সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: ভোজনরসিক বাঙালির রসনাতৃপ্তির জন্য মাছ ধরার ট্রলার বা নৌকো নিয়ে ওঁরা কখনও পাড়ি দেন গভীর সমুদ্রে আবার কখনও এক নদী থেকে অন্য নদীতে। সমগ্র শ্যামপুর জুড়ে অসংখ্য মানুষ মৎস্যজীবী পেশার সঙ্গে যুক্ত। সমুদ্র বা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের পরিবার তাঁদের পথ চেয়ে থাকেন। কখন ঘরের মানুষটি ঘরে ফিরে আসবেন। কিন্তু অনেক সময়ই ঘরে ফেরা হয়ে ওঠে না। কখনও সামুদ্রিক ঝড় আবার কখনও জলপথে কোনও দুর্ঘটনা এক মুহূর্তে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে যায়। হালভাঙা নৌকোর মতো ভাসতে থাকে গোটা পরিবার।
[প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে তৃণমূলকর্মীকে মারধর, বাড়িতে বোমাবাজি]
ভোট আসে ভোট যায়। কিন্তু এইসব পরিবারগুলির হৃদয়ের ক্ষতে প্রলেপ পড়ে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন এলেই নেতাদের কাছ থেকে আসে প্রতিশ্রুতির বান। কিন্তু ভোট কাটলেই ওঁরা যে তিমিরে ছিলেন আবার সেই তিমিরেই নিমজ্জিত হন। “কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না।” একবুক আক্ষেপ আর চোখভরা জল নিয়ে বঞ্চনার কথা শুনিয়েছেন শ্যামপুরের মৎস্যজীবীদের পরিবারগুলি। হাওড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে রূপনারায়ণ নদের তীর ছুঁয়ে রয়েছে শ্যামপুর থানার ভূখণ্ড। রূপনারায়ণের অপর পারেই পূর্ব মেদিনীপুর। শ্যামপুরের নাকোল, গোপীনাথপুর, চাউলিয়া, কমলপুর, অনন্তপুর, বেলপুকুর, শ্যামপুর, শিবগঞ্জ, গাদিয়াড়া গ্রামগুলি একদম নদীর কোলে অবস্থিত। কয়েক হাজার মৎস্যজীবীর বাস এইসব গ্রামে। গোপীগঞ্জে মাছ ধরার ট্রলার তৈরি ও সারানো হয়। যখন তাঁরা দল বেঁধে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান তখন একটানা ১৫-২০ দিন, এমনকী একমাস পর্যন্ত ঘরের মুখ দেখতে পান না এই মৎস্যজীবীরা।
গত মার্চ মাসে নদীপথে হারিয়ে গিয়েছেন গোপীনাথপুরের বছর চব্বিশের যুবক বিষ্ণু মল্লিক। বিষ্ণুর বিধবা স্ত্রী রুম্পি মল্লিক শিশুকন্যাকে বুকে নিয়ে রূপনারায়ণের তীরে দাঁড়িয়ে ভেজা চোখে তাঁর অসহায়তার কথা শোনাচ্ছিলেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামী মাছ ধরতে গিয়ে নদীর জলে পড়ে মারা যান। কিন্তু তারপর থেকে কোনও দলের নেতৃত্ব তাঁদের সঙ্গে দেখা করে ন্যূনতম সহানুভূতিটুকুও দেখাতে আসেননি। এখন পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসতেই সব দলের নেতৃবৃন্দ ভিড় জমাতে শুরু করেছেন এই মৎস্যজীবী অধ্যুষিত গ্রামটিতে। একই অভিযোগ তুলেছেন কমলপুরের দীপেন কামেলার পরিবার-সহ অনন্তপুরের বেশ কয়েকটি পরিবার।
[পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয় পেতে ভাইরাল তৃণমূলের উন্নয়ন বার্তা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.