুভিটেতে তালা লাগিয়ে ভিন রাজ্যেই নতুন করে সংসার পাততে হয় তাঁদের। শনিবারই জেলায় সার্কিট হাউসে একশ দিনের কাজ নিয়ে জেলার সব বিডিওদের সঙ্গে বৈঠক করে দিন পিছু পঞ্চাশ হাজার শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। একশো দিনের কাজে গড়ে বিভিন্ন জেলা যতই এগিয়ে থাক, দরিদ্র পুরুলিয়ায় এখনও যে বহু মানুষ কাজ পান না, সেদিনের বৈঠকে তারই উল্লেখ করেছিলেন তিনি। গত দু’বছর সেভাবে কাজ না হওয়ায় জেলাশাসকের কাছে বিডিও-দের ধমক খেতে হয়েছিল।

Advertisement

আর এদিন জেলাশাসক সরেজমিনে একশো দিনের কাজ দেখতে গিয়ে তা প্রত্যক্ষ করলেন জেলাশাসক নিজেই। সঙ্গে–সঙ্গে তিনি বিডিও অমিত গায়েনকে বলেন, এই পরিবারগুলি যাতে বছরে একশো দিন কাজ পান, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। জেলাশাসক ওই হাপা কাটার কাজে যুক্ত গড়াইৎ পরিবারগুলির কাছে জানতে চান, এখানেই যদি তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, তাহলে আর বাইরে যাবেন না তো?  মহিলারা সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন, ‘বাবু, কাজ পেলে কি আর ছোট–ছোট বাচ্চা, সংসার নিয়ে কারও বাইরে যেতে মন করে? ’

[আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে নিম্নচাপ, দক্ষিণবঙ্গে দিনভর বৃষ্টির সম্ভাবনা]

শনিবার অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় আড়শার একদা মাও উপদ্রুত চাটুহাসা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধানচাটানি গ্রামে সকলের অভাব-অভিযোগ শুনতে ‘জনতার দরবার’  বসান জেলাশাসক। গ্রামের বাসিন্দা তিলক কর্মকার তাঁর কাছে স্পষ্ট অভিযোগ করেন, ‘এক যুগ হল এখানে একশ দিনের কোনও কাজ হয়নি।’ এমন কথা শুনে হতবাক তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক তপন নন্দীর কাছে জানতে চান, কেন কাজ হচ্ছে না?  নির্মাণ সহায়কের কথায়, ‘স্যার এখানে দুটো হাপার কাজ নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’ এই কথা শুনে জেলাশাসক কড়াভাবে বলেন, ‘আমি কিছু শুনতে চাই না। সোমবার থেকেই এখানে হাপা কাটার কাজ শুরু করে আমাকে ও বিডিওকে ছবি পাঠান।’

রুখাশুখা এই জেলায় এখনও ভারী শিল্প নেই। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। তাই মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা কর্মসূচি বা একশো দিন ছাড়া অভাব ঘুচবে না। ফলে জঙ্গলমহলের মানুষজনকে আয়ের পথ নিশ্চিত করতে জেলায় একশো দিনের কাজের উপরই এখন সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে প্রশাসন।

ছবি: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ