সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি উত্তর ২৪ পরগনায় দল ভাঙানোর খেলায় নেমে পড়ল বিজেপি। আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনে নোয়াপাড়া কেন্দ্রের দুবারের তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসুকে দলে টানল গেরুয়া শিবির। সেইসঙ্গে ওই কেন্দ্রে প্রার্থীর টিকিট দেওয়া হল বারাকপুরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী মঞ্জু বসুকে। রবিবারই দিল্লিতে বিজেপির হাই কমান্ড তাঁর নাম ঘোষণা করে। শাসকদল তৃণমূল ওই কেন্দ্রে গাড়ুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিংকে প্রার্থী করানোর পরই গুঞ্জন ছিল, অভিমানী মঞ্জু বিজেপিতে ভিড়তে চলেছেন। তবে জল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বিজেপির পথেই পা বাড়ালেন শহিদ বিকাশ বসুর স্ত্রী মঞ্জু। সেইসঙ্গে নোয়াপাড়ায় তৃণমূলে ভাঙন ধরাল বিজেপি। এই মাস্টারস্ট্রোকের পিছনে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়েরই মস্তিষ্ক বলে মত রাজনৈতিক মহলের। কারণ, মঞ্জু বসু মুকুল ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ২-এ ২-এ চার সমীকরণেই মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে গেলেন মঞ্জু।
নোয়াপাড়ায় দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ মঞ্জু বসু। ২০০০ সালে তৃণমূল নেতা স্বামী বিকাশ বসু প্রকাশ্যে খুন হওয়ার পর রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা। পেশায় শিক্ষিকা মঞ্জু ২০০১ সালে প্রথম বিধানসভা ভোটে দাঁড়ান। সেই কঠিন সময়েও এই কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন তিনি। তারপর ২০০৬ সালে সিপিএম প্রার্থী কুশধ্বজ ঘোষের কাছে হেরে যান। ফের ২০১১ সালে জয়ী হন। তৃণমূল নেত্রী মমতার সুনজরেও এসেছিলেন। তাল কাটে ২০১৬ সালে। অশীতিপর কংগ্রেস নেতা মধুসূদন ঘোষের কাছে হেরে যাওয়াই কাল হয়। তখনই মুখ্যমন্ত্রীর বিরাজভাজন হন বলে রটে যায় এলাকায়। ২০০৮ পরবর্তী সময়ে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বামেদের শক্তঘাঁটিতে ধস ধরানোর মুখ্য কারিগর ছিলেন একদা তৃণমূলের চাণক্য মুকুল রায়। তারপর রাজ্যে পরিবর্তন আসে। হুগলি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে যায়। মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকে। সেইসময় গুঞ্জন ওঠে, মুকুল ঘনিষ্ঠ শিল্পাঞ্চলের একাধিক নেতা তৃণমূল ছাড়তে চলেছেন। কিন্তু আশা-আশঙ্কার দোটানায় অনেকেই পিছিয়ে গিয়েছেন। তুলনায় কম শক্তিশালী বিজেপির সংগঠনকে চাগিয়ে তোলা মুখের কথা নয় ভেবেই আর ওইদিকে পা বাড়াননি বহু মুকুল ঘনিষ্ঠই। কিন্তু জেলায় ধীরে ধীরে জমি শক্ত করছেন তিনি। আর অর্জুন সিংয়ের নিকটাত্মীয় সুনীল সিংকে নোয়াপাড়ায় প্রার্থী করতেই রাজনৈতিক চাল চালেন মুকুল রায়, এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। অভিমানী মঞ্জুকে বিজেপিতে টেনে বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁকে তৃণমূলের চাণক্য বলা হত।
তবে মঞ্জু পদ্ম শিবিরে যাচ্ছেন গুঞ্জন উঠলেও কেন্দ্রে হাই কমান্ডের সবুজ সংকেত মিলছিল না। এদিকে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস প্রত্যেকেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়ে কাজ এগিয়ে রেখেছে। এক্ষেত্রেও শেষবেলায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে নিজেদের দেরির অভ্যাস বজায় রাখল বিজেপি। তবে দেরির সুফল কতটা মিলবে তা সময়ই বলবে। একইসঙ্গে নোয়াপাড়া উপনির্বাচনে মঞ্জু বসুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.